পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলেন জোলি

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ছবি: রয়টার্স
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ছবি: রয়টার্স

তাঁকে সর্বশেষ দেখা গেছে চার বছর আগে, ২০১৫ সালে, ‘বাই দ্য সি’ ছবিতে। দীর্ঘ সময় পর আবার তিনি ফিরলেন ‘ম্যালেফিসেন্ট: মিসট্রেস অব এভিল’ নিয়ে। অস্কারজয়ী হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ২০১৪ সালে ছয় সন্তানের অনুরোধে ফ্রান্সে গিয়ে ব্র্যাড পিটের সঙ্গে কাগজে-কলমে বিয়েটা সেরে ফেলেন। বিয়ের পরে হানিমুনে যান মাল্টা। ‘বাই দ্য সি’ সেখানেই শুট করা। এই ছবির চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনয়শিল্পী—সবই তিনি। সঙ্গ দিয়েছেন তখনকার স্বামী ব্র্যাড পিট। এরপর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁরা আলাদা হয়ে যান। বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ, সন্তানদের অভিভাবকত্বের মামলা, সব মিলিয়ে নতুন ছবির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে সময় লেগেছে অ্যাঞ্জেলিনার।

২০১৪ সালে ‘ম্যালেফিসেন্ট’ মুক্তির পর এর পরবর্তী ছবি মুক্তি পেতে সময় লেগেছে পাঁচ বছর। এই পাঁচ বছরে শহর আর পৃথিবীর সঙ্গে কত বদলে গেছে জোলির জীবন! এখন তো অ্যাঞ্জেলিনা জোলি আর ব্র্যাড পিট দুজনেরই রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস ‘সিঙ্গেল’।

জোলি আর পিটের ‘ম্যারিড স্ট্যাটাস’ ছিল ২ বছরের মতো। কিন্তু সম্পর্ক, এক ছাদের নিচে থাকার বয়স তো এক যুগ। স্বাভাবিকভাবেই এই বিচ্ছেদ সহজ ছিল না জোলির জন্য। হৃদয়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সময় লেগেছে। ‘ম্যালেফিসেন্ট: মিসট্রেস অব এভিল’ ছবি মুক্তিকে সামনে রেখে ‘পিপল’ ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অকপটে বলেছেন, ‘আমি ভেঙে পড়েছিলেম, পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম।’ জোলি আরও জানান, নতুন ছবি করার শক্তি ছিল না তাঁর।

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ছবি: রয়টার্স
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ছবি: রয়টার্স


‘লারা ক্রাফট: টম্ব রাইডার’, ‘সল্ট’, ‘জিয়া’ ছবির এই তারকা ‘পিপল’ ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘খুবই কঠিন সময় পার করেছি। দিনগুলো খুবই কঠিন ছিল। আমার খুব দুর্বল লাগছিল। সত্যি বলতে কী, আমি ভেঙে পড়েছিলাম, পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম। নতুন ম্যালেফিসেন্টের জন্য শক্তি জড়ো করতে আমার সময় লেগেছে।’

‘ম্যালেফিসেন্ট: মিসট্রেস অব এভিল’ ছবিতে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ছবি: ইউটিউব
‘ম্যালেফিসেন্ট: মিসট্রেস অব এভিল’ ছবিতে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ছবি: ইউটিউব


‘ম্যালেফিসেন্ট: মিসট্রেস অব এভিল’ ছবিতে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি কোনো মারমার কাটকাট ধুন্ধুমার অ্যাকশন নায়িকা নন, কোনো প্রেমময়ী চরিত্র না। এখানে তিনি নায়িকা নন, খলনায়িকা। রাজকুমারীর ভূমিকা বাদ দিয়ে খলচরিত্রে কেন? জোলি মনে করেন, ম্যালেফিসেন্ট আর দশটা দুষ্টু চরিত্রের মতো নয়।

দুষ্টু চরিত্রের খোলসের আড়ালে আছে কুসুমের মতো কোমল একটা ব্যক্তিত্ব। আরও একটা কারণ অবশ্য আছে। ‘যখন খুব ছোট ছিলাম, রূপকথার রাজকন্যাদের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারতাম না কিছুতেই।’ বলেন তিনি।

ডিজনি রূপকথার ঘুমন্ত রাজকন্যার গল্পটি প্রথম মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৯ সালে৷ সেই ছবির খলনায়িকা ম্যালেফিসেন্ট৷ ডিজনির সবচেয়ে বিখ্যাত কিংবা কুখ্যাত খলনায়িকাদের একজন৷ সেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন জোলি।

