এ উৎসব হবে আড়ম্বরশূন্য

উৎসবের প্রথম দিন মঞ্চস্থ হবে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের নতুন প্রযোজনা ‘কালো জলের কাব্য’। নাটকের মহড়া চলছে। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া।
উৎসবের প্রথম দিন মঞ্চস্থ হবে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের নতুন প্রযোজনা ‘কালো জলের কাব্য’। নাটকের মহড়া চলছে। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া।

উৎসব মানে হইচই, আড়ম্বর ও সাজসজ্জা। কিন্তু নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের আয়োজনটি হবে অনাড়ম্বর। অর্থ সাশ্রয় করে তা দেওয়া হবে নাট্যাঙ্গনের অসচ্ছল দুই শিল্পীকে।

এখন রাজধানীতে চলছে একাধিক নাট্য উৎসব। এরই মধ্যে আজ শনিবার ঘোষণা এল নাগরিকের এই উৎসবের। ২৯ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে নাগরিকের ‘নতুনের উৎসব’। চলবে আগামী ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

শুধু সাজসজ্জায় অনাড়ম্বর নয়, অন্য সব উৎসবের তুলনায় এটি হবে সত্যিকার অর্থে ব্যতিক্রম। এ উৎসবে প্রদর্শিত হবে সাতটি নাটক, সব কটিই নতুন। এ উৎসবেই হবে নাটকগুলোর উদ্বোধনী প্রদর্শনী। সমকালীন সাতজন তুলনামূলক তরুণ নির্দেশনা দিচ্ছেন নাটকগুলো। এর মধ্যে পাঁচটি নতুন নাটক প্রযোজনার জন্য নির্দেশককে প্রণোদনা দিয়েছে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়। এ উৎসবে থাকবে না সাজসজ্জার আড়ম্বর। উৎসবের নাটকগুলো হবে বৈচিত্র্যপূর্ণ। উদ্বোধনীতে প্রবীণেরা থাকবেন, তবে প্রদীপ প্রজ্বালন করবেন নতুন প্রজন্মের প্রতিশ্রুতিশীল সাত নারী।

উৎসবের ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন আসাদুজ্জামান নূর। ছবি: মাসুম আলী
উৎসবের ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন আসাদুজ্জামান নূর। ছবি: মাসুম আলী

বাংলাদেশে দর্শনীর বিনিময়ে নাট্যচর্চার পথিকৃৎ নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়। ২০১৮ সালে এ দল উদ্‌যাপন করেছে প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর এবং দর্শনীর বিনিময়ের নাট্যচর্চার ৪৫ বছর। ১৯৭৩ সালে বাদল সরকারের লেখা ‘বাকী ইতিহাস’ নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শনীর বিনিময়ে নাট্যচর্চা শুরু করে নাট্যদলটি। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের ৫০ বছর পূর্তি এবং দর্শনীর বিনিময়ে নাটক মঞ্চায়নের ৪৫ বছর উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ উৎসব। নতুনের উৎসব উপলক্ষে আজ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের নাগরিকের পক্ষে উৎসবের নানা দিক তুলে ধরেন সংস্কৃতিজন সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নির্দেশক পান্থ শাহরিয়ার, সাইদুর রহমান লিপন, কাজী তৌফিকুল ইসলাম ও মোস্তাফিজ শাহীন।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, নতুন ভাবনার এ উৎসবের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মঞ্চে মানসম্পন্ন নতুন নাটক নিয়ে আসা। সেই সূত্র ধরে প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ নির্দেশকদের কাজের বিস্তৃতি ঘটানো। নাগরিকের এ উদ্যোগ দেশের থিয়েটারচর্চায় মেধা ও নান্দনিকতার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নূর জানান, তরুণ নির্দেশকদের কাছ থেকে অনেকগুলো নাটকের প্রস্তাব এসেছিল। সেখান থেকে ভালো নাটকগুলো বাছাই করা হয়েছে। নাটকগুলো নির্বাচন করেছেন তারিক আনাম খান, অধ্যাপক আবদুস সেলিম ও নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের সমন্বিত জুরিবোর্ড। উৎসবের সাজসজ্জায় আড়ম্বর থাকছে না জানিয়ে তিনি বলেন, সাজসজ্জা থেকে বেচে যাওয়া অর্থ প্রদান করা হবে নাট্যাঙ্গনের অসচ্ছল দুই শিল্পীকে। এ ছাড়া এ উৎসব প্রতিবছর নিয়মিতভাবে আয়োজন করার কথাও জানান নূর।

