সাগরে ঘূর্ণিঝড়, সবাই হোটেলে বন্দী: চঞ্চল চৌধুরী

আজ শনিবার বিকেলে সেন্ট মার্টিন থেকে ফেসবুকে এই ছবি দিয়ে চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন, ‘সবাই নিরাপদে থাকুন। আমরা “হাওয়া” টিম সেন্টমার্টিনে নিরাপদে আছি।’
আজ শনিবার বিকেলে সেন্ট মার্টিন থেকে ফেসবুকে এই ছবি দিয়ে চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন, ‘সবাই নিরাপদে থাকুন। আমরা “হাওয়া” টিম সেন্টমার্টিনে নিরাপদে আছি।’

‘সাগরে ঘূর্ণিঝড়, আমরা সবাই হোটেলে বন্দী। বাইরে বের হওয়া নিষেধ। সাগরের তীরে কেউ যেতে পারবে না। একটু পরপর প্রশাসন থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।’ আজ শনিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বললেন জনপ্রিয় তারকা চঞ্চল চৌধুরী। মধ্য বঙ্গোপসাগরে শুটিং করতে গিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সেন্ট মার্টিনে আটকা পড়েছেন ‘হাওয়া’ ছবির অভিনয়শিল্পী চঞ্চল চৌধুরীসহ অন্য শিল্পী ও কলাকুশলীরা। ছবির পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন বলেন, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাসের গতিবেগ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাতে বাতাসের আওয়াজ আর সাগরের গর্জনে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সকাল পর্যন্ত এই পরিস্থিতি ছিল। আজ দুপুরের পর থেকে আবার সেই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

মেজবাউর রহমান সুমন জানান, যেহেতু প্রশাসনের কঠোর নির্দেশ, তাই কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। সবাই হোটেলের ভেতরেই আছেন। সঙ্গে পর্যাপ্ত খাবার আছে। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সেন্ট মার্টিনের রাস্তাঘাটও জনমানব শূন্য। সবাই নিরাপদ স্থানে চলে গেছে।

চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘ঢাকায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে “সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে চঞ্চল চৌধুরী” শিরোনামে খবর প্রকাশের পর বন্ধু, আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী, দর্শক, ভক্ত—অনেকেই ফোন করে সর্বশেষ খবর জানতে চাচ্ছেন। শুধু আমাকে নয়, আমাদের সঙ্গে যাঁরা আছেন, সবাইকে ফোন করে তাঁদের বন্ধু ও স্বজনেরা খবর নিচ্ছেন। আসলে সবাই উদ্বিগ্ন।’

জানালেন, এখন হোটেলের ভেতরে আড্ডা দিয়ে, গল্প করে সবাই সময় কাটাচ্ছেন। ‘হাওয়া’ ছবির শিল্পী ও কলাকুশলী—সব মিলিয়ে শতাধিক ব্যক্তি ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর কারণে সেন্ট মার্টিনে আটকা পড়েছেন।

কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিন এলাকা ঘিরে ‘হাওয়া’ ছবির শুটিং হচ্ছে। মেজবাউর রহমান সুমন আগেই বলেছেন, ‘এটা সমুদ্রতীরবর্তী মানুষের গল্প না। একেবারে সমুদ্রের জলের সঙ্গে মিশে যাওয়া জেলেদের গল্প। জলের গল্প। মাছ ধরার ট্রলারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কাহিনি। গভীর সমুদ্রে ১০ থেকে ১৫ দিনের জন্য মাছ ধরতে যান জেলেরা। সেখানকার অভিজ্ঞতা এটি। আমাদের এ অঞ্চলে জলকেন্দ্রিক যে মিথোলজি আছে, তার একটা আধুনিক উপস্থাপনা বলতে পারেন।’

এ কারণেই গভীর সাগরে গিয়ে প্রতিদিন তাঁদের শুটিং করতে হচ্ছে। সেন্ট মার্টিন থেকে ট্রলারে দেড় ঘণ্টা চলার পর সাগরের নির্ধারিত স্থানে গিয়ে নোঙর করেন তাঁরা। সেখানেই সারা দিন শুটিং হয়। মেজবাউর রহমান সুমন বলেন, ‘প্রতি দিনের মতো গত বৃহস্পতিবার সকালে আমরা সেখানে যাই। যাওয়ার সময় পরিস্থিতি ততটা বুঝতে পারিনি। কিন্তু দুপুরের পর আবহাওয়া দ্রুত খারাপ হতে থাকে। ঢেউ ভয়ংকর থেকে আরও ভয়ংকর হতে শুরু করে। অনেক উঁচু উঁচু ঢেউ। ট্রলারের লোকজন দ্রুত ফিরে যাওয়ার জন্য তাগিদ দেন। আমরাও সবাই ভয় পেয়ে যাই। ফিরে আসার চেষ্টা করি। কিন্তু সন্ধ্যার আগে সেন্ট মার্টিনের কাছাকাছি এসে মূল ট্রলার থেকে ছোট ট্রলারে কোনোভাবেই নামতে পারছিলাম না। ভয়াবহ স্রোত আর মনে আতঙ্ক তৈরি করার মতো ঢেউ। সঙ্গে বাতাস আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। মনে হচ্ছিল নৌকা একেবার উল্টে যাবে। সব মিলিয়ে খুব খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে সবার।’

সেন্ট মার্টিনে চঞ্চল চৌধুরী ও মেজবাউর রহমান সুমন। ছবি: হাসান আহমেদ
সেন্ট মার্টিনে চঞ্চল চৌধুরী ও মেজবাউর রহমান সুমন। ছবি: হাসান আহমেদ

চঞ্চল চৌধুরী বলেছেন, ‘আমাদের সেন্ট মার্টিন থেকে এতটা দূরে যেতে হয়, যাতে সেখান থেকে কোনো দ্বীপের চিহ্ন দেখা না যায়। এতটা গভীর সমুদ্রে কাজ করছি আমরা। বৃহস্পতিবার খুব ভয় পেয়েছিলাম। বলতে পারেন, জীবন-মৃত্যু হাতে নিয়ে কাজ করছি।’

আবহাওয়ার পরিস্থিতির ব্যাপারে তাঁরা আগে থেকে কিছুই জানতে পারেননি। কারণ, ট্রলারে কোনো রেডিও ছিল না। আর মধ্যসাগরে কোনো মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক নেই। চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের শুটিং ফ্যাসিলিটিজ যে কতটা অপ্রতুল আর ঝুঁকিপূর্ণ, তা এবার কাজ করতে গিয়ে আবারও বুঝেছি।’

‘হাওয়া’ ছবির শিল্পীদের মধ্যে এখন সেন্ট মার্টিনে আছেন চঞ্চল চৌধুরী, নাফিজা তুশি, সুমন আনোয়ার, শরিফুল রাজ, রিজভি, নাসির, মাহমুদ প্রমুখ।

মেজবাউর রহমান সুমন জানান, ছবির বেশির ভাগ শুটিং শেষ। এখনে আরও কয়েক দিন শুটিংয়ের পর কক্সবাজারেও চার-পাঁচ দিন শুটিং করতে হবে। সাগর এখন এতটাই উত্তাল, আগামী কয়েক দিন শুটিং করা যাবে না। বললেন, ‘এভাবে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ব, ভাবিনি। তবে কাজের গতি পেছালেও কারও কোনো ক্ষতি হয়নি।’