মঞ্চে শরণার্থীর যাতনা

‘রিফিউজি’ পরিবেশনায় তিন শিল্পী আনন্দিতা খান, মেহরাজ হক তুষার ও আননূর খান নোলক। ছবি: নৃত্যযোগের সৌজন্যে
‘রিফিউজি’ পরিবেশনায় তিন শিল্পী আনন্দিতা খান, মেহরাজ হক তুষার ও আননূর খান নোলক। ছবি: নৃত্যযোগের সৌজন্যে

রোহিঙ্গা সংকট! কক্সবাজার বা বাংলাদেশ কেন, সমগ্র বিশ্ব এখন ‘শরণার্থী’ সংকট নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এ সংকট বাড়বে। ভিটেহারা মানুষের সংখ্যা হবে ‘অসংখ্য’। কক্সবাজারে চলমান আন্তর্জাতিক উৎসব ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যালেও প্রতিনিধিত্ব করেছে সেই সংকটের ছায়া। ছিল ‘রিফিউজি’ শিরোনামে একটি সমসাময়িক নৃত্য পরিবেশনা। আসিফ মুহাম্মদ মোসাদ্দেকের ভাবনা ও পরিকল্পনায় এর কোরিওগ্রাফি ও নৃত্য পরিবেশনা করেছেন আনন্দিতা খান। এ ছাড়া এই পরিবেশনায় অংশ নেন মেহরাজ হক তুষার ও আননূর খান নোলক। যাতনার পাশাপাশি শরণার্থীকে তাঁর ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান ছিল এই পরিবেশনায়।

ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যালে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক পরিবেশনায় অংশ নেয় যুক্তরাষ্ট্রের অনন্যা ড্যান্স থিয়েটার। তাদের পরিবেশনায় উঠে আসে মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ও বিযুক্ত থাকার যন্ত্রণার কথা। আন্তর্জাতিক এ অংশে হংকং, ভারত ও বাংলাদেশের শিল্পীরা পরিবেশন করেন সমসাময়িক এক দলীয় পরিবেশনা ‘চাঁদ: দ্য রিফ্লেকশন অব আ উইশ’। কানাডার শিল্পী ও সংস্কৃতিবিষয়ক শিক্ষক সাশার জারিফের সঙ্গে কোরিওল্যাবের পর তাঁরা এ প্রযোজনাটি নির্মাণ করে। সাশার ইরান থেকে শরণার্থী হয়ে গিয়েছিলেন কানাডায়; যদিও সংস্কৃতিচর্চা ও সাংস্কৃতিক শিক্ষার মাধ্যমে সেখান থেকে তিনি ছড়িয়ে পড়েছেন সারা বিশ্বে।

আজ ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যালের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকাল থেকে মারমেইড ইকো রিসোর্টে ছিল সেমিনার ও প্রবন্ধপাঠ। সেখানে বিষয়ভিত্তিক নানা ধারণা তুলে ধরেন বিশ্বের বিভিন্নে দেশের পণ্ডিত ও নৃত্যশিক্ষকেরা। ডব্লিউডিএ, এপির সভাপতি ভারতের ঊর্মিমালা সরকার তাঁর ধারণাপত্রে নাচ নিয়ে লেখালেখি ও গবেষণার সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন। দুঃখের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘নাচ নিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে রেফারেন্স দেওয়ার মতো কোনো গবেষণা বা লেখা নেই। এ বিষয়ে অন্য ডিসিপ্লিনের লোকদেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আমাদের শিক্ষাপদ্ধতিটি এমন যে এখানে শিক্ষকদের প্রশ্ন করা যায় না। মুখস্থ বিদ্যার ওপর ভিত্তি করেই শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে হয়। শিক্ষককে বলা যায় না যে পড়া ও চর্চার মধ্যে মিল খুব সামান্য।’ তিনি মুখস্থ বিদ্যা রেখে আদি বিষয়বস্তুকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপনের আহ্বান জানান।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় পরিবেশনা নিয়ে আসে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিল্পীরাও। ছবি: নৃত্যযোগের সৌজন্যে
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় পরিবেশনা নিয়ে আসে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিল্পীরাও। ছবি: নৃত্যযোগের সৌজন্যে

