কোটি ভিউয়ের ফারিণ

অভিনয়ের জগতে তাসনিয়া ফারিণের বয়স খুব একটা বেশি নয়। কিন্তু তাঁর পরিচিতি অল্প সময়েই জোয়ারের পানির মতো হু হু করে বেড়েছে। মডেলিং দিয়ে শুরু করে টেলিভিশন নাটকে অভিষেক হয় তাঁর। কিন্তু ইউটিউবের কারণে তাঁর পরিচিতির বিস্তৃতি এখন অনেক। ফারিণের বেশ কয়েকটি নাটক তো ইউটিউবে দর্শক দেখেছে কয়েক কোটিবার। নতুন প্রজন্মের নতুন মাধ্যমের এই অভিনয়শিল্পীকে নিয়ে লিখেছেন শফিক আল মামুন
তাসনিয়া ফারিণ। ছবি: সুমন ইউসুফ
তাসনিয়া ফারিণ। ছবি: সুমন ইউসুফ

১৫ নভেম্বর সিনেমাওয়ালার ইউটিউব চ্যানেলে তোলা হয়েছে মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত নাটক ক্রেজি ফর ইউ। প্রকাশের দুই দিনের মধ্যেই দর্শক এটি দেখেছে ১০ লাখবার। এই নাটকে ‘মাহি’ নামের একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাসনিয়া ফারিণ। এত দর্শক নাটক দেখছে, চিনছে ফারিণকে—কেমন এই অভিজ্ঞতা? এটা জানতে আমরা ফারিণের সঙ্গে আড্ডায় বসি। রোমাঞ্চিত ফারিণ আমাদের বলেন, ক্রেজি ফর ইউ ইউটিউবে ওঠার পর থেকেই পরিচিত–অপরিচিত অনেকের ফোন আসছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসছে অনেক অনেক মন্তব্য। এমন প্রতিক্রিয়া পেলে কার না ভালো লাগে!

টার্নিং পয়েন্ট

এই নাটকই কিন্তু প্রথম নয়, ফারিণের অভিনয়জীবনের মোড় ঘুরেছিল ইউটিউবের জন্যই নির্মিত আরেকটি নাটক দিয়ে। এর নাম ছিল এক্স বয়ফ্রেন্ড। এ বছরের ভালোবাসা দিবসের জন্য কাজল আরেফিন এটি নির্মাণ করেছিলেন। একই সময়ে ইমরাউল রাফাতের ফার্স্ট ইয়ার ডোন্ট কেয়ার ২ নাটকটিও ইউটিউবে প্রকাশ পাওয়ায় ফারিণের বৃহস্পতি রীতিমতো তুঙ্গে উঠে যায়। ফারিণ বলেন, ‘ওই নাটক দুটি প্রচারের পর রাতারাতি যেন সব বদলে যেতে শুরু করে। মানুষ আমাকে একটু একটু করে চেনা শুরু করে। তখন থেকেই পরিচালকেরা আমাকে নিয়ে কাজের আগ্রহ দেখাতে লাগলেন। এরপর ব্যাচেলর ট্রিপ নাটকে অভিনয় করেও এমন প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলাম আমি।’

ফারিণের গাড়ি ছুটছেই

এরপর আর পেছনে ফিরে দেখার সময় হয়নি ফারিণের। একে একে আমি গাধা বলছি, উগান্ডা মাসুদ ২, পুলিশ, ব্যাচেলর ট্রিপ, আগুনের দিন শেষ হবে একদিন, নোটবুট নাটকগুলোয় অভিনয় করে ফারিণ নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। ফারিণ যে নাটকগুলোয় কাজ করেছেন, সেসব ইউটিউবের পাশাপাশি টিভি চ্যানেলেও সম্প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু ফারিণের হিসাবে তাঁর কাছে আসা ফোন আর ফেসবুক বার্তায় বেশির ভাগ ভক্তই বলেছেন, ‘ইউটিউবে আপনার নাটক দেখলাম’। ফারিণ বলেন, ‘টেলিভিশনে প্রচারিত হলেও সব নাটকই একটা সময় ইউটিউবে ওঠে। পাশাপাশি কিছু নাটক শুধুই ইউটিউবের জন্যই বানানো হয়, সেগুলোর বাজেটও থাকে বেশি। কারণ, নির্মাতা–প্রযোজকেরা সেই কনটেন্ট এমনভাবেই বানান, যেন তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাড়া ফেলে।’