‘ম্যালেফিসেন্ট: মিসট্রেস অব এভিল’ ছবির প্রিমিয়ারে সন্তানদের সঙ্গে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ছবি: রয়টার্স
‘ম্যালেফিসেন্ট: মিসট্রেস অব এভিল’ ছবির প্রিমিয়ারে সন্তানদের সঙ্গে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ছবি: রয়টার্স

তারপর কীভাবে সেই দুঃসময় থেকে উঠে দাঁড়ালেন? ৪৪ বছর বয়সী জোলি সেই পুরো কৃতিত্ব দিয়েছেন তাঁর ছয় সন্তানকে। তাঁরাই জোলির শক্তি। ম্যাডক্স (১৮), প্যাক্স (১৫), জাহারা (১৪), শিলোহ (১৩), ভিভিয়েন (১১) ও নক্স (১১)। এই ছয় সন্তানের ভেতর প্রথম তিনজনকে দত্তক নেওয়া আর পরের তিনজনের বায়োলজিক্যাল মা জোলি, বাবা ব্র্যাড পিট।

জোলির ছোট মেয়ে ভিভিয়েনকে দেখা গেছে ‘ম্যালেফিসেন্ট’ ছবিতে, ছোট্ট অরোরার চরিত্রে। তবে জোলি বলেছেন, তাঁর ছয় সন্তানের কেউই অভিনয়শিল্পী হতে চায় না। তারা ব্যবসায়ী, সমাজকর্মী হতে চায়।

আপনার ফোন নম্বরটি পেতে পারি? অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে এই প্রশ্ন করলে আপনি চমকে যেতে পারেন। জোলি বলবেন, ‘দুঃখিত, আমি কোনো ব্যক্তিগত ফোন ব্যবহার করি না।’ ভাবতে পারেন, আপনাকে এড়ানোর জন্যই এমন উত্তর দিচ্ছেন জোলি। খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন, কথাটার মধ্যে লুকোচুরি নেই। শুধু তা-ই নয়, জোলি খুব একটা ঘড়ি ব্যবহার করেন না। একজন ম্যানেজার আছেন, কিন্তু কোনো মুখপাত্র নেই।

‘ম্যালেফিসেন্ট: মিসট্রেস অব এভিল’ ছবিতে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ছবি: ইউটিউব
‘ম্যালেফিসেন্ট: মিসট্রেস অব এভিল’ ছবিতে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ছবি: ইউটিউব

হলিউডের কোনো তারকার মুখপাত্র নেই—এটা ঘড়ি না থাকার চেয়েও অবিশ্বাস্য। কিন্তু জোলি সব মিলিয়ে মানুষটাই এমন। কম্বোডিয়া, সুদান ও আফগানিস্তানে গিয়ে আধপেটা ন্যাংটো শিশুদের কোলে তুলে নেন অবলীলায়, এর মধ্যে দেখনদারি নেই।

শরীরে জার্মান, স্লোভাক, ফ্রেঞ্চ, কানাডিয়ান ও ডাচ রক্ত মিলেমিশে একাকার উত্তরাধিকার সূত্রে। খুব স্বাভাবিকভাবেই জোলির নিজের কোনো ‘দেশ’ নেই। তিনি বিশ্বনাগরিক। এই বিশ্বটা তাঁর একান্ত নিজের একটা গ্রাম। কম্বোডিয়ায় ‘লারা ক্রফট’ ছবির শুটিং করতে গিয়ে ৭ মাস বয়সী ম্যাডক্সকে দত্তক নেন। এর তিন মাস পরই বিচ্ছেদ হয় দ্বিতীয় স্বামী বিলি বব থ্রনটনের সঙ্গে। ম্যাডক্সকে তিনি বড় করেছেন একা হাতে।

তাই তো বলেন, দুই ছবি করতে গিয়ে তাঁর জীবন ওলট-পালট হয়ে গেছে। একটা ‘লারা ক্রফট’, অন্যটা ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ’। প্রথম ছবিতে পেয়েছেন প্রথম সন্তান, দ্বিতীয় ছবি করতে গিয়ে পেয়েছেন তৃতীয় জীবনসঙ্গীর খোঁজ।

আজ শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে ‘ম্যালেফিসেন্ট: মিসট্রেস অব এভিল’। বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্সে দেখা যাবে ছবিটি। এদিকে ভারতে আজ হিন্দি ভাষায় মুক্তি দেওয়া হচ্ছে ছবিটি। তাতে অ্যাঞ্জেলিনা জোলির কণ্ঠ দিয়েছেন জনপ্রিয় বলিউড তারকা ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন।