'মঞ্চের জুটি, জীবনের জুটি'

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘মঞ্চের জুটি, জীবনের জুটি’ শীর্ষক সেশনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের নাটকের জগতের এই দুই দিকপাল ফেরদৌসী মজুমদার ও রামেন্দু মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত
বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘মঞ্চের জুটি, জীবনের জুটি’ শীর্ষক সেশনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের নাটকের জগতের এই দুই দিকপাল ফেরদৌসী মজুমদার ও রামেন্দু মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত

তাঁদের পরিচয় নাটকেই। মুনীর চৌধুরীর ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটকে কাজ করতে গিয়ে তাঁদের প্রথম পরিচয়। সেই পরিচয় বিয়ে এবং সংসারে গড়ায়। কেটে যায় কয়েক দশক। এত বছরেও নাটকের প্রতি, মঞ্চের প্রতি ভালোবাসা এতটুকু ম্লান হয়নি তাঁদের, বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সে কারণেই নাটক ও সংসার—দুই জীবনেই অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন এই দম্পতি। তাঁরা হলেন রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদার। সফল এই জুটি তাঁদের গল্প শোনালেন ঢাকা লিট ফেস্টে।

রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদারের সঙ্গে আলাপচারিতা দারুণ জমে উঠলে উৎসবের শেষ দিনটা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে পড়ে। শনিবার তুমুল বৃষ্টির কারণে সন্ধ্যার সেশনগুলো বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এর আগে শনিবার তৃতীয় দিনের সকাল শুরু হয় ইসকনের সংগীত দলের ভজনকীর্তন দিয়ে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্য দিয়েই শুরু হয় সকাল ১০টার সেশনগুলো।

উৎসবের নবম আসরের তৃতীয় দিন বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘মঞ্চের জুটি, জীবনের জুটি’ শীর্ষক সেশনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের থিয়েটার জগতের এই দুই দিকপাল। সেশনটি সঞ্চালনা করেন নাট্যকার ও শিক্ষক আব্দুস সেলিম।

সেশনের শুরুতেই ফেরদৌসী মজুমদারের কাছে সঞ্চালক তাঁদের বিয়ের আগের জীবনের কথা জানতে চান। ফেরদৌসী বলেন, ‘আমরা অনেক যুদ্ধ করে এত দূর আসতে পেরেছি। আমার বাবা ছিলেন খুবই রক্ষণশীল। ওই সময়ে আমাদের ভালোবাসার কথা জানানোর কোনো পরিস্থিতি ছিল না। কিন্তু আমি তাঁর মতোই জেদি ছিলাম। আমার বাবা একসময় রাজি হয়ে যান আমাদের বিয়েতে। কিন্তু ’৭০ সালে এই বিয়ে প্রকাশ্যে হওয়া সম্ভব ছিল না। আমার দুই ভাই কবীর চৌধুরী ও মুনীর চৌধুরীর সাহায্যে এই বিয়ে সম্ভব হয়।’

কৌতুকের ছলে সঞ্চালক দুজনেরই কাছে জানতে চান, তাঁদের মধ্যে কে প্রথমে প্রেমের প্রস্তাব দেন?’ রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘ছেলেরা যেহেতু প্রথমে বলে, তাই আমিই ফেরদৌসীকে বলেছিলাম।’ ফেরদৌসী মজুমদার কথায় কথায় জানান, মঞ্চে তাঁদের প্রথম একসঙ্গে কাজ ‘তামাশা’ নাটকে। টেলিভিশনে প্রথম কাজ ‘একতলা-দোতলা’ নাটকে। এই নাটক সম্পর্কে ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, ‘তখন অনেক কুসংস্কার ছিল। বিয়ের আগে কোনো পুরুষকে স্পর্শ করা যাবে না। এই বিষয়গুলোও মানতে হতো।’

মঞ্চ প্রসঙ্গে রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘আমরা দুজনই মুনীর চৌধুরী ও আবদুল্লাহ আল মামুনের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। তাঁরা না থাকলে আমরা থিয়েটারে এত দূর আসতে পারতাম না।’ একসঙ্গে এত লম্বা জীবন অতিবাহিত করার রহস্য কী? এমন প্রশ্নের জবাবে রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘এখানে কোনো রহস্য নেই। আমাদের পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ ও বন্ধুত্বের কারণেই আমরা এত দূর আসতে পেরেছি।’

নাট্যকার ও শিক্ষক আব্দুস সেলিমের সঞ্চালনায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘মঞ্চের জুটি, জীবনের জুটি’ শীর্ষক সেশনে উপস্থিত ছিলেন রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত
নাট্যকার ও শিক্ষক আব্দুস সেলিমের সঞ্চালনায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘মঞ্চের জুটি, জীবনের জুটি’ শীর্ষক সেশনে উপস্থিত ছিলেন রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত

তরুণ অভিনয়শিল্পীদের জন্য পরামর্শ জানতে চাইলে ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, ‘অভিনয়টা জীবন থেকেই শিখতে হয়।’ জীবনকে যত বেশি উপলব্ধি করবে, অভিনয়কে তত বেশি জানবে বলে মন্তব্য করেন গুণী এই অভিনয়শিল্পী।

ঢাকা লিট ফেস্টের সমাপনী দিনের সর্বশেষ সেশনে লেখক মণিশংকর অংশগ্রহণ করতে পারেননি শারীরিক অসুস্থতার কারণে। আয়োজন শেষ হয় দক্ষিণ ভারতীয় সাংবাদিক তিশানি দোশির আবৃত্তি ও নৃত্যনাট্য দিয়ে। সমাপনী পর্বে বক্তৃতা দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, সাদাফ সায্‌ ও ব্রাজিলিয়ান লেখক মারিয়া ফিলোমেনা বৈসো লেপেস্কি।

সমাপনী আয়োজনে ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সায্‌ আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এই আয়োজন আরও আকর্ষণীয় ও জনমানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন। ঢাকা লিট ফেস্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।