'শিল্পীদের ঐক্য খুব দরকার'

নিজে সভাপতির শপথ নিয়ে বাকি সদস্যদের শপথ পড়ান মিশা সওদাগর। ছবি: সংগৃহীত
নিজে সভাপতির শপথ নিয়ে বাকি সদস্যদের শপথ পড়ান মিশা সওদাগর। ছবি: সংগৃহীত

অপেক্ষা ছিল সহসভাপতি পদে জয়ী খল অভিনেতা ডিপজলের জন্য। শেষ পর্যন্ত তিনি এলেন বটে। ততক্ষণে অন্যদের শপথ নেওয়া হয়ে গেছে। তার আগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের জহির রায়হান কালার ল্যাব মিলনায়তন লোকারণ্য। রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশ সেখানে।

আড্ডা, সেলফি, আলোচনা, মধ্যাহ্নভোজ—এমন উৎসবমুখর পরিবেশেই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। আজ বুধবার বেলা একটার দিকে প্রথমে দ্বিতীয় মেয়াদে সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি মিশা সওদাগরকে শপথবাক্য পাঠ করান প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইলিয়াস কাঞ্চন। এরপর মিশা সওদাগর অন্য সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান। ১৮ জন নির্বাচিত প্রতিনিধির মধ্যে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না চিত্রনায়ক ইমন, ফরহাদ হোসেন, আলীরাজ ও আফজাল শরীফ। আজ যাঁরা আসনেনি তাঁরা পরবর্তী সময়ে শিল্পী সমিতির সভাপতির দেওয়া সময় অনুযায়ী অংশ নিতে পারবেন, এমনটাই বলা হয়েছে অনুষ্ঠানে।

ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে সভাপতির শপথ নিচ্ছেন মিশা সওদাগর। ছবি: সংগৃহীত
ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে সভাপতির শপথ নিচ্ছেন মিশা সওদাগর। ছবি: সংগৃহীত

শপথ অনুষ্ঠান হলেও সমিতির নির্বাচিত সদস্য এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি ছাড়াও নানান প্রজন্মের শিল্পীরা হাজির হয়েছিলেন অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে শুরুতে স্বাগত বক্তৃতায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইলিয়াস কাঞ্চন এবারের নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার পেছনে সভাপতি পদে নির্বাচন করা চিত্রনায়িকা মৌসুমীর ভূমিকা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘সভাপতি পদে মৌসুমী নির্বাচন করেছেন বলে নির্বাচন এতটা জাঁকজমকপূর্ণ হয়েছে। তিনি না থাকলে হয়তো এতটা আলোচিত হতো না এবারের নির্বাচন। এই প্রথম কোনো নারীশিল্পী শিল্পী সমিতির সভাপতি পদে নির্বাচন করেছেন। আমি আমাদের শিল্পীদের জন্য গর্ব করি।’ নির্বাচনের দিন এফডিসিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত উপস্থিতি এবং নানান কড়াকড়ি প্রসঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কাজ করতে পারা মর্যাদার বিষয়। আমি চেষ্টা করেছি, সুন্দরভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এমন কিছু কাজ করতে হয়, যা কেউ ভাবেননি। সাংবাদিক থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কড়া নিয়মের কারণে কষ্ট পেয়েছেন। আমি সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’

বক্তৃতা দিচ্ছেন সাংসদ ও অভিনেতা ফারুক। ছবি: সংগৃহীত
বক্তৃতা দিচ্ছেন সাংসদ ও অভিনেতা ফারুক। ছবি: সংগৃহীত

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ছিলেন বরেণ্য অভিনেতা ফারুক, সোহেল রানা, পরিচালক সোহানুর রহমান, শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আপিল বিভাগের দুই সদস্য খোরশেদ আলম ও শামসুল হক, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান, মহাসচিব বদিউল আলম, নৃত্যপরিচালক মাসুম বাবুল প্রমুখ। শপথ গ্রহণের পর নবনির্বাচিত প্রত্যেক সদস্যকে ফুল দিয়ে বরণ করেন মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান। এরপর তাঁরা নির্বাচন কমিশনার ইলিয়াস কাঞ্চন ও আপিল বিভাগের সদস্যদের ক্রেস্ট তুলে দেন ও উত্তরীয় পরিয়ে দেন। অতিথির বক্তব্যে সোহেল রানা শিল্পীদের এক থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘শিল্পীদের ঐক্য খুব দরকার। তাহলে আমাদের চলচ্চিত্র আবারও আশার আলো দেখবে। যদি শিল্পীদের মধ্যে একতা না থাকে, তাহলে সরকার আমাদের কথা শুনবে না, মানুষ আমাদের কথা শুনবে না। আমি বলব, শিল্পীদের মধ্যে যদি কোনো দাবি–দাওয়া থাকে, তাহলে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মিটমাট করা উচিত। জনসমক্ষে আনলে রেষারেষি বাড়বে।’

শপথ অনুষ্ঠানে এসে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যালয়ের সামনে অরুণা বিশ্বাসের সেলফিতে রুবেল, সুব্রত ও বাপ্পারাজ। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া।
শপথ অনুষ্ঠানে এসে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যালয়ের সামনে অরুণা বিশ্বাসের সেলফিতে রুবেল, সুব্রত ও বাপ্পারাজ। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া।

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৪ সালে। গত ২৪ মে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দুই বছরের মেয়াদ শেষ হয়। এবার ১৫তম নির্বাচন হয়েছে। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯-২১ সালের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়। চলচ্চিত্র তারকাদের মধ্যে এই নির্বাচন বেশ ভালো সাড়া ফেলে। ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০১৯-২১ মেয়াদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে জয় পায় মিশা-জায়েদ প্যানেল।

নির্বাচন কমিশনারের পক্ষে বক্তৃতা দেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচন কমিশনারের পক্ষে বক্তৃতা দেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। ছবি: সংগৃহীত

শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যরা হলেন মিশা সওদাগর (সভাপতি), জায়েদ খান (সাধারণ সম্পাদক), মনোয়ার হোসেন ডিপজল (সহসভাপতি), মাসুম পারভেজ রুবেল (সহসভাপতি), আরমান (সহসাধারণ সম্পাদক), সুব্রত (সাংগঠনিক সম্পাদক), মামনুন হাসান ইমন (আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক), জ্যাকি আলমগীর (দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক), জাকির হোসেন (সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক), ফরহাদ (কোষাধ্যক্ষ)। কার্যকরী পরিষদের সদস্যরা হলেন অঞ্জনা সুলতানা, রোজিনা, অরুণা বিশ্বাস, আলীরাজ, আফজাল শরীফ, বাপ্পারাজ, আসিফ ইকবাল, আলেকজান্ডার বো, জেসমিন, জয় চৌধুরী ও মারুফ।