উৎসব শেষে উৎসব শুরু

জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনের মঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে ১০ দিনের উৎসবের উদ্বোধন করেন অতিথিরা। ছবি: প্রথম আলো
জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনের মঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে ১০ দিনের উৎসবের উদ্বোধন করেন অতিথিরা। ছবি: প্রথম আলো

একটি উৎসব শেষ হয়েছিল গতকাল রোববার সন্ধ্যায়। ঢোলের বাদ্যিতে আজ সোমবার সন্ধ্যায় আরেকটি উৎসব শুরু হলো। বাংলা ঢোলের আওয়াজে আবারও জমে উঠল শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। থেকে গেল উৎসবের আমেজ।

এবারের আয়োজক মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়। তাদের প্রতিষ্ঠার তিন যুগ পূর্তি হয়েছে। এ জন্য বছরব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে নানান নাট্য কার্যক্রমের উদ্যোগ নিয়েছে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ আয়োজন হিসেবে সোমবার শুরু হয়েছে ‘বাংলা নাট্যোৎসব’।

জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনের মঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে ১০ দিনের উৎসবের উদ্বোধন করেন ভারতের ত্রিপুরা সরকারের চিফ হুইপ কল্যাণী রায়, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার এবং মঞ্চসারথি আতাউর রহমান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ এবং গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ। সভাপতিত্ব করেন মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের সাবেক সভাপতি আফজাল হোসেন।

উদ্বোধনী বক্তৃতা দেন প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। ছবি: প্রথম আলো
উদ্বোধনী বক্তৃতা দেন প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। ছবি: প্রথম আলো

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সারা দেশের সব সাংস্কৃতিক সংগঠনকে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। সারা দেশে সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে বেগবান করতে সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের উচিত এ ক্ষেত্রে আরও তৎপরতার সঙ্গে এগিয়ে আসা।’ তিনি বলেন, ভারতের ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি এক ও অভিন্ন—বাঙালি সংস্কৃতি; খাদ্যাভ্যাসও একই। দুই বাংলার এ বন্ধন আত্মার বন্ধন।’ প্রতিমন্ত্রী এ সময় দুই দেশের বন্ধুত্ব ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের মাত্রা অদূর ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন সংগঠনের ঊর্ধ্বতন সদস্য মীর নাহিদ আহসান। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি মীর জাহিদ হাসান, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উত্সব পরিষদের আহ্বায়ক কবির আহামেদ। দলের সভাপতি মীর জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমাদের দলের গর্ব তিন যুগ সাফল্যের অর্জন। আর এ জন্য তিন যুগে দাঁড়িয়ে আমরা উৎসব আয়োজন করছি বাংলা ভাষাভাষী ৩১টি নাটক নিয়ে বাংলা নাট্য উৎসব। একই উৎসবে ভারতের তিনটি রাজ্য এবং বাংলাদেশের নাটকগুলো উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে বাংলা নাটকের একটি যোগসূত্র রচনা করতে চাই। উৎসবের এ মিলনমেলায় সম্মানিত দর্শক ও নাট্যকর্মীরা একত্রে ভারত ও বাংলাদেশের নান্দনিক নাট্য প্রযোজনার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন।’

উদ্বোধনী দিনে সোমবার জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হয় আয়োজক সংগঠন মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের ‘শ্রাবণ ট্র্যাজেডি’। আনন জামানের লেখা নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন আশিক রহমান। পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে নাট্যচক্র মঞ্চস্থ করে ‘একা এক নারী’। দারিও ফো ও ফ্রাংকা রামের লেখা থেকে অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক আবদুস সেলিম এবং নির্দেশনা দিয়েছেন দেবপ্রসাদ দেবনাথ। বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে মঞ্চায়িত হয় নাটক ‘তক্ষক’। ব্যতিক্রম নাট্যগোষ্ঠীর ৪৬তম এ প্রযোজনা মনোজ মিত্রের লেখা। নির্দেশনা দিয়েছেন সাইফুল ইসলাম।

উদ্বোধনী দিনে জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হয় মহাকাল নাট্যসম্প্রদায়ের শ্রাবণ ট্র্যাজেডি নাটকটি। ছবি: প্রথম আলো
উদ্বোধনী দিনে জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হয় মহাকাল নাট্যসম্প্রদায়ের শ্রাবণ ট্র্যাজেডি নাটকটি। ছবি: প্রথম আলো

কাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটায় মূল মিলনায়তনে ত্রিপুরার শুভম নাট্যচক্র ‘অন্তর্গত আগুন’, পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে আসামের ভাবিকাল থিয়েটার ‘হনোয়া কা বেটা’ এবং মহিলা সমিতি মঞ্চে নাট্যতীর্থ মঞ্চস্থ করবে ‘দ্বীপ’।

বুধবার থেকে রাজধানীর উপকণ্ঠে দনিয়া স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনেও ছড়িয়ে পড়বে উৎসব। এবারের উৎসবে ভারতের আসাম রাজ্য থেকে ভাবিকাল থিয়েটার, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে এবং আমরা থিয়েটার ও রঘুনাথগঞ্জ থিয়েটার গ্রুপ এবং ত্রিপুরা রাজ্য থেকে শুভম নাট্যচক্র ও লারনার্স থিয়েটার অংশগ্রহণ করছে। আয়োজক ছাড়াও বাংলাদেশের অংশগ্রহণকারী দলগুলো হচ্ছে দেশনাটক, প্রাচ্যনাট, থিয়েটার আর্ট ইউনিট, নাট্যচক্র, বুনন থিয়েটার, শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র, আরণ্যক নাট্যদল, থিয়েটার সার্কেল, মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা থিয়েটার, ব্যতিক্রম নাট্যগোষ্ঠী, নাট্যতীর্থ, নাট্যম রেপার্টরি, লোক নাট্যদল (বনানী), সময়, নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল, বটতলা, অনুরাগ থিয়েটার, চন্দ্রকলা থিয়েটার, নবনাট, পদাতিক নাট্য সংসদ (টিএসসি), বাংলাদেশের পুতুলনাট্য গবেষণা কেন্দ্র, কথক, নাট্যযোদ্ধা, বাঙলা নাট্যদল, মেঠোপথ।

বাংলা ভাষার ৩১টি নাটক নিয়ে এই উৎসব চলবে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত। বাংলাদেশের ২৬টি নাটক ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের ৫টি নাটক মঞ্চস্থ হবে।

১৯৮৩ সালে যাত্রা শুরু করে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অবিরাম নাট্যচর্চায় মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় ৪০টি নাট্য প্রযোজনা মঞ্চে এনেছে। ইতিমধ্যে প্রযোজনাগুলোর ১ হাজার ১৯টি প্রদর্শনী সম্পন্ন করেছে।