এবার হলমালিকদের সমিতিতে ঝামেলা

ইফতেখার উদ্দিন, কাজী শোয়েব রশীদ, আওলাদ হোসেন। ছবি: প্রথম আলো
ইফতেখার উদ্দিন, কাজী শোয়েব রশীদ, আওলাদ হোসেন। ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পর এবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতিতেও নতুন কমিটি নিয়ে সংকট শুরু হয়েছে। নির্বাচন ঘোষণা, অভিযোগ এবং স্থগিতের আদেশের পর গতকাল শনিবার রাতে গোপনে গঠিত হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নতুন কমিটি। সেদিন রাতে হঠাৎ করে এই নতুন কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়। কমিটির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্য নিজেরা যোগাযোগ করে নতুন কমিটির তথ্য দেন। সংগঠনের নির্ধারিত কাগজে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নির্বাচন ২০১৯-২১, চূড়ান্ত ফলাফল’ শীর্ষক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন তাঁরা। সর্বশেষ কমিটির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।

নির্বাচন বোর্ডের সভাপতি সুদীপ্ত কুমার দাস, সদস্য মোজাহারুল ইসলাম ওবায়েদ ও জাহিদ হোসেনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নির্বাচনের (২০১৯-২১) সংশোধিত তফসিল অনুয়ায়ী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নতুন সভাপতি হয়েছেন কাজী শোয়েব রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আওলাদ হোসেন। অন্য পদগুলো হলো সহসভাপতি মিঞা আলাউদ্দিন ও আমির হামজা, সহসাধারণ সম্পাদক শরফুদ্দিন এলাহী ও খোরশেদ আলম, কোষাধ্যক্ষ আজগর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হোসেন, সাংস্কৃতিক, সমাজকল্যাণ ও আইনবিষয়ক সম্পাদক আর এম ইউনুস। কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য উত্তম কুমার সিংহ রায়, রফিক উদ্দিন, রবিউল ইসলাম, ফারুক হোসেন, আশরাফুল ইসলাম ও সুমন কুমার সাহা।

এর আগে সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন ইফতেখার উদ্দিন ও কাজী শোয়েব রশিদ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৯-২১ মেয়াদের সংশোধিত তফসিল অনুযায়ী কর্মকর্তা পদে প্রাপ্ত মনোনয়নপত্রগুলো যাচাই–বাছাইয়ের পর সব মনোনয়নপত্র বৈধ বিবেচিত হওয়ায় এবং একটি পদের বিপরীতে একটি করে বৈধ মনোনয়নপত্র দাখিল হওয়ায় সবাইকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হলো।

এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ফিল্ম ক্লাবের সভাপতি ও আলিম সিনেমা হলের মালিক আতিকুর রহমান এবং লিপি টকিজের উদ্যোক্তা আবদুল আলিমসহ ১১০ জনের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সেখানে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে বেশ কিছু বিষয় তদন্ত করে পত্র প্রাপ্তির দশ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

নির্বাচন স্থগিতের অন্যতম আবেদনকারী আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির বেশির ভাগ সদস্যই অবৈধ এই নির্বাচনের বিপক্ষে। সাধারণ সম্পাদক কাজী শোয়েব রশিদ নিজের প্রভাব খাটিয়ে এই কার্যক্রম চালিয়েছেন। বর্তমান কমিটির সহসভাপতি মিঞা আলাউদ্দিন বলেন, ‘গত ১৭ অক্টোবর হাইকোর্টে এক স্টে অর্ডারের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হয়েছে। তাই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নির্বাচনের (২০১৯-২১) সংশোধিত তফসিল অনুয়ায়ী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করা হয়েছে বর্তমান কমিটি।’

সর্বশেষ কমিটির সভাপতি মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ছয় মাসে সমিতির কোনো কার্যক্রমে আমাকে ডাকা হয়নি, জানানো হয়নি। সমিতির কয়েকজন সদস্য নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য নিজেদের মতো কমিটি করেছেন। এর মধ্যে অনেকেরই এখন প্রেক্ষাগৃহ নেই।’ এ প্রসঙ্গে ঘোষিত কমিটির সভাপতি এবং সর্বশেষ কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী শোয়েব রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রভাব খাটানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। সমিতির সিনিয়রদের পরামর্শ মেনেই কাজ করি। ইফতেখার উদ্দিন কেন এমন কথা বলছেন, তা আমি জানি না।’

গত ২০ জুন ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নির্বাচন ২০১৯-২১’ তফসিল ঘোষণা করা হয়। পরে ২৫ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সৈয়দা নাহিদা হাবিবের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচন কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দেওয়া হয়।