সেলিম আল দীন উৎসব শুক্রবার শুরু

সেলিম আল দীন। সংগৃহীত
সেলিম আল দীন। সংগৃহীত

বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের অষ্টম জাতীয় সম্মেলন ও সেলিম আল দীন উৎসব শুরু হচ্ছে শুক্রবার ১ নভেম্বর। রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় তিন দিনব্যাপী এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি উৎসবে সেলিম আল দীন, বজলুল করিম-মীর মকসুদুস সালেহীন ও ফওজিয়া ইয়াসমিন শিবলীর নামে তিনটি পদক দেওয়া হবে।

বুধবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি ও উৎসবের আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন ইউসুফ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উৎসবের সদস্যসচিব তৌফিক হাসান ময়না, ওয়াসিম আহমেদ প্রমুখ।

নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, বাংলাদেশে নাটকের ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদের স্মারক হয়ে উঠেছে যে সংগঠন, সেটি বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। শিল্পে উৎকেন্দ্রিকতাকে পরিহারপূর্বক জাতীয় নাট্য আঙ্গিক নির্মাণ, প্রচলিত ও অবলুপ্ত ঐতিহ্যবাহী নাট্যকাঠামো ও শিল্পরীতি উদ্ধার, সংরক্ষণ এবং এর চর্চা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে আধুনিক নাট্যকলার সঙ্গে সমন্বয় সাধন, বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষায় সৃষ্টিশীল বিকাশকে ত্বরান্বিত করা, ঐতিহ্যবাহী অভিনয়রীতির উৎকর্ষসাধন ও অভিনয়ের আধুনিকায়ন, বাংলাদেশের হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী খোলা মঞ্চের ব্যাপক প্রসার ঘটানো, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নাট্যমঞ্চে নির্মিতব্য জাতীয় নাট্য আঙ্গিকের পরিচিতি তুলে ধরা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশের লক্ষ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম গ্রহণ করে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের যাত্রা। ১৯৮২ সালে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার তালুকনগর গ্রামে প্রথম সংগঠনটি গড়ে তোলা হয়েছিল; যা বিকশিত হয়ে সারা দেশে তিন শতাধিক স্থানে কার্যক্রম পরিচালিত হতো। ৮৬ সালে প্রথম সম্মেলন থেকে আজ পর্যন্ত সংগঠনটির সাতটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি দুই বছর অন্তর সম্মেলনের সিদ্ধান্ত থাকলেও মূলত আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় তা হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তিন দিনের এ সম্মেলন ও উৎসবের উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। নাট্যোৎসবের প্রথম দিন সন্ধ্যায় পরিবেশিত হবে দুটি মঞ্চনাটক। রাজশাহীর চারঘাটের পালা মঞ্চায়ন করবে ‘বহুরূপে আসব ফিরে’ এবং ফরিদপুরের বাংলা থিয়েটার মঞ্চায়ন করবেন সেলিম আল দীনের নাটক ‘নিমজ্জন’।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা দেন সেলিম আল দীন উৎসবের আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন ইউসুফ। ছবি: প্রথম আলো
সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা দেন সেলিম আল দীন উৎসবের আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন ইউসুফ। ছবি: প্রথম আলো

শনিবার (২ নভেম্বর) উৎসবের দ্বিতীয় দিনেও মঞ্চায়ন হবে দুই নাটক। নাটোরের ইঙ্গিত থিয়েটার সেলিম আল দীনের ‘চাকা’ এবং জয়পুরহাটের শান্তিনগর থিয়েটার মঞ্চায়ন করবে ‘ইতি পত্রমিতা’। রোববার (৩ নভেম্বর) উৎসবের সমাপনী দিনে সাভারের দল বুনন থিয়েটারের নাটক ‘সিক্রেট অব হিস্ট্রি’ পরিবেশিত হবে। উৎসব উপলক্ষে শনিবার (২ নভেম্বর) সকালে ‘বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।

নাটক প্রদর্শনের পাশাপাশি সেলিম আল দীন, মীর মাকসুদ উস সালেহীন ও বজলুল করিম এবং ফওজিয়া ইয়াসমিন শিবলী—এই চার ব্যক্তির স্মরণে তিনটি পদক প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন উৎসবের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন ইউসুফ।

সেলিম আল দীন ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার সেনেরখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মফিজউদ্দিন আহমেদ ও মা ফিরোজা খাতুনের তৃতীয় সন্তান সেলিম আল দীন। তিনি ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়ার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেন। টাঙ্গাইলের সা’দত কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি নেন। এরপর ১৯৯৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কপিরাইটার হিসেবে চাকরিজীবন শুরু করলেও পরে বাকি জীবন শিক্ষকতাই করেছেন। ১৯৭৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং আমৃত্যু এই বিশ্ববিদ্যালয়েই ছিলেন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন।
২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় মারা যান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাঁকে সমাহিত করা হয়।