'একজন সুপারস্টারের পারিশ্রমিক ১০ লাখ হওয়া উচিত'

চলচ্চিত্র নির্মাণসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির নীতিমালা বাস্তবায়ন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম। ছবি: প্রথম আলো
চলচ্চিত্র নির্মাণসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির নীতিমালা বাস্তবায়ন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম। ছবি: প্রথম আলো

দীর্ঘ সময় ধরে ঢাকায় চলচ্চিত্র নির্মাণে যে অনিয়ম আর অপচয় হয়ে আসছে, দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। এর ফলে চলচ্চিত্রের এই মন্দা অবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। সেই অনিয়ম ও অপচয় রোধে এবার সোচ্চার চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। সম্প্রতি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নেতা কামাল মো. কিবরিয়াকে আহ্বায়ক করে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হয়। এই কমিটির নাম ‘চলচ্চিত্র নির্মাণ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি’।

এই কমিটি ৬ অক্টোবর চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সংগঠনের ২০ জন সদস্যের উপস্থিতিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ–সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর এফডিসির জহির রায়হান প্রজেকশন হলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এখানে জানানো হয়, আগামী ১ নভেম্বর থেকে নীতিমালাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। এখানে আরও জানানো হয়, শুটিংয়ের সময় অনিয়ম আর অপচয় রোধ করা সম্ভব হলে ছবির নির্মাণ ব্যয় অন্তত ৩০-৪০ লাখ টাকা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এরপরও ছবিতে যদি লাভ না হয়, অন্তত প্রযোজকের বড় লোকসান হবে না।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক কামাল মো. কিবরিয়া, কমিটির সদস্যসচিব ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র চিত্রগ্রাহক সমিতির সভাপতি আবদুল লতিফ প্রমুখ।

মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্রের এখন ক্রান্তিকাল। তা উত্তরণের জন্য এ ধরনের নীতিমালার কোনো বিকল্প নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘১ নভেম্বর থেকে সবাই দেখতে পাবেন এই নীতিমালা কার্যকর হচ্ছে কিনা। চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে হবে। এখানে কোনোভাবেই কিছু ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। কেউ যদি এই নীতিমালার বাইরে গিয়ে কাজ করেন, তাহলে সেই দায়ভার তাঁকেই নিতে হবে। তাঁরা চলচ্চিত্রে কাজ করতে পারবেন না।’

খোরশেদ আলম বলেন, ‘দীর্ঘদিন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি কার্যকর ছিল না। আমরা চলচ্চিত্রকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে চাই। তাহলে আমাদের শুটিং–সংক্রান্ত সমস্যা আর অপচয়গুলো কমে আসবে। ছবির শুটিংয়ে বড় অঙ্কের লোকসান থেকে প্রযোজকেরা রেহাই পাবেন।’

শামসুল আলম বলেন, ‘কোনো প্রযোজক যদি গোপনে কোনো অনিয়ম ছাড় দেন, কিংবা অন্য কোনো প্রযোজকের ক্ষতির চেষ্টা করেন, সে ক্ষেত্রে আমরা সবাই মিলে ওই প্রযোজকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

নীতিমালার মধ্যে প্রধান শিল্পীদের পারিশ্রমিকের বিষয়টি আনা হলো না কেন? এ ব্যাপারে মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘এখানে সেই সুযোগ কম। একজন শিল্পীর পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে দেওয়া যায় না। কারণ, একজন শিল্পী সম্পর্কের খাতিরে একজন প্রযোজকের কাছ থেকে তাঁর প্রাপ্যের চেয়ে কমও নিতে পারেন। তবে এখন আমাদের চলচ্চিত্রের যা অবস্থা, তাতে একজন সুপারস্টারের পারিশ্রমিক ১০ লাখ টাকা হওয়া উচিত।’

চলচ্চিত্র নির্মাণ–সংক্রান্ত নীতিমালায় যা যা আছে, সেগুলো হলো—
১. এক লাখ টাকার ওপরে যাঁদের পারিশ্রমিক, তাঁরা কোনো যাতায়াত ভাতা পাবেন না।
২. কলাকুশলীদের অবশ্যই প্রযোজকের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় প্রথম কিস্তিতে ২৫ ভাগ, পরে কাজের অগ্রগতির ভিত্তিতে বাকি ৭৫ ভাগ তিন কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে।
৩. সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শুটিংয়ের সময়। মাঝে এক ঘণ্টা বিরতি। কোনো শিল্পী বা কলাকুশলী যদি সময়মতো না আসেন, তাঁর জন্য সময়মতো শুটিং শুরু করা সম্ভব না হলে এই ক্ষতিপূরণ তাঁকেই বহন করতে হবে। কিন্তু শিল্পী আসার পরও যদি নির্দিষ্ট সময়ে ক্যামেরা চালু করা না হয়, তাহলে সেই ক্ষতিপূরণ দেবেন পরিচালক।
৪. পোশাকের জন্য কোনো শিল্পীকে টাকা দেওয়া হবে না। গল্পের প্রয়োজনে তা প্রোডাকশন থেকে তৈরি করে দেওয়া হবে। শুটিং শেষে প্রযোজকের কাছে পোশাক ফেরত দিতে হবে। কোনো পোশাক শিল্পীর পছন্দ হলে সেই পোশাক তৈরি খরচ দিয়ে শিল্পী নিতে পারবেন।
৫. নায়ক, নায়িকা, ভিলেন (প্রধান চরিত্রে) একজন করে সহযোগী নিতে পারবেন। এর ব্যয়ভার প্রোডাকশন থেকে বহন করা হবে। অতিরিক্ত কাউকে প্রোডাকশন বহন করবে না।
৬. ছবির প্রচারণায় প্রধান শিল্পীকে ছবি মুক্তির আগে ৫ দিন সময় দিতে হবে।
৭. আউটডোরে অবস্থানের সময় সহকারী পরিচালক ও সহকারী চিত্রগ্রাহক যাতায়াতের অর্ধেক হাতখরচ বাবদ পাবেন।