ঈদুল ফিতরের পর থেকে গানের বাজার মন্দা!

ঈদুল ফিতরের আগে ইউটিউব চ্যানেলে প্রীতম ও ফেরদৌস ওয়াহিদের কণ্ঠে ‘খোকা’ গানের মিউজিক ভিডিওটি প্রকাশ করে গানচিল। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
ঈদুল ফিতরের আগে ইউটিউব চ্যানেলে প্রীতম ও ফেরদৌস ওয়াহিদের কণ্ঠে ‘খোকা’ গানের মিউজিক ভিডিওটি প্রকাশ করে গানচিল। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

গান তো হচ্ছে অনেক, কিন্তু তা মন ছুঁয়ে যাচ্ছে কি? ঈদুল ফিতরের পর থেকে এখন পর্যন্ত বাজারে বেরিয়েছে বহু গান ও মিউজিক ভিডিও। সেই তালিকায় আছে অনেক নতুন ও প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর গান। হাতে গোনা কয়েকটি বাদে কোনো গানই আলোচনায় নেই। গানের বাজারের এই স্থবিরতায় থমকে গেছেন অডিও–ভিডিও প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারসহ শিল্পীরাও।

ঈদুল ফিতরের আগে ইউটিউব চ্যানেলে প্রীতম ও ফেরদৌস ওয়াহিদের কণ্ঠে ‘খোকা’ গানের মিউজিক ভিডিওটি প্রকাশ করেছিল গানচিল। শ্রোতারা পছন্দ করেছেন। এরপর? এরপর গত চার-পাঁচ মাস নতুন কোনো গান ওঠেনি চ্যানেলটিতে। কর্ণধার আসিফ ইকবাল বলেন, ‘যাদের গান করছি, তাঁরা মেধাবী। কিন্তু জনপ্রিয় গান তৈরিতে তাঁদের সক্ষমতার অভাব আছে। ফলে গান নেওয়ার পরও এসব শিল্পীর গান ছাড়তে পারছি না। বুঝতে পারছি, গান মানসম্পন্ন না হলে তা টিকে থাকবে না, বাঁচবে না। এ রকম গান কেন ছাড়ব? তৈরি করার পরও এসব কারণে মিনার, ইমরানের গানও ছাড়তে পারছি না।’

কেন এমন হচ্ছে? আসিফ ইকবাল বলেন, হতে পারে এ সময় এসে এই সব জনপ্রিয় শিল্পী শো সংগ্রহের দিকে ব্যস্ত কিংবা বিজ্ঞাপনে জিঙ্গেল নিয়ে ব্যস্ত। মেধাটাকে গানে লাগাতে হবে। তাহলেই সংগীতাঙ্গন জ্বলে উঠবে।

গত চার-পাঁচ মাসে প্রায় ৪৪টি গান বাজারে ছেড়েছে ধ্রুব মিউজিক স্টেশন। এই সব গানের মধ্যে আসিফ, ইমরান, কাজী শুভ, আরমান আলিফের মতো শিল্পীদের গানও আছে। কিন্তু কোনো গানই জ্বলে ওঠেনি। কারণ কী? প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ও সংগীতশিল্পী ধ্রুব গুহ বলেন, গানগুলোর মধ্যে খালি আরমান আলিফ, কাজী শুভ ও ইমরানের গানগুলোতে ইউটিউবে কিছুটা ভিউ হয়েছে। কিন্তু এই গানগুলোও দর্শকের মুখে মুখে, এমনটা নয়। বছরখানেক ধরেই গানের বাজারের এই অবস্থা।

ধ্রুব গুহ বলেন, কারণ, হয়তো শ্রোতাদের মনের মতো গান হচ্ছে না। হতে পারে শ্রোতাদের স্বাদের পরির্বতন হয়েছে।

গত ঈদুল আজহা থেকে এ পর্যন্ত লিরিক ভিডিও, মূল ভিডিওসহ ৪০টির মতো গান উঠেছে সিএমভি ইউটিউব চ্যানেলে। তাহসান, মিনার, ইমরান, ঐশী, মিজান, পূজা, কর্নিয়া, শফিকুলের গানও আছে। কিন্তু কারও গানই মানুষের মুখে মুখে ঘোরেনি। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ও মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব সাহেদ আলী পাপ্পু বলেন, শফিকুলের ‘ভাবতে ঘিন্না লাগে’ ও ইমরানের ‘ভুলে যেতে শিখিনি’ গানগুলোয় একটু সাড়া আছে। বাকি গানগুলো সেভাবে আলোচনায় আসছে না। আগে শ্রোতাদের বিনোদনের মূল ক্ষেত্র ছিল গান। যতই দিন যাচ্ছে, গানের জায়গায় অন্য ধরনের বিনোদনও মানুষকে আকর্ষণ করছে।

গানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ঈগল মিউজিক গত চার মাসে ১৬টির মতো অডিও, ভিডিও গান বাজারে ছেড়েছে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে সুকুমার বাউলের ‘বলব না গো’ ও ‘বলব না গো ২’ এবং শামস ভাইয়ের ‘তোরে ভুলে যাওয়ার লাগে ভালো বাসিনি’ গানগুলো শুনছে মানুষ। গানের বাজারে মন্দা, এ রকম মানতে চাইলেন না প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কচি আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা নতুনদের নিয়ে কাজ করছি। গত চার মাসে ১৬টির মতো গান বের করেছি। সুকুমার বাউল ও শামস ভাইয়ের গানগুলোর বাজার ভালো।’

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জি-সিরিজ থেকে ঈদুল আজহার পর থেকে এ পর্যন্ত ১০২টি অডিও ও ভিডিও গান বের হয়েছে। আর্কের হাসান, ওয়ারফেজের মিজান ও আগুন, কিশোর, পলাশদের মতো শিল্পীদের গানও আছে। কিন্তু সেভাবে আলোচনায় নেই গানগুলো। জি-সিরিজের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জি-টেকনোলজিসের প্রধান গায়ক তপু বলেন, শ্রোতাদের সামনে এখন সারা পৃথিবীর কনটেন্ট মুক্ত। প্রচুর অপশন। মানুষ ইউটিউবে ঢুকে নানা ধরনের জিনিস দেখছেন। মন স্থির করে যে গান শুনবেন, সেই সময়ই যেন তাঁদের হাতে নেই।

এ ছাড়া অডিও ও ভিডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান লেজার ভিশনসহ কোনো কোনো শিল্পীর নিজ উদ্যোগেও নিজের ইউটিউব চ্যানেলে অনেক গান এসেছে গত চার–পাঁচ মাসে। কিন্তু সেসব গানও তেমন আলোচনায় নেই।