সংস্কৃতিই পারে অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে

জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে গান ও কবিতা নিয়ে জমজমাট অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী তানজীনা তমা ও ভারতের আবৃত্তিশিল্পী শোভনসুন্দর বসু। ছবি: প্রথম আলো
জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে গান ও কবিতা নিয়ে জমজমাট অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী তানজীনা তমা ও ভারতের আবৃত্তিশিল্পী শোভনসুন্দর বসু। ছবি: প্রথম আলো

গান ও কবিতার একটা অবিচ্ছেদ্য ও মধুময় সম্পর্ক আছে। গতকাল শনিবার রাজধানীতে এ সম্পর্কের বন্ধন দেখা গেল। গান ও কবিতার এ সম্পর্কে একমঞ্চে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করলেন বাংলাদেশের রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী তানজীনা তমা ও ভারতের আবৃত্তিশিল্পী শোভনসুন্দর বসু। শিল্পী তানজীনা তমা শোনালেন কবিগুরুর নানা আঙ্গিকের ১০টি গান। ফাঁকে ফাঁকে ১০ জন কবির দশ কবিতা আবৃত্তি শোনালেন শিল্পী শোভনসুন্দর বসু।

একই মঞ্চে গতকাল সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা ও কলকাতার দুই শিল্পীর শৈল্পিক যুগলবন্দী। গান ও কবিতার এ অনুষ্ঠানের শিরোনাম ‘গান কবিতার ছায়াতলে’। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সুরে সুরে ও কবিতার শাণিত উচ্চারণে দুই দেশের শিল্পীদ্বয় শোনালেন প্রেম ও মানবতার কথা।

রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে গান ও কবিতা নিয়ে জমজমাট এ অনুষ্ঠানের আয়োজক আমরা সূর্যমুখী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতীয় দূতাবাসের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক নীপা চৌধুরী।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল আলোচনা। এ পর্বে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘দুই দেশের মৈত্রীর বন্ধনে গান ও কবিতা এ আসর আমাদের শেখাবে দানবের বিরুদ্ধে শৈল্পিক প্রতিবাদের ভাষা। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে গান ও কবিতার বাণী নিয়ে আমরা মানবপ্রেমের কথা বলব, মানবতার কথা বলব। সংস্কৃতিই পারে অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে।’
নীপা চৌধুরী বলেন, ‘সংস্কৃতিজগতে বাংলাদেশ ও ভারতের দারুণ মেলবন্ধন রয়েছে। কেননা আমরা একই সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী। দুই দেশের সংস্কৃতি গান ও কবিতা নিয়ে এ আয়োজন সত্যিই সম্প্রীতির বন্ধনে আমাদের জড়িয়ে রাখবে। অনুপ্রেরণা জোগাবে অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি।’

অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে দুই শিল্পী। ছবি: প্রথম আলো
অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে দুই শিল্পী। ছবি: প্রথম আলো

দুই গুণী শিল্পীর গান ও আবৃত্তি উপভোগ করেন মিলনায়তনপূর্ণ দর্শক-শ্রোতারা। জমজমাট যুগলবন্দীর শুরুতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান গেয়ে শোনান তানজীনা তমা। প্রথমে তিনি গেয়ে শোনান ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’। গান শেষ হতেই বাদ্যযন্ত্রের মিশেলে বাংলাদেশকে নিয়ে লেখা কবীর সুমনের কবিতা আবৃত্তি করেন শোভনসুন্দর বসু। কবিতার শিরোনাম ছিল ‘বাংলার ধনুকের ছিলায় ছিলাম’। গান ও কবিতার মেলবন্ধনে গোটা মিলনায়তনে বয়ে যায় সুর ও বাণীর অপূর্ব মূর্ছনা। তারপর একে একে তানজীনা তমা গেয়ে শোনান ‘কার মিলন চাও বিরহী’, ‘রাখ রাখরে জীবনে’, ‘ভালোবেসে সখি’, ‘যে কেবল পালিয়ে বেড়ায়’ ‘অধরা মাধুরী ধরেছি’, ‘দূরে কোথায় দূরে দূরে’, ‘সজনি সজনি রাধিকা’, ‘প্রাণ চায় চক্ষু না চায়’ ‘দুই হাতে কালের মন্দিরা’। অনন্য কণ্ঠের জাদুতে শ্রোতাদের মুগ্ধ রাখেন শিল্পী তানজীনা তমা।

তানজীনা তমা শোনান একটি রবীন্দ্রসংগীত। তার সঙ্গে আবৃত্তি করেন শোভনসুন্দর বসু। গান ও কবিতার মাঝে গোটা আয়োজন ছিল মনোজ্ঞ ও প্রাণবন্ত। শিল্পী শোভনসুন্দর বসু শোনান বাংলাদেশ ও ভারতের ১০ জন খ্যাতিমান কবির ১০টি কবিতার ভিন্নমাত্রিক আবৃত্তি। বাদ্যযন্ত্রের মিশেলে শাণিত উচ্চারণে তাঁর আবৃত্তি ছিল অন্য রকম। শোভনের ফিউশনমর্ধী আবৃত্তি ও তমার ক্লাসিকধারা গানের শিল্পিত আলোয় মুগ্ধ হন দর্শক-শ্রোতারা।

অনুষ্ঠানে শোভনসুন্দর আবৃত্তি করে শোনান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এক গাঁয়ে’ ও ‘হৃদয় আমার নাচেরে’, অচিন্ত কুমার সেনগুপ্তর ‘পুব-পশ্চিম’, রতনতনু ঘাঁটির ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ সত্যেন্দ্রনাথ দত্তর ‘দূরের পাল্লা’, নির্মলেন্দু গুণের ‘অলৌকিক’, কবীর সুমনের ‘জাতিস্মর’ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘একদিন ছুটি পেলে’।

ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে প্রায় এক যুগ শিক্ষকতা করেছেন শিল্পী তানজীনা তমা। তিনি বলেন, ‘ছায়ানটেই আমার গান শেখা, বড় হওয়া। ওয়াহিদুল হক, সন্‌জীদা খাতুন আমার অন্যতম দীক্ষাগুরু। এ ছাড়া শিখেছি অন্য বরেণ্য ওস্তাদদের কাছে। আমার সেই শিক্ষাটা, নিজের বোধ ও মনন এবং রবীন্দ্রদর্শনকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতেই শিক্ষকতা করি। আমার নিজের একটি সংস্কৃতিচর্চা ও সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের স্কুল রয়েছে। রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত সেই স্কুলের নাম ‘বিভাস’। সব বয়সী ছেলেমেয়ের জন্য এখানে আছে গান, নৃত্য, আবৃত্তি, উপস্থাপনা, তবলা, গিটার এবং চিত্রাঙ্কন শেখার সুযোগ-সুবিধা।’

অন্যদিকে শোভনসুন্দর বসু কলকাতার আবৃত্তি অঙ্গনের পরিচিত মুখ। ২০০৩ সালে কাব্যব্যান্ড ‘বৃষ্টি’ তৈরি করে সাড়া ফেলেছিলেন তিনি। যেখানে লাইভ যন্ত্রানুষঙ্গে কবিতা আবৃত্তি। দুটি অ্যালবামও বের হয়। দেশে-বিদেশে অংশ নেন।