ভারতের নাগরিকের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ভুলটা প্রযোজকেরই

‘ঢাকা অ্যাটাক’ চলচ্চিত্রের সম্পাদনার জন্য মো. কালামকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করে জুরিবোর্ড। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
‘ঢাকা অ্যাটাক’ চলচ্চিত্রের সম্পাদনার জন্য মো. কালামকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করে জুরিবোর্ড। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

এক ভারতীয়র বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার যে ঘটনা ঘটেছে, সেই ভুল ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির প্রযোজকের। পুরস্কারের আবেদনে ‘ভুল করে’ বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে এক ভারতীয়র নাম পাঠানোর কথা স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে জুরিবোর্ডকে চিঠি দিয়েছে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমার প্রযোজক ও পরিবেশক। আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি সংশোধন করা হবে। বাতিল করা হবে ২০১৭ সালের সেরা সম্পাদক হিসেবে ঘোষিত পুরস্কার।

২০১৭ সাল ও ২০১৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্বাচিতদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে ‘শ্রেষ্ঠ সম্পাদক’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মো. কালাম। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার বিকেলেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট মহলে সমালোচনা শুরু হয়। কারণ মো. কালাম একজন ভারতীয়। সমালোচনার অন্যতম কারণ হলো, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য চলচ্চিত্র আহ্বান করে যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়, তাতে লেখা আছে, ‘কেবল বাংলাদেশি নাগরিকেরা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবেন।’

গত বৃহস্পতিবার রাতে ২০১৭ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য গঠিত জুরিবোর্ডের সদস্য ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি (কালাম) যে একজন বিদেশি, সেটা তাঁদের জানা ছিল না। সেখানে ফরমে উল্লেখ থাকে কে কোন দেশের। ওরা (প্রযোজক) তাহলে ভুল তথ্য দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে তথ্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এটা দেখার দায়িত্ব আমাদের না। আমাদের দায়িত্ব হলো ছবি দেখা। অফিশিয়ালি কাগজপত্র চেক করে মন্ত্রণালয়। প্রযোজনা সংস্থা যদি ভুল করে থাকে, তাহলে পুরস্কার কমিটির কিছু করার থাকে না। আর সচেতনভাবে আমরা কোনো বিদেশিকে পুরস্কার দিইনি।’

মোহাম্মদ কালাম। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
মোহাম্মদ কালাম। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আবেদনে ‘ভুল করে’ বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে ভারতের একজন নাগরিকের নাম পাঠানোর কথা স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে জুরিবোর্ডকে চিঠি দিয়েছেন ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমার প্রযোজক সানী সানোয়ার ও পরিবেশক জাহিদ হাসান। তথ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মীর আকরাম উদ্দীন আহম্মদ গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে দুটি চিঠির বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।

চিঠিতে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ চলচ্চিত্রের পরিবেশক জাহিদ হাসান লিখেছেন, ‘প্রযোজক স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নে ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “ঢাকা অ্যাটাক” চলচ্চিত্রে মো. কালাম সম্পাদনার কাজ করেন, যিনি বাংলাদেশি নন। কিন্তু ভুলবশত তাঁর নাম লিপিবদ্ধ হয় ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৭’-এর আবেদনে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।’ চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, ‘চলচ্চিত্রটিতে আরও যারা কলাকুশলী ছিলেন, তাদের সবার ক্ষেত্রে ভারতীয় উল্লেখ থাকলেও শুধু সম্পাদনার ক্ষেত্রে অসাবধানতাবশত ভুল হয়। বাংলাদেশের ঢাকার ঠিকানা তার নামের পাশে থাকার কারণে এই ভুল হয়েছে। আমরা আবারও আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং এ জন্য সার্বিক সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’

‘ঢাকা অ্যাটাক’ চলচ্চিত্রের প্রযোজক সানী সানোয়ার জুরিবোর্ডের সভাপতি বরাবর দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, একান্ত মুদ্রণজনিত ত্রুটি ছাড়া অন্য কিছু নয়। তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের মুদ্রণজনিত ত্রুটির জন্য হয়তো বিজ্ঞ জুরিবোর্ডের কাছে মো. কালামকে বাংলাদেশি শিল্পী হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। জুরি বোর্ড কর্তৃক পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির জন্য আমরা লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।’ প্রথম আলোকে এই প্রযোজক বলেছেন, ‘এই একটি ভুলের কারণে আমরা বাকি অন্য পুরস্কারগুলোও উদ্‌যাপন করতে পারছি না। “ঢাকা অ্যাটাক” শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক, শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক, শ্রেষ্ঠ মেকআপসহ পাঁচটি পুরস্কার পেয়েছে।’

‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর। ছবি: সংগৃহীত
‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর। ছবি: সংগৃহীত

এ ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত হতে পারে? মুশফিকুর রহমান গুলজার প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে যিনি দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন, এখন তাঁর পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আমার ধারণা সামনে কার্যদিবসে তথ্য মন্ত্রণালয় সভা ডেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে। তবে সময়েরও বিষয় আছে। কেননা নতুন কাউকে পুরস্কার দিতে হলে সেটি আবার চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদের অনুমতি নিতে হয়। তার মানে বিষয়টি সময় সাপেক্ষ।’

এর আগে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’ ঘোষণার পর একটি বিভাগের পুরস্কার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট অনেকেরই অভিযোগ ছিল, ‘সেরা নৃত্য পরিচালক’ হিসেবে যাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তিনি সংশ্লিষ্ট ছবিতে কোনোভাবেই যুক্ত ছিলেন না। পরে যাচাই-বাছাই শেষে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’ থেকে ‘সেরা নৃত্য পরিচালক’ বিভাগটি বাতিল করা হয়। তখন ‘নিয়তি’ ছবিতে ‘ঢাকাই শাড়ি’ শিরোনামের গানের নৃত্য পরিচালনার জন্য নৃত্য পরিচালক হিসেবে মোহাম্মদ হাবিবের নাম ঘোষণা করা হয়। আসলে ওই ছবির গানে নৃত্য পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন ভারতের জয়েশ প্রধান।