উৎসব ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে

একটা সময় শুধু শিল্পকলা একাডেমি আর মহিলা সমিতির মিলনায়তনেই উৎসব সীমিত ছিল। সেসব এখন অতীত। উৎসব এখন ছড়িয়ে পড়েছে বাইরে, খোলা ময়দানে। ময়দানে বা মিলনায়তনে যেখানে পারছেন সংস্কৃতির সুধা নিচ্ছেন অনুরাগীরা। এসবের কিছু চিত্র তুলে ধরছেন মাসুম আলী
রাধারমণ সংগীত উৎসবে ছিল দলীয় নৃত্য ও সংগীতের পরিবেশনা। ছবি: আনন্দ
রাধারমণ সংগীত উৎসবে ছিল দলীয় নৃত্য ও সংগীতের পরিবেশনা। ছবি: আনন্দ

হয়ে গেল রাধারমণ উৎসব

কার্তিকের শেষ দুই দিন এবং অগ্রহায়ণের প্রথম দিনে হালকা শীতের আমেজ ছিল শিল্পকলা একাডেমির খোলা চত্বরে। মাঝখানে শামিয়ানার নিচে শত শত মানুষ। বাজছে বাঁশি, বাজছে ঢোল। গানের সুরের সঙ্গে নেচে-গেয়ে তাল মেলাচ্ছেন শ্রোতারা। সুরের জাদু ছড়িয়ে পড়েছে গোটা মাঠে। শ্রোতারা গলা মেলাচ্ছেন বাংলা ভাষার লোককবি রাধারমণ দত্তের গানের সঙ্গে। কখনো বিরহী, কখনো প্রেমের গানের সুরে আকুল হয়ে উঠেছিল শ্রোতাদের প্রাণ।

‘বিনোদিনী গো তর বৃন্দাবন কারে দিয়া যাবি’, ‘কারে দেখাব মনের দুঃখ গো’, ‘শ্যাম কালিয়া সোনা বন্ধুরে’, ‘আমার শ্যাম যদি হইতো মাথার কেশ’, ‘ভ্রমর কইও গিয়া’ কিংবা ‘জলে গিয়াছিলাম সই’ গানগুলো একের পর এক ভেসে বেড়িয়েছে তিন দিন। মাটি ঘনিষ্ঠ মানুষের প্রাণ ছুঁয়ে যাওয়া এসব গানের স্রষ্টা সাধক কবি রাধারমণ দত্ত। তাঁকে স্মরণ করে রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত চত্বরে হয়ে গেল ‘রাধারমণ সংগীত উৎসব’। নবম বছরের মতো  এই আয়োজনে চলে ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত।

উৎসবে সম্মাননা প্রদান করা হয় বিদিতলাল দাস (মরণোত্তর) ও লোকগানের গবেষক অধ্যাপক মৃদুলকান্তি চক্রবর্তীকে (মরণোত্তর)।  এ ছাড়া লন্ডন থেকে আসা শিল্পী হিমাংশু গোস্বামী ও আসামের শিলচরের সাংস্কৃতিক সংগঠক  সেন্তাষ চন্দকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

তিন দিনের আসরে ছিল একক ও দলীয় গানের সংগীত পরিবেশনা। ছিল গানের সঙ্গে নৃত্যও। ধামাইল নৃত্য ছিল ঢাকার দর্শকের জন্য বিশেষ প্রাপ্তি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শিল্পী বিশ্বজিৎ রায় জানান, আগামী বছর থেকে ‘রাধারমণ লোক সংগীত উৎসব’ নামান্তরে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দিন পরিবেশিত হবে শুধুই রাধারমণের গান। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন পরিবেশিত হবে হাসন রাজা, শাহ আবদুল করিম, দুর্বিন শাহ, আরকুম শাহ্সহ সিলেট অঞ্চলের মরমি কবিদের গান।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে মঞ্চস্থ আমার মুখের আঁচলখানি নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে মঞ্চস্থ আমার মুখের আঁচলখানি নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

নাটকের নতুন জায়গা

 ‘নৃশংস নৈঃশব্দ্য ভেঙে সুনন্দ সাহস জাগুক প্রাণে প্রাণে’ স্লোগান নিয়ে ১৬ নভেম্বর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে শুরু হয়েছে বটতলা রঙ্গমেলা ২০১৯। তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত এ উৎসব চলবে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত।

১১ দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে বটতলাসহ বাংলাদেশের দুটি ও দেশের বাইরের আটটি দল নাটক পরিবেশন করছে। বাংলাদেশ ছাড়া উৎসবে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো হচ্ছে ভারত, স্পেন, ইরান ও নেপাল। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বহিরাঙ্গনে নাদিম মঞ্চে মিলছে নাটক, গান, কবিতা, নাচসহ বিভিন্ন আনন্দ আয়োজন। দেওয়া হচ্ছে দেশের আটটি বিভাগের আট নাট্যজনকে সম্মাননা, যাঁরা খুব নীরবে দীর্ঘদিন ধরে নাট্যচর্চাকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন। সম্মাননার তালিকায় আছেন বরিশালের দেলোয়ার হোসেন, সিলেটের হেমেন্দ্র চৌধুরী, ঢাকার হরিপদ সূত্রধর, রংপুরের সবিতা সেনগুপ্ত, ময়মনসিংহের গৌরাঙ্গ আদিত্য, চট্টগ্রামের মিলন চৌধুরী, রাজশাহীর অনিতা মৈত্র ও খুলনার রোহানি বেগম।

নাটক মঞ্চায়নের পর প্রতিদিন বহিরাঙ্গনে নাদিম মঞ্চে দর্শকের মুখোমুখি হন সংশ্লিষ্ট নাটকের নির্দেশক। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে সাতটা পর্যন্ত থাকবে গান, নাটক, কবিতা ও নাচের পরিবেশনা।

উৎসবের সুমন মঞ্চে দেখানো হয় পাঁচটি তথ্যচিত্র। আজ ২১ নভেম্বর থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেখানো হবে প্রামাণ্যচিত্র লেট দেয়ার বি লাইট (তাপস সেন, ভারত), ফেরদৌসী মজুমদার (বাংলাদেশ) এবং বিহাইন্ড দ্য কার্টেন (বিভাস চক্রবর্তী, ভারত)। ২৪ নভেম্বর দেখানো হবে দ্য কনজ্যুরার (সৈয়দ জামিল আহমেদ, বাংলাদেশ)। আজ থেকে আগামী তিন দিন বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত তিনটি মাস্টারক্লাস অনুষ্ঠিত হবে।

‘হৃদয়ঙ্গম ঋদ্ধ’ মঞ্চে থাকছে শিশুপ্রহর। কাল শুক্রবার ও পরদিন শনিবার সকাল ১০টা থেকে শিশুপ্রহরে মঞ্চস্থ হবে আওয়ার কিংডম (শব্দাবলী, বরিশাল), পুঁথিপড়া, পাখিপড়া (ফুলকি, চট্টগ্রাম) ও পুতুলনাচ (বাংলাদেশের পুতুল নাট্য গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র)।

২৬ নভেম্বর বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠিত হবে ‘রঙ্গমঞ্চে বটতলার আলাপ’। এতে নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী অংশ নেবেন।