শেষ হলো 'বাংলা নাট্য উৎসব'

অনুরাগের ‘গ্রাস’ দিয়ে শেষ হয়েছে ‘বাংলা নাট্য উৎসব’। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
অনুরাগের ‘গ্রাস’ দিয়ে শেষ হয়েছে ‘বাংলা নাট্য উৎসব’। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

‘রাজার হস্ত করে সব কাঙালের ধন চুরি’—এ প্রবাদবাক্যের বাস্তবচিত্র তুলে ধরা হয়েছে নাটকটিতে। সেখানে দেখানো হয়েছে, বর্তমান সমাজে এ প্রবাদবাক্য নতুন কিছু নয়। যুগে যুগে এমনই ঘটে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চেহারা বদলায়, বদলায় পোশাক। কিন্তু চরিত্র বদলায় না। আগে রাজা-জমিদারের প্রতাপ ছিল, সেই প্রতাপ এখন অনেকের। তাঁদের খামখেয়ালি শখে এখনো মানুষ সর্বস্বান্ত হয়। গরিবের ভিটেমাটি গ্রাস করে এখন গড়ে ওঠে আগামীর আধুনিক নগরসভ্যতা। সময়ের সঙ্গে চেহারা বদলায় কিন্তু চরিত্র বদলায় না। নাটকে তাই উপেনের ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পর সেই ভিটায় ফিরে এসেছিল কি না জানা যায় না, তবে আজকের উপেনরা ঘুরছে–ফিরছে দ্বারে দ্বারে। এমনই ঘটনাবৃত্তে এগিয়ে যায় নাটক ‘গ্রাস’।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতা অবলম্বনে ‘গ্রাস’ নাটকটি রচনা করেছেন শ্যামল দত্ত এবং নির্দেশনা দিয়েছেন শিশির রহমান। এ নাটকের মঞ্চায়ন দিয়ে শেষ হলো ‘বাংলা নাট্য উৎসব’। মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠার তিন যুগ পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। বছরব্যাপী আয়োজনের শেষ প্রয়াস এ উৎসব। ১০ দিনব্যাপী এই উৎসবের আজ ছিল সমাপনী দিন।

আজ সন্ধ্যায় বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মিলনায়তনে সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে অতিথি ছিলেন তথ্যসচিব আবদুল মালেক, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সভাপতি নাট্যকার মান্নান হীরা, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. জাকেরুল আবেদীন। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের সদস্যসচিব এম এ আজাদ। ধন্যবাদ জানান উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের আহ্বায়ক কবির আহামেদ। সভাপতিত্ব করেন মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের সভাপতি মীর জাহিদ হাসান। সমাপনী পর্বের পর শুরু হয় অনুরাগ থিয়েটার ‘গ্রাস’।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতা অবলম্বনে ‘গ্রাস’ নাটকটি রচনা করেছেন শ্যামল দত্ত। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতা অবলম্বনে ‘গ্রাস’ নাটকটি রচনা করেছেন শ্যামল দত্ত। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

২১ অক্টোবর সন্ধ্যা ছয়টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন ত্রিপুরা সরকারের চিফ হুইপ কল্যাণী রায়, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার এবং মঞ্চসারথি আতাউর রহমান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন গোলাম কুদ্দুছ, ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের পরিচালক নিপা চৌধুরী এবং নাট্যজন কামাল বায়েজীদ।

এই উৎসবে ভারতের আসাম রাজ্য থেকে ভাবিকাল থিয়েটার, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে এবং আমরা থিয়েটার ও রঘুনাথগঞ্জ থিয়েটার গ্রুপ এবং ত্রিপুরা রাজ্য থেকে শুভম নাট্যচক্র ও লারনার্স থিয়েটার অংশগ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়, দেশনাটক, প্রাচ্যনাট, থিয়েটার আর্ট ইউনিট, নাট্যচক্র, বুনন থিয়েটার, শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র, আরণ্যক নাট্যদল, থিয়েটার সার্কেল, মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা থিয়েটার, ব্যতিক্রম নাট্যগোষ্ঠী, নাট্যতীর্থ, নাট্যম রেপর্টরি, লোক নাট্যদল (বনানী), সময়, নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল, বটতলা, অনুরাগ থিয়েটার, চন্দ্রকলা থিয়েটার, নবনাট, পদাতিক নাট্য সংসদ (টিএসসি), বাংলাদেশের পুতুলনাট্য গবেষণা কেন্দ্র, কত্থক, নাট্যযোদ্ধা, বাঙলা নাট্যদল, মেঠোপথ।

১৯৮৩ সালে যাত্রা শুরু করে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অবিরাম নাট্যচর্চায় মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় ৪০টি নাট্য প্রযোজনা মঞ্চে এনেছে। ইতিমধ্যে প্রযোজনাগুলোর ১ হাজার ১৯টি প্রদর্শনী সম্পন্ন করেছে।