বিষণ্নতায় খসে পড়া তারকা সুলি

এফ (এক্স) ব্যান্ডের সদস্যরা
এফ (এক্স) ব্যান্ডের সদস্যরা

কোরিয়ান পপ ইন্ডাস্ট্রিতে নাকি তারকারা যদি মঞ্চের বাইরে চুপ থাকেন তাহলে তাঁদের পুরস্কৃত করা হয়। যে শিল্পী যত নির্বিকার থাকবে, ইন্ডাস্ট্রিতে সে তত ভালো কাজ পাবে, হয়ে উঠবে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের প্রিয়। ভেতরের কোনো কথা ফাঁস করা যাবে না। কিন্তু কে–পপ তারকা সুলি ছিলেন ঠিক উল্টো। তাঁর অকালমৃত্যু নিয়ে জল্পনা–কল্পনার শেষ নেই। ১৪ অক্টোবর মাত্র ২৫ বছর বয়সে মারা যান তিনি। এখনো এ শিল্পীর মৃত্যু নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে আজ আমরা সেই মৃত্যুরহস্য নয়, জানব সুলিকে নিয়ে। 

অভিনেত্রী, গায়িকা সুলি ছিলেন গার্ল ব্যান্ড এফ (এক্স)–এর সদস্য। গান–অভিনয়ের বাইরেও এ শিল্পী পরিচিত ছিলেন সোচ্চার একজন তারকা হিসেবে। মানসিক সমস্যা, সাইবার বুলিং ও নারী অধিকার নিয়ে সুযোগ পেলেই কথা বলতেন তিনি। যদিও দক্ষিণ কোরিয়ায় এসব বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বললে তা ভালো চোখে দেখা হয় না। 

সুলির আসল নাম চোই জিন-রি, কোরীয় বিনোদনের দুনিয়ায় তিনি প্রবেশ করেন ২০০৫ সালে, মাত্র ১১ বছর বয়সে। কোরিয়ার অন্যতম বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসএম এন্টারটেইনমেন্টে প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে যোগ দেন তিনি। ২০০৯ সালে গার্ল গ্রুপ এফ (এক্স)–এর মাধ্যমে মঞ্চে তাঁর অভিষেক হয়। ৫ সদস্য নিয়ে গঠিত দলটির অভিষেক অ্যালবাম পিনোকিও কোরিয়ায় বেশ সাড়া ফেলে। আর রাতারাতি দলটি হয়ে ওঠে কোরিয়ার সবচেয়ে বড় কে–পপ গার্ল গ্রুপ। 

সুলি
সুলি

বলা হয়ে থাকে, কে–পপ ঘরানায় এফ (এক্স) এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় দল। এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত কে–পপ দল বিটিএসেরও আগে ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আন্তর্জাতিক উৎসবে এই দল পারফর্ম করেছিল। কিন্তু এক বছর পর সুলি গান ও নাচ থেকে বিরতি নেন। তিনি জানান, তাঁর সম্পর্কে ছড়িয়ে পড়া মিথ্যা ও বানোয়াট গুজবে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। 

২০১৫ সালে সুলি আনুষ্ঠানিকভাবে এফ (এক্স) থেকে সরে আসেন। নাম লেখান অভিনয়ে। সেখানেও পান খ্যাতি ও প্রশংসা। ২০১৮ সালে সুলি আবার গানে ফেরেন। টক শো উপস্থাপক হিসেবেও সুলির খ্যাতি ছিল। তাঁর সঞ্চালিত অনুষ্ঠান ‘দ্য নাইট অব হেট কমেন্টস’ কোরীয় টিভি শো ভক্তদের কাছে বেশ সমাদৃত হয়। এই অনুষ্ঠানে তারকারা নিজ নামে আসা বিভিন্ন ঘৃণাত্মক কমেন্ট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হেনস্তা হওয়ার অভিজ্ঞতা জানান। কে–পপ কলামিস্ট জেফ বেঞ্জামিন বলেন, কোরিয়ায় কে–পপশিল্পীদের ‘আদর্শের প্রতীক’ বলা হয়। এই শিল্পীদের হতে হয় নিখুঁত, মেধাবী, বিতর্কমুক্ত। সুলি ছিলেন এই স্রোতের বিপরীতের একজন। সুলি নিজের মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলতে দ্বিধাবোধ করতেন না। তাঁকে নিয়ে যে খারাপ কথা বলত, তাদের কঠিন জবাব দিতেন তিনি। 

ভক্ত–শ্রোতাদের ধারণা, বিষণ্নতার কারণেই সুলি আত্মহত্যা করেছেন। কারণ, বিভিন্ন মাধ্যমে সুলি সোচ্চার ছিলেন বলে অনেক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানই তাঁকে নিয়ে কাজ করতে চাইত না। পাছে সুলি যদি তাঁদের গুমর ফাঁস করে দেয়। তাই এই ব্যর্থতাই সুলির মানসিক সমস্যাকে নাকি বাড়িয়ে দিয়েছিল। আর তাই বিষণ্নতায় ভুগে তরুণ এই তারকা হার মানলেন মৃত্যুর কাছে। 

আনন্দ ডেস্ক, তথ্যসূত্র: বিবিসি