পরবর্তী অধিবেশনগুলোয় ‘মেডিয়েটিং ড্যান্স’-এ কোরিওগ্রাফির ভাষা, স্থান ও পরিবেশ নিয়ে কথা বলেন নরওয়ের টোন পারনিল অস্টার্ন। স্ট্রিট ড্যান্সারদের উঠে আসা নিয়ে কথা বলেন ভারতের মেঘনা ভরদ্বাজ। অস্ট্রেলিয়ার সংগীতজ্ঞ ও নৃত্যশিল্পী সিওয়াই গরম্যান এক উপস্থাপনায় তুলে ধরেন আলো ও শব্দের গুরুত্ব। তিনি বলেন, ‘পরিবেশনার ওপর ভিত্তি করে স্থান নয়, বরং স্থানের ওপর ভিত্তি করে পরিবেশনা সাজাতে পারাটাই গুরুত্বপূর্ণ। একেক ধরনের আলো ও শব্দ মানুষের মগজে ভিন্ন ধরনের তরঙ্গ সৃষ্টি করে। সুতরাং পরিবেশনার ক্ষেত্রে রঙের ব্যবহার ভীষণ প্রভাব রাখে আর যন্ত্র থেকে শব্দ উৎক্ষেপণ আরও জরুরি। কেননা, শব্দই বলে দেয় তথ্যের গুরুত্ব।’

এ ছাড়া ভোরে সৈকতে যোগব্যায়ামের কর্মশালায় অংশ নেন তরুণ শিল্পীরা। ছিল আনিসুল ইসলাম হিরু ও টমাস বুঙ্গারের কর্মশালা। শেষ বিকেলে ছিল সাশার জারিফের সঙ্গে নৃত্যবিষয়ক সংলাপ। বিকেল থেকে কক্স কার্নিভ্যালে থাকবে পারফরমেন্স। আন্তর্জাতিক অংশে থাকবে তাইওয়ানের লেই ড্যান্স থিয়েটারের পরিবেশনা ‘ইন্সপিরেশন অব আওয়ার হোম টাইন’, শুটে বিশ্ববিদ্যালয় ও সোমাটিক থিয়েটারের যৌথ পরিবেশনা ‘নট অ্যালোন’, বাংলাদেশের অমিত চৌধুরী ও সুইটি দাশের পরিবেশনা ‘রূপান্তর’, তাহনুন আহমেদির ‘আজান’, মেহরাজ হক তুষারের ‘ট্রাস্ট’, নৃত্যশৈলীর ‘হলি স্যান্ড’, কোরিয়ার লি মিহের ‘স্প্রিং কামিং উইথ আ ওয়ার্ম ব্রিজি’ এবং ভারতের আস্থা গান্ধীর ‘ইন ট্রানজিট’।

ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কক্স কার্নিভ্যাল মিলনায়তনে। ছবি: নৃত্যযোগের সৌজন্যে
ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কক্স কার্নিভ্যাল মিলনায়তনে। ছবি: নৃত্যযোগের সৌজন্যে

জাতীয়ভাবে নির্বাচিত অংশে থাকবে বাংলাদেশের শিল্পীদের সমসাময়িক নৃত্য পরিবেশনা। চার দিনের এ নৃত্য উৎসবের আয়োজন করেছে ওয়ার্ল্ড ড্যান্স অ্যালায়েন্সের বাংলাদেশ শাখা নৃত্যযোগ। উৎসব সহযোগী হিসেবে আছে মাত্রা ও চ্যানেল আই। সমর্থন দিচ্ছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, একাডেমিক সহযোগী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। উৎসবের ভেন্যু সহযোগী মারমেইড বিচ রিসোর্ট।