নবীন দর্শকের প্রত্যাশায় নাট্যোৎসব শুরু

আইডিএলসি নাট্যোৎসবের উদ্বোধনীতে র‌্যাচেল প্রিয়াংকার নেতৃত্বে ছিল গৌড়ীয় নৃত্য পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো
আইডিএলসি নাট্যোৎসবের উদ্বোধনীতে র‌্যাচেল প্রিয়াংকার নেতৃত্বে ছিল গৌড়ীয় নৃত্য পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো

গত বছরের উৎসবে বিনা মূল্যে দর্শক নাটক দেখেছেন। তখন নাটকের মতো শ্রমসাধ্য মাধ্যমকে এভাবে বিনা মূল্যে প্রদর্শনীর ব্যবস্থার সমালোচনা করেছিলেন নাট্যকর্মীদের একটি অংশ। অনেকে এর নিন্দাও জানিয়েছিলেন। সেবারের কথা মনে করলেন ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার। নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এমন অনেক দর্শক দেখেছি, যারা আগে কখনো নাটক দেখতে আসেনি। এই নতুন দর্শকটির যদি নাটকের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়, তাতে তা আমাদের জন্যই ভালো। নাটকপাড়ায় আসার অভ্যাস তো হলো।’

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হয়েছে আইডিএলসি নাট্যোৎসব। ‘তারুণ্যের জয়গানে আসুন আনন্দের মঞ্চে’ স্লোগান নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসির আয়োজনে এবারের উৎসবে নাটকের দর্শনীমূল্য ধরা হয়েছে ১০০ টাকা। এই উৎসবে সংগৃহীত দর্শনীমূল্য মঞ্চনাটকের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের কল্যাণ তহবিলে দেওয়া হবে। দর্শক ওয়েবসাইটের http://idlc.com/natyautshob লিঙ্ক থেকে অনলাইন টিকিট নিয়ে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

গতকাল সন্ধ্যায় শুরু হওয়া উৎসবে ছিল দর্শকের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি। ছিমছাম গোছানো আয়োজন। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা প্রাঙ্গণ সাজানো হয়েছে নানা নাটকের আলোকচিত্র দিয়ে। কোথাও রংবেরঙের ফেস্টুন, পোস্টার। নাট্যামোদী দর্শকদের সমাগমও যথেষ্ট, সংখ্যাধিক্য তারুণ্যের। আর আয়োজনটিও তরুণ প্রজন্মের কাছে মঞ্চনাটককে জনপ্রিয় করতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের রসপুরাণ নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের রসপুরাণ নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসবের উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর। আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী আরিফ খানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। নাট্যোৎসবে অংশ নিচ্ছে দেশের অন্যতম ১০টি নাট্যদল।

অভিনেত্রী আফসানা মিমির সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘শুধু শিক্ষিত হলেই মানবিক হওয়া যায় না। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে না পারলে সবকিছুই বৃথা। শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে সুশিক্ষা অর্জনের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।’ নূর আরও বলেন, একজন পরিপূর্ণ ভালো মানুষ তথা মানবিক মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হলে সংস্কৃতিকে সঙ্গী করে নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি অনুষ্ঠানের উপস্থাপকের অনুরোধে সৈয়দ শামসুল হকের কাব্যনাটক ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ থেকে আবৃত্তি করে শোনান।

ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার নতুন নাটক প্রযোজনায় নতুন দলকে উৎসাহ দিতে ৩ লাখ টাকা অনুদানের পরামর্শ দেন। এতে করে কাজের কাজটি হবে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের উৎসব নতুন দর্শক তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। জাতিসত্তার বিকাশে সংস্কৃতি তথা নাটকের কোনো বিকল্প নেই। নাটক সমাজের দর্পণ ও সমাজ বিনির্মাণের হাতিয়ার। সমাজের নানা সংগতি-অসংগতি তুলে ধরতে হলে তরুণ প্রজন্মকে নাট্যচর্চায় বেশি বেশি মনোনিবেশ করতে হবে।

আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান বলেন, ‘দায়িত্ব ও অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইডিএলসি সব সময় দেশের সমৃদ্ধ শিল্প-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পৃষ্ঠপোষকতায় কাজ করছে। সেই দায়িত্ব থেকেই এবং দেশের প্রতিভাবান শিল্পীদের প্রতি যথাযথ সম্মান জানাতেই দ্বিতীয়বারের মতো আমরা এই উৎসবের আয়োজন করেছি।’ তাঁর আশা, এই আয়োজন নিঃসন্দেহে মঞ্চনাটকের প্রতি তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করবে এবং এ দেশের মঞ্চনাটকে নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের আরও অনুপ্রাণিত করবে। নাটকের মানুষের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রতিবছর এ ধরনের উৎসব করার ইচ্ছা আছে বলে জানালেন তিনি।

উদ্বোধনী মঞ্চে অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত
উদ্বোধনী মঞ্চে অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

উদ্বোধনী বক্তৃতার পর নৃত্য পরিবেশন করেন র‌্যাচেল প্রিয়াংকা। পরে একই মঞ্চে নাট্যচক্র পরিবেশন করে তাদের জনপ্রিয় নাটক ‘ভদ্দরনোক’। ফরাসি নাট্যকার মলিয়েরের ‘দ্য বুর্জোয়া জেন্টেলম্যান’ অবলম্বনে নাটকটির রূপান্তর করেছেন গোলাম সারোয়ার। নির্দেশনায় রয়েছেন সানাউল্লাহ হক। একই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ পরিবেশন করে ‘রসপুরাণ।’ নাট্যভাবনা, পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান আহমেদুল কবির।

আজ বুধবার দ্বিতীয় দিন। বিকেল পাঁচটায় পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে পরিবেশিত হবে তাড়ুয়া’র ‘লেট মি আউট’ এবং সন্ধ্যা সাতটায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে নাগরিক নাট্যাঙ্গনের ‘গহর বাদশা ও বানেছা পরী।’

তৃতীয় দিন কাল বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে ঢাকা পদাতিক নাট্য সংসদের ‘পাইচো চোরের কিচ্ছা’ ও সন্ধ্যা সাতটায় জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের ‘চম্পাবতী’ মঞ্চস্থ হবে। শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে পরিবেশিত হবে সময় নাট্যদলের ‘ভাগের মানুষ’, সন্ধ্যা সাতটায় জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে ঢাকা থিয়েটারের ‘ধাবমান’। শনিবার পঞ্চম ও শেষ দিন বিকেল পাঁচটায় পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে আরশী নগরের ‘রহু চণ্ডালের হাড়’ এবং রাত সাড়ে আটটায় জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে থিয়েটারের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ পরিবেশিত হবে। এদিনই জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে সন্ধ্যা সাতটায় থাকছে সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে ‘কৃতী সম্মাননা’।