তনুশ্রী পদক পেলেন রেজা আরিফ

অনুষ্ঠানে রেজা আরিফের হাতে স্মারক তুলে দেন বিশ্ব আইটিআইয়ের সাম্মানিক সভাপতি নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
অনুষ্ঠানে রেজা আরিফের হাতে স্মারক তুলে দেন বিশ্ব আইটিআইয়ের সাম্মানিক সভাপতি নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

‘তনুশ্রী একটি অসমাপ্ত জীবন। সম্ভাবনার ফুলকি ঝরিয়ে অকালে তাঁর চলে যাওয়া আমাদের ব্যথিত করেছে। তারুণ্য ও সৃজনশীলতার প্রতীক তনুশ্রীকে অনাগতকালের তারুণ্য ও সৃজনশীলতার সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখার উদ্দেশ্যেই নাট্যধারা যোগ্যতম সৃজনশীল নাট্যতরুণের মূল্যায়ন, স্বীকৃতি, উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণায় প্রবর্তন করে তনুশ্রী পদক। নাট্যধারার মাঝে তনুশ্রী বেঁচে থাকবেন।

প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে নাট্যদল নাট্যধারা আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রয়াত নাট্যকর্মী তনুশ্রী স্মরণে এমন মন্তব্য করেন বক্তারা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপনে তিন দিনব্যাপী নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছে নাট্যধারা। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া উৎসবের উদ্বোধনী দিনে তনুশ্রী পদক প্রদান করা হয় তরুণ নাট্যকর্মী রেজা আরিফকে। শনিবার পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে চলবে এ উৎসব।

বৃহস্পতিবার প্রয়াত নাট্যকর্মীর স্মরণে ‘তনুশ্রী নাট্য প্রাণ বন্দনা’র সঙ্গে নাচ দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানটি। সন্ধ্যাকালীন অনুষ্ঠানে তনুশ্রী গায়েন স্মরণে তনুশ্রী বন্দনা পরিবেশন করেন কবিরুল ইসলাম এবং নৃত্যসংগঠন নৃত্যলোক। ঢাকের চিরায়ত বাজনার তালে তালে বেলুন উড়িয়ে ও প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে উৎসব উদ্বোধন করেন ২৭টি নাট্যসংগঠনের ২৭ গুণী নাট্যকর্মী। এরপর সন্ধ্যায় নাটক মঞ্চায়নের আগে অকালপ্রয়াত নাট্যশিল্পী তনুশ্রী গায়েন নিবেদিত তনুশ্রী পদক প্রদান করা হয়।

তনুশ্রী পদক পেলেন রেজা আরিফ। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
তনুশ্রী পদক পেলেন রেজা আরিফ। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

অনুষ্ঠানে রেজা আরিফের হাতে স্মারক তুলে দেওয়ার পাশাপাশি পরিয়ে দেওয়া হয় উত্তরীয়। প্রদান করা হয় ১৫ হাজার টাকার চেক। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ব আইটিআইয়ের সাম্মানিক সভাপতি নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান নাট্যজন লাকী ইনাম, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ ও উৎসবের পৃষ্ঠপোষক ফ্যাশন হাউস অঞ্জনসের কর্ণধার শাহীন আহমেদ। সম্মানিত অতিথি ছিলেন ভারতের নাট্যব্যক্তিত্ব তাপস ব্যানার্জি ও কলকাতার নাট্যব্যক্তিত্ব দেবাশীষ দত্ত। নাট্যধারার প্রধান সম্পাদক মাসুদ পারভেজের সভাপতিত্বে পদক প্রদান অনুষ্ঠান শেষে মঞ্চস্থ হয় সমতট নাট্যদলের পালানাটক ‘উজান ভাইটাল কইন্যা’। সমতট নাট্যদলের এই নাটকের রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন রতন হক। তিনি নাটকটির সংগীত রচনা, সুর ও পরিচালনাও করেছেন। নাটকে ‘কইন্যা’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাসরিন সুলতানা। এ ছাড়া বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাজুল হাসান, স্নিগ্ধা, সাইফ, নাসির, শান্ত, অন্ত ও রতন হক।

‘উজান ভাইটাল কইন্যা’ নাটকের উপজীব্য আবহমান বাংলার হাজার বছরের লোক সংস্কৃতি। প্রাচীন বাঙালি জাতি সত্তায় মিশে আছে চর্যাপদ, সংস্কৃত বচন, যবন সংহার বিষহরী, মনসামঙ্গল, দ্বিজ দ্বীপাবলা সংহার, রাশলীলা, গম্ভীরা, জারি, সারি, যাত্রাপালা, নাটক, পালাগান, কবিগান, বিচ্ছেদি গান, কারবালার কেচ্ছা, রাজা রাজরার কাহিনি, রূপকথার প্রবাদ, রূপক নাটক ইত্যাদি। প্রতিটি জনপদে, গ্রামগঞ্জে, উপসনায়, পূজা, অর্চনায়, পার্বণে, লোবানে মুখর হয় বাঙালি এসব নিয়ে। তারই ধারাবাহিকতায় ‘সমতট নাট্যদল’–এর প্রযোজনা ‘উজান ভাইটাল কইন্যা‘ নামক পালা নাটক। নাটকের গল্প আবর্তিত হয়েছে সাতচল্লিশের দেশভাগ থেকে একাত্তরের স্বাধীনতার পটভূমিতে।

উদ্বোধন শেষে অতিথিদের সঙ্গে নাট্যধারার সদস্যরা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
উদ্বোধন শেষে অতিথিদের সঙ্গে নাট্যধারার সদস্যরা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

তিন দিনব্যাপী নাট্যোৎসবের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার উৎসব শুরু হবে বিকেল চারটায়। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন ভারতের ত্রিপুরার নাট্যজন উত্তম সাহা এবং গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল চন্দন রেজা। এরপর অনুষ্ঠিত হবে ভারতের কলকাতার নাট্যদল ইফটা প্রযোজিত ‘ডিয়ার পাপা’ নাটকের দুটি প্রদর্শনী। নাটকটির প্রথম প্রদর্শনী হবে ৪টা ১৫ মিনিটে এবং দ্বিতীয় প্রদর্শনী ৭টা ১৫ মিনিটে।

শনিবার নাট্যোৎসবের সমাপনী দিনে আফসার আহমেদ এবং বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা সমাপনী বক্তব্য দেবেন। শেষে মঞ্চস্থ হবে নাট্যধারার নাটক ‘চার্লি’। জীবনদর্শন ও সামাজিক বাস্তবতাকে কেন্দ্র করে ফুটে উঠেছে ‘চার্লি’ নাটকের প্রধান চরিত্র চার্লির। জীবনের পথে সব ঘাত-প্রতিঘাতে হাসিমুখে বেঁচে থাকার মন্ত্র ছড়িয়েছে চরিত্র। লিটু সাখাওয়াতের রচনা ও নির্দেশনায় নাটকটির মাধ্যমইে শেষ হবে নাট্যধারার ২৭ বছরে পদার্পণ এবং সৃজনশীল নাট্যতরুণ তনুশ্রী পদক প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত নাট্যোৎসব।

সুস্থ নাট্যচর্চার লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালের ২৪ জুন গঠিত নয় নাট্যধারা। নাট্যধারা নাটক মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও প্রগতিশীল মূল্যবোধকে প্রাধান্য দেয়। নাট্যধারা নাটক মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও প্রগতিশীল মূল্যবোধকে প্রাধান্য দেয়।