অমিতাভের জন্মদিন ও একটি চিঠি

‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র মঞ্চে কিংবদন্তি সরোদশিল্পী ওস্তাদ আমজাদ আলী খান ও অমিতাভ বচ্চন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র মঞ্চে কিংবদন্তি সরোদশিল্পী ওস্তাদ আমজাদ আলী খান ও অমিতাভ বচ্চন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র সর্বশেষ পর্বটা দেখেছেন? হ্যাঁ, গতকাল শুক্রবার রাতে সনি এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বলা হলো, এই মঞ্চ প্রতিবছর এই রাতের জন্য অপেক্ষা করে। কারণ, ৭৬ বছর আগে এই দিনেই জন্মেছিলেন বলিউডের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকাদের একজন, অমিতাভ বচ্চন।

গতকাল প্রতিযোগী ছিলেন তিনজন। প্রথমেই মঞ্চে আসেন সানি প্রজাপতি। আগের দিন ৪০ হাজার রুপি জিতেছিলেন। গতকাল শুরু করলেন তারপর থেকে। ভারতের কোন অঞ্চলে সারা ভারতের অর্ধেক কফি উৎপন্ন হয়? এর সঠিক উত্তর দিয়ে সানি জিতে নেন ৩ লাখ ২০ হাজার রুপি। খেলার মাঝেই সানি হঠাৎ এক কাণ্ড করে বসেন। বলা নেই কওয়া নেই, মঞ্চের সব দর্শককে নিয়ে গাইলেন, ‘বারবার দিন ইয়ে আয়ে, বারবার দিল ইয়ে গায়ে...হ্যাপি বার্থডে টু ইউ’।

পুরো মঞ্চ একই সুরে গানে গানে বিগ বিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়। মুহূর্তেই বদলে যায় মঞ্চের আবহ। শুভেচ্ছা জানানো শেষে অমিতাভ বচ্চন জানান, তিনি নাকি এসবে খুব বিব্রত বোধ করেন। কী করবেন, কী বলবেন, বুঝে উঠতে পারেন না। ভ্যাবাচেকা, বোকা বোকা ভাব নিয়ে বসে থাকেন। অবশ্য খুশি হয়েছেন, তা তাঁর চোখে-মুখের অভিব্যক্তিতেই ধরা যাচ্ছিল।

আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে অমিতাভ বচ্চন ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র মঞ্চে আমন্ত্রণ জানান দীপা মালিক ও মানসি যোশিকে। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে অমিতাভ বচ্চন ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র মঞ্চে আমন্ত্রণ জানান দীপা মালিক ও মানসি যোশিকে। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

গতকাল ছিল আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস। সে উপলক্ষে এরপর অমিতাভ বচ্চন ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র মঞ্চে আমন্ত্রণ জানান দুজন বিশেষ ব্যক্তিকে, দীপা মালিক এবং মানসি যোশিকে। দীপা মালিক প্যারা অলিম্পিক গেমসে পদক পাওয়া প্রথম ভারতীয় নারী। ২০১৪ সালে তিনি হুইলিং হ্যাপিনেস ফাউন্ডেশন স্থাপন করেন। আর ২০১৬ সালে তিনি প্যারা অলিম্পিকে শর্টপুলে রুপা পান। অন্যদিকে মানসি ২০১৯ সালে বিডব্লিউএফ প্যারা-ব্যাডমিন্টন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতেছেন। আর তাঁরা দুজনে মিলে গতকাল ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ থেকে জিতেছেন ১২ লাখ ৫০ হাজার রুপি। এই অর্থ ব্যয় হবে মানুষের কল্যাণে।

দুজনই জানান, জীবনের দুর্ঘটনা তাঁদের জীবনকে থামিয়ে দিতে পারেনি। পা নেই, তাই বলে খেলা থামাননি। সব প্রতিকূলতা মেনে নিয়ে তাঁরা স্বপ্নকে স্পর্শ করেছেন। দীপা ও মানসি সঙ্গে করে আনা একটা ছোট্ট অডিও-ভিডিও প্লে করেন মঞ্চে। সেখানে একের পর এক অমিতাভ বচ্চন, বাবা হরিবংশ রাই বচ্চন আর মা তেজি বচ্চনের ছবি স্পষ্ট হতে থাকে। কয়েক মুহূর্তের জন্য অমিতাভ বচ্চন ফিরে যান মধুর অতীতে। চোখ আর্দ্র হয় ৭৭-এ পা দেওয়া এই ‘তরুণের’।

এখানেই শেষ নয়। এরপর মঞ্চে আসেন কিংবদন্তি সরোদশিল্পী ওস্তাদ আমজাদ আলী খান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দুই ছেলে আমান ও আয়ান। তিনজনে মিলে আরও একবার সুরে সুরে উদ্‌যাপন করেন আইকনিক এই অভিনেতার জন্মদিন।

জন্মদিনে বাসার সামনে আসা ভক্তদের শুভেচ্ছার জবাব দেন অমিতাভ বচ্চন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
জন্মদিনে বাসার সামনে আসা ভক্তদের শুভেচ্ছার জবাব দেন অমিতাভ বচ্চন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

হিন্দুস্তান টাইমস অমিতাভ বচ্চনের জন্মদিনে তাঁর নিজ হাতে লেখা একটা চিঠি প্রকাশ করেছে। সেই চিঠি থেকে জানা যায়, উত্তর প্রদেশের বয়েজ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে লেখাপড়া করেছেন অমিতাভ বচ্চন। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৫ সাল—এই ৭ বছর, প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত।

২০১১ সালের ৩ নভেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রিন্সিপালকে তিনি চিঠিটি লিখেছেন। চিঠিতে অমিতাভ বচ্চন তাঁর সময়ের প্রিন্সিপালকে ‘মিস্টার দত্ত’ সম্বোধন করে জানান, তিনি নিল হাউসের সদস্য। আরও লেখেন, এই স্কুল থেকে তিনি খেলাধুলায় অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। বিশেষ করে বক্সিং রিংয়ে। সম্প্রতি দাদাসাহেব ফালকে পাওয়া এই গুণী অভিনেতা আরও জানান, ছোটবেলার সেই সব মধুর স্মৃতি তাঁর জীবনের বড় অনুপ্রেরণা। এই স্কুল তাঁকে শৃঙ্খলা শিখিয়েছে বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি।