শুরু হলো লোকগানের বড় উৎসব

প্রেমা ও ভাবনা নৃত্যদলের পরিবেশনায় সিলেটের ধামাইল নৃত্য দিয়ে শুরু হয় লোকসংগীত উৎসব। গতকাল আর্মি স্টেডিয়ামে।  ছবি: সাইফুল ইসলাম
প্রেমা ও ভাবনা নৃত্যদলের পরিবেশনায় সিলেটের ধামাইল নৃত্য দিয়ে শুরু হয় লোকসংগীত উৎসব। গতকাল আর্মি স্টেডিয়ামে। ছবি: সাইফুল ইসলাম

আজ (গতকাল) রাতের সেরা আকর্ষণ কী? এক দর্শক জানতে চাইলেন তাঁর বন্ধুর কাছে। প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, ‘হো জায়েগি বাল্লে বাল্লে।’ এটি ভারতের শিল্পী দালের মেহেদির ভীষণ পরিচিত একটি গান। পাঞ্জাবি ভাঙড়া গানকে বলিউডে পাকা জায়গা করে দিয়েছেন এই শিল্পী। এ বছরের লোকসংগীত উৎসবে তিনি এসেছেন, শ্রোতাদের জন্য এ এক দারুণ পাওয়া।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুরু হয়েছে লোকসংগীতের আন্তর্জাতিক আসর ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট-২০১৯। বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে এ উৎসবের শুরুতে ছিল লোকনৃত্য। প্রেমা ও ভাবনা নৃত্যদলের পরিবেশনায় সিলেট অঞ্চলের ধামাইল নৃত্য দিয়ে শুরু হয় লোকসংগীত উৎসব। একে একে লোক আঙ্গিকের বেশ কিছু পরিবেশনা নিয়ে আসে নাচের দলটি। নৃত্য পরিচালনা করেছেন সামিনা হোসেন প্রেমা।

উৎসব মঞ্চে প্রথম গান নিয়ে আসে জর্জিয়ার গানের দল শেভেনেবুরেবি। জর্জিয়ার ভাষায় সেসব লোকগানের ভাষা শ্রোতাদের সঙ্গে সংযোগ ঘটায়নি, ঘটিয়েছে তাঁদের সুর আর যন্ত্র। দূর দেশের এই শিল্পী দলকে যতটা করতালি দিয়ে স্বাগত জানানো সম্ভব, তাতে কার্পণ্য করেননি ঢাকার শ্রোতারা। শেভেনেবুরেবিও পাখির বুলির মতো ভাঙা ভাঙা বাংলায় ভালোবাসা জানায় বাংলাদেশের দর্শকদের।

তবে এই রাতের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত পরিবেশনা ছিল বাংলাদেশের শাহ আলম সরকারের। প্রায় কিংবদন্তিতুল্য এই শিল্পীর অ্যালবামের সংখ্যা সাড়ে ৬ শতাধিক। এমনকি তাঁর লেখা ও সুর করা গান গেয়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন শিল্পী মমতাজ। দেশের নানা প্রান্তে এখনো পালাগান পরিবেশন করে যাচ্ছেন শাহ আলম সরকার। তাঁর পরিবেশনার অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন শ্রোতারা।

প্রতিবছরের তুলনায় সান ফাউন্ডেশনের এ বছরের আয়োজন আরও গোছালো ও পরিপাটি। শ্রোতাদের ঘুরে বেড়ানো, বসা ও আড্ডার জন্য চমৎকার আয়োজন করেছে তারা। আলোকসজ্জা প্রতিবারের মতো চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। শব্দযন্ত্র নিয়ে প্রথম দিনের নানা আশঙ্কা এ বছর একেবারেই ছিল না। শ্রোতাদের সামনে শিল্পীদের উপস্থাপন করেন শিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল ও সংগীতা আহমেদ। শিল্পী বদলের ফাঁকে ফাঁকে প্রয়াত সব শিল্পীর গান বড় পর্দায় চালিয়ে দেয় সান ফাউন্ডেশন। স্মরণ করে সুবীর নন্দী, শাহনাজ রহমতউল্লাহ ও আইয়ুব বাচ্চুর মতো শিল্পীদের।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অঞ্জন চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উৎসবের অন্যতম সহযোগী ঢাকা ব‍্যাংকের ফাউন্ডার চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার।
প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। চিত্তের উন্নয়নের জন‍্য গানবাজনার চর্চা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

উৎসব উদ্বোধন করেন তথ‍্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, সংগীত ও সংস্কৃতিচর্চা মানুষকে পরিশীলিত করে। মাদক ও জঙ্গিবাদ থেকে তরুণ সমাজকে দূরে রাখতে সংগীত ও সংস্কৃতিচর্চা চালিয়ে যেতে হবে। এ উৎসবকে নিয়ে যেতে হবে ঢাকার বাইরে।

উৎসবটি সরাসরি সম্প্রচার করছে মাছরাঙা টেলিভিশন। উৎসব ব‍্যবস্থাপনায় সান কমিউনিকেশন।

আজ শুক্রবার লোকসংগীত উৎসবের দ্বিতীয় দিন। সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিট থেকে গান করবে মালির হাবিব কাইটে অ্যন্ড বামাদা, পাকিস্তানের হিনা নাসরুল্লাহ, বাংলাদেশের ফকির শাহাবুদ্দিন, কাজল দেওয়ান, ‘ম্যাজিক বাউলিয়ানা’র কামরুজ্জামান রাব্বি ও শফিকুল ইসলাম। উৎসব চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।