সুর-গীতে তিমির নন্দীর ৫০ বছর

তিমির নন্দী। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
তিমির নন্দী। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

মাত্র তিন বছর বয়সেই নিজে নিজে তবলা বাজাতে শেখেন শিল্পী তিমির নন্দী। ১৯৬৯ সাল থেকে বেতার ও টেলিভিশনে গান করছেন তিনি। তার কিছুদিন পরেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু। তিমির নন্দীও যুদ্ধে জড়িয়ে যান। অস্ত্র দিয়ে নয়, কণ্ঠ দিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গলা ছেড়ে গেয়েছেন। মুক্তিকামী যোদ্ধাদের দিয়েছেন অনুপ্রেরণা। সেই কণ্ঠসৈনিকের সংগীতজীবনের ৫০ বছর পূর্তি হলো এ বছর।

তিমির নন্দী ১৯৭৩ সালে সংগীত কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকারের বৃত্তি পেয়ে মিউজিকে উচ্চশিক্ষার্থে রাশিয়া চলে যান। সেখানে তিনি মিউজিকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম শিল্পী, যিনি ইউরোপ থেকে সংগীতে মাস্টার্স করেছেন। তাঁর বেশ কয়েকটি একক, দ্বৈত ও যৌথ গানের ক্যাসেট ও সিডি প্রকাশিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে দেশে ফিরে নিয়মিত সংগীতচর্চা করেন। তাঁর গাওয়া ‘ওগো চাঁদ কোথায় পেয়েছ এত আলো’, ‘বাঁধন খুলে দিলাম’, ‘চাঁদের পানে চেয়ে চেয়ে’, ‘মনোবীণাতে রয়ে রয়ে’, ‘ঝর ঝর বারিধারা সন্ধ্যায়’, ‘এ আমার জীবন ধোয়া শ্রেষ্ঠ পরিচয়’ ও ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো’ শিরোনামের গানগুলো এখনো শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরে। গানে গানেই কাটে তাঁর জীবন। তিনি সংগীতজীবনের এই দীর্ঘ যাত্রা সম্পর্কে বলেন, ‘নিজেও ভাবতে পারছি না এত দিন ধরে গাইছি। আমার থেকেও বয়োজ্যেষ্ঠ আরও অনেকেই গাইছেন, কিন্তু নিজের ব্যাপারটা একটু মিরাকলই মনে হয়।’

১৯৬৯ সাল থেকে বেতার ও টেলিভিশনে গান করছেন শিল্পী তিমির নন্দী। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
১৯৬৯ সাল থেকে বেতার ও টেলিভিশনে গান করছেন শিল্পী তিমির নন্দী। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

বর্ণাঢ্য এই সংগীতজীবনের সুবর্ণজয়ন্তীতে নতুন একটি অ্যালবাম নিয়ে আসছেন তিমির নন্দী। ১১ অক্টোবর ‘মেঘলা দু’চোখ’ শিরোনামের অ্যালবামটি প্রকাশ পাবে অডিও-ভিডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জি সিরিজের ব্যানারে। এটি দীর্ঘ ১০ বছর পর তাঁর নতুন অ্যালবাম। এর আগে ২০০৯ সালে সংগীতজীবনের ৪০ বছর পূর্তিতে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন।

তিমির নন্দী জানান, এবারের অ্যালবামে মোট ১৪টি গান থাকছে। সব গানই মৌলিক আধুনিক গান। ‘মেঘলা দু’চোখ’ অ্যালবামে থাকা গানগুলোর শিরোনাম: ‘দুটি পাখি মিলে বাঁধে’, ‘ভালোবেসে সবাই যদি’, ‘আমার মেঘলা দুচোখ’, ‘সিঁদুরে মানায় ভালো’, ‘যখন ডেকেছি কাছে’, ‘জীবনের বাঁকে যদি’, ‘ওই দুটি চোখ’, ‘শুধু মন ছুঁয়ে যায়’, ‘ও নদী তোরই বুকে চলেছি’, ‘কতবার মনকে বলেছি’, ‘তুমি ছিলে এই জীবনে’, ‘কেঁদো না সেদিন তুমি’, ‘এই হৃদয় ছুঁয়ে’ ও ‘তুমি চলে গেছ’। গানগুলো লিখেছেন আয়েত হোসেন, খোকন সিরাজুল ইসলাম, মো. রফিকুল হাসান, জাহিদ খান, হারুন মো. আফজাল, সৈকত বিশ্বাস, এস এম আবদুর রহিম, ইমতিয়াজ ইকরাম, হামিদুল্লাহ দুলাল ও আলী আসকার। ১টি ছাড়া বাকি ১৩টি গানের সুর করেছেন তিমির নন্দী নিজেই। সেই ১টি গানের রয়েছে আবার অন্য রকম অতীত।

১১ অক্টোবর ‘মেঘলা দু’চোখ’ শিরোনামের অ্যালবামটি প্রকাশ পাবে
১১ অক্টোবর ‘মেঘলা দু’চোখ’ শিরোনামের অ্যালবামটি প্রকাশ পাবে

প্রকাশিতব্য অ্যালবামের ‘কেঁদো না সেদিন তুমি’ গানটি ১৯৯০ সালের। এ প্রসঙ্গে তিমির নন্দী জানান, বদরুল আলম গানটির সুর করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘তখন নিয়ম ছিল, গান রেকর্ডের পর শুটিং হতো। তো রেকর্ডিংয়ের পর হঠাৎ করেই আমার মা মারা যান। তখন আমি চলে যাই কুষ্টিয়ায়। সেখান থেকে ফেরার পর তো আমার মাথা চুলছাড়া। প্রযোজক বললেন গানটি গাইতে। আমি বললাম, এ অবস্থায় কীভাবে গাইব? তখন বলা হয় একটি হ্যাট পরে গাইতে। যা হোক, হ্যাট পরেই গানটি গেয়েছিলাম। তো বদরুল আলম মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে আমরা গানটি নিয়ে আবার বসি এবং সিদ্ধান্ত নিই যে, গানটি নতুনভাবে করব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি মারা গেলেন। যেহেতু আমার মায়ের একটা স্মৃতি, আবার বদরুল আলম সঙ্গে কথা ছিল যে গানটি করব। তাই গানটি এই অ্যালবামে রেখেছি।’

শৈশবে বেতারের রেকর্ডিংয়ে তিমির নন্দী। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
শৈশবে বেতারের রেকর্ডিংয়ে তিমির নন্দী। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

এই অ্যালবামের সব গানের রেকর্ডিং হয়েছে কলকাতার ধ্বনি স্টুডিওতে। গানগুলোর সংগীতায়োজন করেছেন বুদ্ধদেব গাঙ্গুলি; যিনি সলিল চৌধুরীর সহকারী ছিলেন। তিমির নন্দী বলেন, ‘রেকর্ডিংয়ের সময় বুদ্ধদেব গাঙ্গুলিসহ আরও যাঁরা ছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই গানগুলোর প্রশংসা করেছেন। তাঁরা বলেছিলেন, “বহু বছর পর ভালো কিছু বাংলা গানের সঙ্গে বাজালাম।” আমি কেমন গেয়েছি, সেটা মুখ্য বিষয় নয়। গানগুলোর কথা এবং যে মেজাজ, সেটাতে তাঁরা মুগ্ধ হয়েছেন।’

‘মেঘলা দু’চোখ’ অ্যালবামের প্রকাশনা উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে শুক্রবার ১১ অক্টোবর সন্ধ্যা ছয়টায় অনুষ্ঠিত হবে প্রকাশনা।