তাসনিয়া ফারিণ। ছবি: সুমন ইউসুফ
তাসনিয়া ফারিণ। ছবি: সুমন ইউসুফ

যেভাবে শুরু
তাসনিয়া ফারিণের প্রথম নাটক সাফায়েত মনসুর রানার আমরা ফিরব কবে। ২০১৭ সালে এটি প্রচারিত হয়। এর আগে ২০১৬ সাল থেকে বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবে কাজ শুরু করেন ফারিণ। কীভাবে বিনোদনের এই ঝলমলে ভুবনে ঢুকলেন তিনি? এই গল্পটা শুরু করতে গিয়ে তিনি বললেন তাঁর মায়ের কথা—‘মায়ের জোরাজুরিতে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় ছবি জমা দিই। এক সপ্তাহ পরে ডাক আসে। কিন্তু পরীক্ষার কারণে অডিশনে যেতে পারিনি। সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। এর দুই মাস পর আবার ডাক আসে। সেবার গেলাম। প্রথম অডিশনেই টিকে গেলাম।’

ওই সময় পরপর বেশ কয়েকটি মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মডেল হন ফারিণ। এরপর আসে নাটকে অভিনয়ের ডাক। ফারিণ বলেন, ‘বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিংয়ের সময় এক সহকারী পরিচালকের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি শাফায়েত মনসুর রানার সহকারী হিসেবেও কাজ করতেন। তাঁর মাধ্যমেই রানা ভাইয়ের নাটকে কাজ করা।

মায়ের জন্যই নায়িকা

অভিনয়ের আগ্রহ ছিল না ফারিণের। তিনি বলেন, ‘আমার মা নাছোড়বান্দা। আমি অভিনয় করতে চাইনি। মায়ের কথাতেই অভিনয় শুরু করি।’ প্রথম নাটক প্রচারিত যেদিন হলো, সেই রাতে বেশ মজার এক ঘটনা ঘটে। তাঁর মা নাকি বাসায় এলাহি কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছিলেন। ফারিণের ভাষায় গল্পটা এমন—‘আমাদের যত আত্মীয়স্বজন, সবাইকে নাটক দেখার জন্য বাসায় দাওয়াত করেন মা। সে এক বিরাট কাণ্ড! আত্মীয়স্বজন আমার অভিনয় দেখে কে কী বলবেন, তা ভেবে আমি তো চিন্তায় জমে যাচ্ছিলাম।’

কিন্তু এখন মায়ের ইচ্ছাটাই হয়ে উঠেছে ফারিণের নিজের স্বপ্ন। এখন অভিনয়টা ভালোই লাগে তাঁর। ফারিণ বলেন, ‘ভক্ত, দর্শকদের যে ভালোবাসা পাচ্ছি, সেটা আমাকে সাহস দিয়েছে। তাই অভিনয় চালিয়ে যাব বলে ঠিক করেছি।’

মজার ঘটনা

শিল্পীদের জীবনে তো কত বিচিত্র ঘটনাই ঘটে। খ্যাতির বিড়ম্বনা আর সুখ দুটোই আছে। আমরা ফারিণের কাছে এমনই একটি গল্প শুনতে চাই। ফারিণ বলেন, ‘মাস দুয়েক আগে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম। সিরিয়াল নিয়ে চেম্বারের বাইরে বসে আছি। সামনে টেলিভিশন পর্দায় আমার অভিনীত ফিরে তাকাও নাটকটা তখন দেখাচ্ছিল। সবাই অপেক্ষা করতে করতে নাটকটি দেখছিলেন। কিন্তু আমি যে তাঁদের সঙ্গেই বসে ছিলাম, কেউ বুঝতে পারেনি। সবাই অনেক ভালো ভালো মন্তব্য করছিল। বিষয়টা আমার দারুণ লেগেছে।’

বাবা সরকারি কর্মকর্তা। মা গৃহিণী। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালে বিবিএ পড়ছেন। দুই ভাইবোনের মধ্যে ফারিণ বড়। অভিনয়ের পাশাপাশি একজন সফল ব্যবসায়ী হওয়ার ইচ্ছা এই মডেল ও অভিনেত্রীর।