অনিশ্চিত বিটিএসের ভবিষ্যৎ

সাত কিশোর একসঙ্গে পথচলা শুরু করেছিলেন অনেক দিন আগে। দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বিশ্বজুড়ে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে এখন তাঁদের কোটি কোটি ভক্ত। দুনিয়া তোলপাড় করা কোরীয় গানের দল ‘বিটিএস’–এর সেই সাত কিশোর এখন কৈশোর পেরিয়ে পরিপূর্ণ তরুণ। কিন্তু তারুণ্যে পা রাখতেই এক নতুন শঙ্কার উদয় হয়েছে। অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে বিটিএসের ভবিষ্যৎ। কী সেই অনিশ্চয়তা, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কী ভাবছে এই সংকট নিয়ে—এসব নিয়ে এবারের আয়োজন।

২০১২ সালের ১২ জুন যাত্রা শুরু করেছিল কোরীয় গানের দল বিটিএস। তখন এই দলের সাত সদস্যকে কেউ বলত ‘পুচকে’, কেউ আবার বলত ‘ছোকরা’। কিন্তু এই পুচকে ছেলেরাই একসময় ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন, হয়ে উঠলেন বিশ্বের প্রভাবশালী ও জনপ্রিয়তম গানের দল। দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্ম নেওয়া এ দল রাজত্ব কায়েম করল বিশ্বজুড়ে। কিন্তু যত সময় গড়াচ্ছে, বিটিএস আর্মিদের জন্য ততই এগিয়ে আসছে এক মহা দুঃসংবাদ।

সংকটে বিটিএস

অনেক দিন ধরেই গুজব শোনা যাচ্ছিল, ভাঙনের মুখে বিটিএস! সেই গুজব পুরোপুরি সত্যি না হলেও, দলটি কিন্তু সংকটের মধ্যেই আছে। কোরিয়াতে ২৮ বছরের মধ্যে একজন তরুণকে অবশ্যই দুই বছরের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণে যোগ দিতে হয়। এই প্রশিক্ষণ চলাকালে অন্য কোনো কাজে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না কোরীয় তরুণেরা। মূলত সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য কোরীয় তরুণদের প্রস্তুতি পর্ব ১৮ বছর বয়স থেকেই শুরু হয়ে যায়। ২০ বছর বয়সের মধ্যে তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা করা হয় যে, আদৌ সেই তরুণ সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য উপযুক্ত কি না। পরীক্ষায় পাস করলে ২৮ বছর বয়সের মধ্যে শুরু করে দিতে হয় ১৮ মাস দীর্ঘ বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ। তাই বিটিএসের সদস্যরা যদি এখন একে একে বা সবাই একসঙ্গে এই মিলিটারি সার্ভিসে যোগ দেন, তাহলে মঞ্চে লম্বা সময়ের জন্য একসঙ্গে দেখা যাবে না কোটি ভক্তের এই দলটিকে।

ছাড় পাবে না কেউ

বিটিএসের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য জিন। আগামী ডিসেম্বরে তাঁর বয়স হবে ২৮। এর মধ্যেই দলটিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কখন জিনকে ১৮ মাসের জন্য ছুটি দেওয়া হবে। কারণ, দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার গত বৃহস্পতিবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সামরিক প্রশিক্ষণ থেকে ছাড় পাবেন না বিটিএস সদস্যরা। এক বিবৃতিতে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার জানায়, পপ সংস্কৃতির শিল্পীরা দেশের সুনামের জন্য অবশ্যই অবদান রাখছেন। কিন্তু তারপরও তাঁদের প্রশিক্ষণ মওকুফ করা সরকারের ন্যায়বিচার ও রাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার সাধারণত এশিয়ান গেমস বা অলিম্পিকে স্বর্ণজয়ী ক্রীড়াবিদদের ক্ষেত্রেই সামরিক প্রশিক্ষণ মওকুফ করে থাকে। বছরে মাত্র ৪৫ জনের কম তরুণ এই প্রশিক্ষণ থেকে ছাড় পান। তাঁদের মধ্যে শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পীরাও অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। কিন্তু পপ শিল্পীরা এই মওকুফের আওতার বাইরে।

হাজারো প্রশ্নের বেড়াজাল

গত সপ্তাহে কোরীয় সরকারের বিবৃতি প্রকাশের পরপরই কে–পপ ভক্তমহলে জন্ম নিয়েছে অনেক অনেক প্রশ্ন। তাহলে কি আগামী বছর থেকেই একে একে বিটিএসের শিল্পীরা সামরিক প্রশিক্ষণে যোগ দিতে যাচ্ছেন? নাকি পুরো বিটিএস খালি করে একসঙ্গে সবাই চলে যাবেন মিলিটারি ক্যাম্পে? অসম্পূর্ণ বিটিএস কীভাবে চলবে? বিটিএস বিলীন করে শিল্পীরা কি তবে এখন একক ক্যারিয়ার গড়বেন? এমন প্রশ্নের বেড়াজালে এখন বিটিএস আর্মিরা জড়িয়ে আছেন। অন্যদিকে এ বিষয়ে দলটিও কোনো বিবৃতি প্রকাশ করছে না।

এতদিন অনেক অনেক প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে বিটিএস। কিন্তু এবারের সংকট আগের সব বাধাবিপত্তিকে হার মানিয়েছে। এবার দলটির সামনে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ। প্রশ্নের মুখে তাঁদের ভবিষ্যৎ। যদি রাষ্ট্রনীতি মেনে নিয়ে ভেঙেই যায় দলটি, তাহলে কি সবাই প্রশিক্ষণ শেষ করে আবার ফিরতে পারবেন মঞ্চে? আবার ফিরে পাবেন আকাশছোঁয়া এই জনপ্রিয়তা?

বিবিসি অবলম্বনে আনন্দ ডেস্ক