গানে-কথায় উদীচীর পথচলার ৫১ বছর উদ্যাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে উদীচীর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সমবেত পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে উদীচীর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সমবেত পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো

উদীচীর ৫১ বছর পথচলা পূর্ণ হলো। ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর শুরু। ৫১ বছর ধরে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী হেঁটেছে গ্রামেগঞ্জে, শহরে-বন্দরে, এমনকি দেশের বাইরে। সংকল্পে অবিচল থেকেছে। গেয়েছে গণমানুষের গান, অংশ নিয়েছে উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে। উদীচী এক সক্রিয় আন্দোলনের নাম।

৫১ বছরের পথচলাকে উদ্‌যাপন করতে মঙ্গলবার, সারা দেশে একযোগে উদীচী আয়োজন করেছে বর্ণাঢ্য কর্মসূচি। ঢাকার আয়োজনটি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে। বিকেলে জাতীয় ও সংগঠন সংগীত পরিবেশন এবং জাতীয় ও সংগঠন পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান শুরু হয়। উদীচীর নবীন–প্রবীণদের এক মহামিলনমেলায় পরিণত হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বর্তমান সভাপতি সফিউদ্দীন আহমেদ। উদীচীর সাবেক সভাপতি কামাল লোহানী বলেন, উদীচীকে দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক দেওয়া হয়েছে কিন্তু সাংস্কৃতিক খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে কম। নানা ধরনের টালবাহানা চলছে উদীচীর সাংস্কৃতিক কর্মীদের হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে। এখনো যশোর ও নেত্রকোনায় বোমা হামলার কোনো বিচার হয়নি। সাবেক সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ইদু মন্তব্য করেন, ‘যে আদর্শ নিয়ে উদীচী যাত্রা শুরু করেছিল, আমি আশা রাখি বর্তমান নেতৃত্ব সে ধারা অব্যাহত রাখবে।’ সভাপতির বক্তব্যে বর্তমান সভাপতি সফিউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘সমাজ বদলে উদীচীর ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই।’

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন উদীচীর সাবেক সভাপতি কামাল লোহানী। ছবি: প্রথম আলো
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন উদীচীর সাবেক সভাপতি কামাল লোহানী। ছবি: প্রথম আলো

সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার বলেন, ‘চলমান এই অস্থির সময়ে উদীচীই পারে মানুষের মাঝে সাংস্কৃতিক বোধের বিকাশ ঘটাতে। এই সাংস্কৃতিক বোধ দিয়েই সব অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে আমাদের।’ সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম সিদ্দিকী বলেন, ‘হৃদয় দিয়েই উদীচী করতে হয়। উদীচী হলো আমাদের আদর্শিক গন্তব্য, আমাদের স্বপ্নপথের আকাশ। যে যেখানেই থাকুক, সেখানে থেকেই উদীচীর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। নিজেকে ও দেশকে আলোকিত করতে উদীচীর সঙ্গে থাকতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, উদীচী সংগঠনের যে বীজটি রোপিত হয়েছিল ১৯৬৮ সালে তার শিকড় আজ অনেক গভীরে প্রোথিত ও বিস্তৃত। ঘাত-প্রতিঘাত উতরে আজ ৫২ বছরে উত্তরণ ঘটেছে। শাখা–প্রশাখার পল্লবে বিকশিত হয়ে উদীচী আজ আকাশছোঁয়ার অপেক্ষায়। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে সমাজসচেতনের কাজটি করে যাচ্ছে। দীর্ঘ পথচলায় সংগঠনটির বৈশিষ্ট্য ও কৌশলের হয়তো কিছু পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু সংগঠনটির মূল সুর নিপীড়িত মানুষের পক্ষে কাজ করা, মানবতার পক্ষে কাজ করা এটি অব্যাহত রয়েছে। উদীচী এ দেশের প্রগতিশীল সংস্কৃতির শক্তিশালী ধারা বহন করে চলেছে।’ সব রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।

আলোচনা অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গণসংগীত পরিবেশন করেন উদীচীর সহসভাপতি মাহমুদ সেলিম এবং আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী অলক বসু ও উদীচীর সহসভাপতি বেলায়েত হোসেন। পরবর্তী সময়ে সংগীত পরিবেশন করেন অংশুমান দত্ত। এরপর সংগীত পরিবেশন করেন তুহিন কান্তি দাস। সবশেষে পরিবেশিত হয় গীতিনৃত্যালেখ্য ‘ভালবাসা ও প্রশান্তির পৃথিবী’। উদীচীর সহসাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।

উদীচীর ইতিহাসের সূচনাপর্ব লেখা হয়েছিল ১৯৬৮ সালে পুরান ঢাকার নারিন্দায় সাইদুল ইসলামের বাসায়। আর তা লেখা হয়েছিল সত্যেন সেন, গোলাম মোহাম্মদ ইদুসহ কয়েকজন সমাজসচেতন দুরন্ত তরুণের কলমে। সেখানেই উদীচী গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর রাজধানীর শান্তিবাগে রহিমা চৌধুরানীর বাড়িতে আনুষ্ঠানিক যাত্রা করে উদীচী। প্রথম পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি ছিলেন সত্যেন সেন, সহসভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ইদু, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা ওয়াহিদ খান, সহসাধারণ সম্পাদক ইকরাম আহমেদ। ছিলেন রাজিয়া বেগম, ইকবাল আহমেদ, আখতার হুসেন, মাহফুজ আলী মল্লিক, তাজিম সুলতানা প্রমুখ।

শুধু গণসংগীতেই সীমিত ছিল না উদীচীর ভ্রমণ। পাশাপাশি নিয়মিত মঞ্চস্থ করেছে নাটক। কখনো কখনো শত্রুর চোখরাঙানি, বুলেট, বোমা থামিয়ে দিতে চেয়েছে উদীচীর কর্মকাণ্ড। কিন্তু সত্যেন সেনের সঞ্জীবনী সংগীত ‘মানুষের কাছে পেয়েছি যে বাণী তাই দিয়ে রচিত গান মানুষের লাগি ঢেলে দিয়ে যাব মানুষের দেওয়া প্রাণ’ উদীচীর কর্মীদের নিরন্তর অনুপ্রাণিত করেছে। কর্মীরা ছুটে গেছে মানুষের কাছে। মানুষের মন জাগাতে, নিপীড়িত মানুষের মুক্তির আদর্শে অনুপ্রাণিত করতে।

বর্তমানে সক্রিয় নাচের দলটিও। চারুকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ তৈরি করেছে উদীচীর যশোর হত্যাকাণ্ডের ওপর ‘ক্ষতচিহ্ন’, গোবিন্দগঞ্জের নারকীয় উচ্ছেদের ওপর ‘ভূমিহীন ভূমিপুত্র’, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ওপর তৈরি হয়েছে ‘ম্যাওকে: জহির