সমাপনী দিনে মঞ্চস্থ হবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিল্পীদের অভিনীত নাটক ‘লটারি’। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া।
সমাপনী দিনে মঞ্চস্থ হবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিল্পীদের অভিনীত নাটক ‘লটারি’। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া।

তৌফিকুল ইসলাম বলেন, এ উৎসবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে প্রতিটি নাটকের ভিন্ন বৈশিষ্ট্য থাকবে। দর্শকেরা বিভিন্ন ধরনের নাটকের স্বাদ পাবেন। তিনি আরও বলেন, ‘এ নাটকের নির্দেশনা দিতে গিয়ে একটা বিষয়ে কোনো টেনশন ছিল না, অর্থ জোগান। নিশ্চিন্তে কাজ করতে পেরেছি।’ পান্থ শাহরিয়ার বলেন, শুধু রাজধানীতে সীমাবদ্ধ না রেখে ঢাকার বাইরের দুই নির্দেশক শুভাশিস সিনহা ও শামীম সাগরকে প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে নাটককে ছড়িয়ে দেওয়ার বার্তা এসেছে।

এ আয়োজনে যুক্ত হয়েছে নাগরিকের একটি নতুন নাটক এবং মঙ্গলদ্বীপ ফাউন্ডেশন প্রযোজিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের অভিনীত নাটক। ২৯ নভেম্বর বিকেলে উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যায় থাকছে নাটকের প্রদর্শনী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদীপ প্রজ্বালন করবেন বন্যা মির্জা, সামিনা লুফা নিত্রা, তনিমা হামিদ, আইরিন পারভীন লোপা, সাধনা আহমেদ, হৃদি হক ও জ্যোতি সিনহা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেবেন উৎসবের আহ্বায়ক সারা যাকের। আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালেদ। বিশেষ অতিথি থাকবেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ এবং শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

চলছে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের নতুন প্রযোজনা ‘কালো জলের কাব্য’ নাটকের মহড়া। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া।
চলছে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের নতুন প্রযোজনা ‘কালো জলের কাব্য’ নাটকের মহড়া। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া।

বৈচিত্র্যময় নাটকে সজ্জিত উৎসবের প্রথম দিন মঞ্চস্থ হবে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের নতুন প্রযোজনা ‘কালো জলের কাব্য’। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন পান্থ শাহরিয়ার। উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ারের ‘মার্চেন্ট অব ভেনিসের’ ভাবানুবাদের নাটকটিতে অভিনয় করছেন আসাদুজ্জামান নূর। ৩০ নভেম্বর মঞ্চস্থ হবে শামীম সাগর নির্দেশিত সুনামগঞ্জের বন্ধন থিয়েটার ও প্রসেনিয়াম থিয়েটার যৌথ নির্মাণের ফসল ‘রাধারমণ’। আগামী ১ ডিসেম্বর মঞ্চস্থ হবে রতন সিদ্দিকী রচিত ও হৃদি হক নির্দেশিত নাগরিক নাট্যাঙ্গনের নাটক ‘আকাশে ফুইটেছে ফুল—লেটো কাহন’। ২ ডিসেম্বর প্রদর্শিত হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ও সাইদুর রহমান লিপন নির্দেশিত নাটক ‘অরূপ রতন’। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের উপন্যাসের নাট্যরূপে কাজী তৌফিকুল ইসলামের নির্দেশনায় ৩ ডিসেম্বর মঞ্চস্থ হবে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের নাটক ‘খোয়াবনামা’। আফ্রিকান গল্প অবলম্বনে শুভাশিস সিনহার নির্দেশনায় ৪ ডিসেম্বর মঞ্চস্থ হবে মণিপুরি থিয়েটারের নাটক ‘ও মনপাহিয়া’। সমাপনী দিন ৫ ডিসেম্বর মঞ্চস্থ হবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিল্পীদের অভিনীত নাটক ‘লটারি’। মোস্তাফিজ শাহীন নির্দেশিত নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রযোজনাটিতে উপদেষ্টার ভূমিকা রেখেছেন সারা যাকের।
৫ ডিসেম্বর উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে চার জ্যেষ্ঠ ফেরদৌসী মজুমদার, জ্যোৎস্না বিশ্বাস, লাকী ইনাম ও শিমূল ইউসুফকে সম্মাননা জানানো। নাট্যজন আবুল হায়াতের সভাপতিত্বে এদিন সম্মানিত অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল, নাট্যজন তারিক আনাম খান এবং নাট্যকার অধ্যাপক আবদুস সেলিম। ধন্যবাদ জানাবেন সারা যাকের।