এই অক্টোবরে সিনেমার খরা

>গত দু–তিন বছর সেপ্টেম্বর–অক্টোবর মাসে ভালো কিছু সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল ঢালিউডে। ফলে অনেকেই আশাবাদী হয়ে উঠছিলেন। বছরের এই সময়টাকে সিনেমার জন্য শুভ বলে ধরে নিয়েছিলেন দর্শক। কিন্তু এবার সে আশায় গুড়েবালি। এ বছর সেপ্টেম্বরে–অক্টোবরে ভালো কোনো সিনেমা তো নেই-ই, বরং সময়টা প্রায় সিনেমাশূন্য। পরিচালক, প্রযোজক ও শিল্পীদের অনেকেই বলছেন, দিন দিন মেধাশূন্য হয়ে পড়ছে ঢাকার চলচ্চিত্রশিল্প। পেশাদার প্রযোজকদের অনুপস্থিতিও একটা কারণ। আবার কেউ কেউ বলছেন, সিনেমা হলের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ভালো সিনেমার সংখ্যা কমছে। সার্বিক পরিস্থিতি জানাচ্ছেন শফিক আল মামুন
দেবী ছবিতে জয়া আহসান
দেবী ছবিতে জয়া আহসান

দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকার চলচ্চিত্রে মন্দা যাচ্ছে। বছর বছর কমে আসছে সিনেমা মুিক্তর সংখ্যা। এত কিছুর মধ্যেও দু–একটি ভালো মানের, দর্শক আলোচিত সিনেমা যে মুক্তি পায়নি, তা নয়। আঁধারে দীপশিখা জ্বালিয়েছে অমিতাভ রেজার আয়নাবাজি, দীপংকর দীপনের ঢাকা অ্যাটাক, অনম বিশ্বাসের দেবীর মতো সিনেমাগুলো।

আয়নাবাজি মুক্তি পায় ২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর, পরের বছরের ৬ অক্টোবর মুক্তি পায় ঢাকা অ্যাটাক আর দেবী বাজারে আসে ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর। পরপর তিন বছর অক্টোবর মাসে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাগুলো দেশের সিনেমা হলের চিত্র খানিকটা পাল্টে দিয়েছিল। হলমুখী হয়েছিলেন দর্শক। শুধু দেশেই নয়, এই সিনেমাগুলো প্রবাসী বাঙালিদেরও হলে টেনে এনেছিল। কিন্তু এ বছর পুরোনো শঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এই অক্টোবরে ভালো কোনো সিনেমা মুক্তির তালিকায় নেই। শুধু তা–ই নয়, ঈদুল ফিতরের পর থেকে অন্যান্য বছরের তুলনায় ছবি মুক্তির সংখ্যাও কমে গেছে। ঈদুল ফিতরে শাকিব খান অভিনীত একমাত্র পাসওয়ার্ড সিনেমাটি হলমালিকদের খানিকটা স্বস্তি দিয়েছে। তারপর বিছিন্নভাবে যে কয়টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, তার একটিও দর্শক আলোচিত হয়নি। সবশেষ ২৭ সেপ্টেম্বর আরিফিন শুভ ও বিদ্যা সিনহা মিম অভিনীত সাপলুডু সিনেমাটি আলোচিত না হলেও মন্দের ভালো ছিল। প্রযোজক–পরিবেশক সমিতির সম্ভাব্য সিনেমা মুক্তির তালিকা ঘেঁটে জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত গুণী নির্মাতা বা ভালো বাজেটের কোনো সিনেমা আসছে না।

ঢাকা অ্যাটাক ছবিতে আরিফিন শুভ ও মাহিয়া মাহি
ঢাকা অ্যাটাক ছবিতে আরিফিন শুভ ও মাহিয়া মাহি

চলতি অক্টোবরে ভালো সিনেমা না থাকা প্রসঙ্গে আয়নাবাজি সিনেমার পরিচালক অমিতাভ রেজা বলেন, অক্টোবরে ভালো সিনেমা না থাকা কাকতালীয় হতে পারে। তবে চলচ্চিত্রের এই সমস্যার প্রথম কারণ হলো মেধাশূন্যতা। সবার দোষ দিয়ে লাভ নেই। দ্বিতীয়ত, এখন নিয়মিত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান লাগবে। প্রযোজকের শক্তি দরকার এখানে। প্রযোজক যদি না দাঁড়ান, তাহলে ভালো সিনেমা হবে না। নিয়মিত সিনেমা নির্মাণে আসতে হবে। পকেট থেকে টাকা নিয়ে কয়েকটি সিনেমা হবে, কিন্তু এভাবে নিয়মিত কাজ করা সম্ভব নয়। শক্তিশালী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান লাগবেই।

ঢাকা অ্যাটাক সিনেমার পরিচালক দীপংকর দীপন বলেন, ‘বর্তমান চলচ্চিত্রের অবস্থা সবার জানা। তবে আমি ঢাকা অ্যাটাক সিনেমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই অক্টোবরে মুক্তির জন্য চিত্রনাট্য থেকে শুরু করে কাজের সব প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। দুঃখের বিষয়, কোনো নিয়মিত প্রযোজক পাইনি। ফলে অক্টোবরের জন্য আর কাজটি করা হয়নি।’

তবে দীপন বসে নেই। তিনি বলেন, ‘ওই গল্প নিয়েই অপেশাদার প্রযোজক দিয়ে কাজটি করছি। বছরের যেকোনো সময় সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা আছে।’

বিষয়টি নিয়ে প্রযোজক ও হলমালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘শুধু অক্টোবরই নয়, সেই ঈদুল ফিতরে পাসওয়ার্ড সিনেমার পর থেকে দর্শক টানার মতো কোনো সিনেমা পাচ্ছি না। সামনেও ভালো সিনেমার খবর নেই। এখন আসলে ভালো গল্প, ভালো নির্মাতা, ভালো শিল্পী লাগবে। গল্পটাকেই সিনেমার নায়ক হতে হবে। তা ছাড়া হলসংখ্যাও দেড় শর ঘরে নেমে এসেছে। বড় বাজেটে ভালো সিনেমা বানালে মুক্তির জায়গা কই? এক সিনেপ্লেক্স দিয়ে কি টাকা উঠে আসবে? আমার তা মনে হয় না। এ কারণে পেশাদার প্রযোজকেরাও আসতে ভয় পাচ্ছে।’

আয়নাবাজি ছবিতে চঞ্চল চৌধুরী ও নাবিলা
আয়নাবাজি ছবিতে চঞ্চল চৌধুরী ও নাবিলা

ঢাকা অ্যাটাক সিনেমার নায়ক আরিফিন শুভ ভালো ছবি না আসার ব্যাপারে সবার মতামতের একাংশ সমর্থন করে বললেন, ‘প্রযোজকের অভাবে ভালো সিনেমা হচ্ছে না। আমাদের এখন গল্প ভালো হচ্ছে, ভালো পরিচালকও আসছেন, কিন্তু হল নেই। হল না থাকার কারণে প্রযোজকেরা ঝুঁকি নিচ্ছেন না। কারণ, বড় বাজেটের ভালো সিনেমা বানিয়ে চালানোর জায়গা তো লাগবে।’

আরিফিন শুভর বক্তব্য, যত দিন হল না বাড়বে, তত দিন ভালো সিনেমা বাড়ার সম্ভাবনা খুবই কম—কথা সত্য। এর সমাধান একজন–দুজনের হাতে নেই। সবাই মিলে কি এর সমাধান করা সম্ভব? উত্তর অজানা।