জ্যাকসন মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন, দাবি এলটন জনের
অস্কারজয়ী গায়ক এলটন জনের আত্মজীবনী ‘মি’ বের হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। ইতিমধ্যে বর্ণিল, আলোচিত, বিতর্কিত, কিংবদন্তি এই শিল্পীর আত্মজীবনী ঝড় তুলেছে বিশ্বজুড়ে। কারণ, এই বইতে এলটন জন দাবি করেছেন, বিশ্বের সর্বকালের সেরা এন্টারটেইনার মাইকেল জ্যাকসন নাকি ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ ছিলেন।
সেদিন ছিল ২৫ জুন, সাল ২০০৯। অতিরিক্ত প্রপোফল সেবনে মৃত্যু হয় পপসম্রাটের। কিছুতেই ঘুমাতে পারছিলেন না বলে চিকিৎসককে একরকম জোর করেই ওষুধ দিতে বলেন। তারপর সেই যে ঘুমালেন আর জাগলেন না। সেই ঘুম তাঁর শেষ ঘুম হবে, তা দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি কেউ।
পিপল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এলটন জনের সঙ্গে মাইকেল জ্যাকসনের সম্পর্কটা ছিল বন্ধুত্বের। ‘মি’ বইতে এলটন জন লিখেছেন, ‘মাইকেলের বয়স যখন ১৩ কি ১৪, তখন থেকেই আমি ওকে চিনি। সে তখন একটা মেধাবী বাচ্চা, যাকে দেখলেই আপনার আদর করতে ইচ্ছা করবে। কিন্তু যতই ওর জনপ্রিয়তা বাড়তে লাগল, ততই সে নিঃসঙ্গ হতে থাকল। এরপর এলভিস প্রেসলির মতোই সমস্ত পৃথিবী থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিল।’
এলটন জন লিখেছেন, এরপরই মাইকেল জ্যাকসন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যান। নিজের কথার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি আরও লেখেন, ‘আমি ওকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে নিজের সংকীর্ণতার পরিচয় দিচ্ছি না। ও সত্যিকার অর্থেই অসুস্থ ছিল। ওর মতো মানুষ আশপাশে থাকা উপদ্রবের মতো।’ গ্রামি, ব্রিট ও গোল্ডেন গ্লোব জয়ী এই ব্রিটিশ শিল্পী মাইকেল জ্যাকসনের মানসিক অসুস্থতাকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলেও উল্লেখ করেন।
এলটন জন নাকি মাইকেল জ্যাকসনকে একটি নৈশভোজে দাওয়াত করেছিলেন। সেই রাতেও নাকি মাইকেল জ্যাকসন জনের সঙ্গে এক টেবিলে বেশিক্ষণ বসেননি। তারপর মাইকেল জ্যাকসনকে পাওয়া গেছে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক আর তাঁর ১১ বছর বয়সী বাচ্চার সঙ্গে। জন আরও লিখেছেন, ‘যে কারণেই হোক, মাইকেল জ্যাকসন প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গ পছন্দ করতেন না।’
বছরের শুরুতে আরও একবার আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন মাইকেল জ্যাকসন। তাঁর ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র ‘লিভিং নেভারল্যান্ড’–এর জের ধরে। বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ‘এন্টারটেইনার’দের একজন মাইকেল জ্যাকসন নাকি ৭ ও ১০ বছর বয়সী দুই বালককে যৌন নির্যাতন করেছিলেন। ওই বালকেরা এখন ত্রিশের কোঠা ছাড়িয়েছেন। এই তথ্যচিত্রে সেই সময়ের স্মৃতি নিয়ে কথা বলেছেন তাঁরা। আর এই ঘটনায় বিশ্বব্যাপী জ্যাকসনের ভক্তরা যারপরনাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জ্যাকসনের পরিবারের পক্ষ থেকে এই তথ্যচিত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘সারা জীবন এ রকম নোংরা আক্রমণ মোকাবিলা করতে হয়েছে মাইকেল জ্যাকসনকে। এমনকি মৃত্যুর এক দশক পরও এখনো করতে হচ্ছে।’
সেই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘তথ্যচিত্রে ওয়েড রবসন ও জিমি সেফচাককে (শিশুকালে যৌন নির্যাতনের দুই অভিযোগকারী) এত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে জ্যাকসনের ঘনিষ্ঠ অন্য সবাই সেখানে রীতিমতো উপেক্ষিত। জ্যাকসন কখনোই শিশুদের সঙ্গে বাজে আচরণ করতেন না। বরং সব সময় তিনি তাদের আদর করতেন।’
মাইকেল জ্যাকসনের কাছে যৌন নির্যাতনের শিকার এক কিশোরের অভিযোগের ভিত্তিতে ২০০৩ সালে পুলিশ তাঁর ক্যালিফোর্নিয়ার খামারবাড়ি ‘নেভারল্যান্ড’-এ তল্লাশি চালিয়েছিল। আর এলটন জনের বইতে আলোচিত, সমালোচিত ও বিতর্কিত সেই তথ্যচিত্রকে পরোক্ষভাবে সমর্থন দেওয়া হয়েছে।