ক্যানসারে আক্রান্ত এন্ড্রু কিশোরের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান

সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এন্ড্রু কিশোর। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এন্ড্রু কিশোর। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

: এন্ড্রুদা (এন্ড্রু কিশোর) কেমন আছেন?
: খুব একটা ভালো নেই। কেমো দেওয়ার পর শরীরটা বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে।
: এখন কোথায় আছেন?
: সিঙ্গাপুরে, বাসায়। হাসপাতালের কাছাকাছি একটা বাসা নিয়েছি। শুধু কেমোর দিনগুলোতে হাসপাতালে যেতে হয়।
: কয় দিন থাকতে হবে?
: ডাক্তার বলেছেন, এবার ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত থাকতে হবে।
: অনলাইনে দেখলাম, আপনার চিকিৎসা সহায়তায় তহবিল গঠনের আবেদন।
: ওরা একটা করেছে। আর পারছি না। ভয়ংকর খরচ। আরও অনেক দিন চিকিৎসা চালাতে হবে।

হোয়াটসঅ্যাপে চিরচেনা কণ্ঠ চিনতে কষ্ট হয়নি। তবে আওয়াজ একটু ক্ষীণ। সিঙ্গাপুর থেকে কথা বললেন অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা গানের গায়ক এন্ড্রু কিশোর। গত ৯ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে তিনি ঢাকা ছাড়েন। ৭৭ দিন ধরে তিনি সেখানে আছেন। গতকাল রোববার দুপুরে তিনি জানান, এ পর্যায়ের চিকিৎসার জন্য আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকতে হবে সেখানে।

এন্ড্রু কিশোরের কিডনি ও হরমোনজনিত সমস্যা ছিল। এ কারণে তাঁর ওজন হ্রাসসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। অ্যাড্রেনাল গ্লান্ড বড় হয়ে গেছে। পাশাপাশি তাঁর আরেকটি সমস্যা হলো জ্বর। প্রতিদিন তাঁর জ্বর হয়। এসব নিয়ে চিকিৎসকেরা ভাবনায় ছিলেন। কেন এভাবে জ্বর আসছে, তার সমাধান খোঁজেন চিকিৎসকেরা। এ ছাড়া তাঁর শরীরের কিছু নমুনা বায়োপসির জন্য পাঠানো হয় ল্যাবে। সে রিপোর্টের ভিত্তিতে চিকিৎসকেরা নিশ্চিত হন এন্ড্রু কিশোর ক্যানসারের ভুগছেন। এখন চলছে চিকিৎসা।

এবার জানা গেল, এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন দুই কোটিরও বেশি টাকা। এই ব্যয় সামাল দিতে অনলাইনে তহবিল গঠনের আবেদন করেছেন তাঁর স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু। ‘গো ফান্ড মি’ নামের ওয়েবসাইটে এটি করা হয়েছে। সেখানে লিপিকা এন্ড্রু জানান, শিল্পীর শরীরে ক্যানসারের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘকালীন এ চিকিৎসার তেমন কোনো পূর্বপ্রস্তুতি না নিয়েই সিঙ্গাপুরে যান তাঁরা। কিন্তু চিকিৎসকদের পরামর্শে দ্রুত তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। এখন তিনি সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ডা. লিমসুন থাইয়ের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন।

এন্ড্রু কিশোর। ছবি: সংগৃহীত
এন্ড্রু কিশোর। ছবি: সংগৃহীত

প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এন্ড্রু কিশোর নিজেই। হাসপাতালের চিকিৎসা বোর্ডের কাগজপত্র নিয়ে সিঙ্গাপুরপ্রবাসী বাংলাদেশিরা এই অনলাইন ফান্ডিংয়ের পেজ চালু করেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অসংখ্য কালজয়ী গানের এ গায়ক বললেন, ‘এমনটি আমি চাইনি। বাধ্য হয়ে এটি খুলতে হয়েছে। আর পারছি না।’

এ পর্যন্ত তাঁর ৩টি সাইকেলে ১২টি কেমোথেরাপি সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল ২৬ নভেম্বর থেকে কেমোথেরাপির পরবর্তী সাইকেল শুরু হবে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ৩টি সাইকেলে আরও ১২টি কেমোথেরাপি দেওয়া হবে। তাঁর এই চিকিৎসা সম্পন্ন করার জন্য আরও ২ কোটি ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন।

জানা গেছে, এন্ড্রু কিশোরকে যে কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছে, তার প্রতিটির দাম প্রায় ৯ লাখ টাকা। এরই মধ্যে কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এ শিল্পীর চিকিৎসায় তাঁর পরিবার কোটি টাকারও বেশি খরচ করেছে। প্রয়োজন আরও অনেক টাকার। এই অবস্থায় এখনই তাঁর পাশে দাঁড়াতে হবে।

সিঙ্গাপুরে যাওয়ার আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে এন্ড্রু কিশোরকে আমন্ত্রণ জানান। ওই সময় তিনি এন্ড্রু কিশোরের শারীরিক সমস্যার খোঁজ খবর নেন এবং তাঁর চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ টাকার চেক তুলে দেন। এ ছাড়া একটি বেসরকারি চ্যানেলের কর্তৃপক্ষ তাঁর চিকিৎসায় সহায়তায় আরও ১০ লাখ টাকা দিয়েছে।

গতকাল রোববার এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসার খরচ জোগাড়ের জন্য তহবিল গঠনের উদ্যোগ নজরে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনা হয়। কেউ কনসার্ট করে তহবিল গঠনের পরামর্শ দেন। আবার কেউ সরাসরি এই তহবিলে অর্থ দেওয়ার আহ্বান জানান। যেভাবেই হোক, চিকিৎসা শেষ করে এন্ড্রু কিশোর দেশে ফিরবেন, এটাই আশা করছেন সবাই।