দুখু মিয়ার গায়কি দক্ষতায় জেগে ওঠে লেটোর দল
ঢাকার নাট্যাঙ্গনে একের পর এক নাট্যোৎসব লেগেই আছে। একটা উৎসব শেষ হতে না-হতেই আরেক নাট্যোৎসব শুরু। সব মিলিয়ে জমজমাট এখন ঢাকার নাট্যাঙ্গন। এর মধ্যে ব্যতিক্রম নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের নতুনের উৎসব ২০১৯। ২৯ নভেম্বর শুরু হওয়া এই উৎসবে প্রতিদিন একটি করে নতুন নাটক দেখার আনন্দ মিলছে দর্শকদের।
নাটকগুলোর মধ্যে কোনোটি ক্ল্যাসিক, যা এ দেশের প্রেক্ষাপটে নিজস্ব আঙ্গিকে রূপায়ণ বা সাবটেক্সট নিয়ে কাজ। যেমন উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের নাটক ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’-এর সাবটেক্সট নিয়ে কাজ করেছেন পান্থ শাহরিয়ার ‘কালো জলের কাব্য’ নাটকে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ উপন্যাসের নাট্যরূপ ‘খোয়াবনামা’ নাটকে গ্রামবাংলার স্বপ্ন দেখা আবহমান মানুষের না বলা কথা আর তাদের স্বপ্নের ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন নাটকটির নির্দেশক কাজী তৌফিকুল ইসলাম।
নতুন নাটকের তালিকায় গতকাল যোগ হয়েছে ‘আকাসে ফুইটেছে ফুল-লেটো কাহন’। নাটকটি মঞ্চে এনেছে নাগরিক নাট্যাঙ্গন। রতন সিদ্দিকীর রচনায় এটি নির্দেশনা দিয়েছেন হৃদি হক। রোববার জাতীয় নাট্যশালায় মিলনায়তনভর্তি দর্শকের মাঝে দারুণ সাড়া ফেলে। এটি নাগরিক নাট্যাঙ্গনের ২৬তম প্রযোজনা।
নাটকটির গল্পে দেখা গেছে, একটি লেটো গানের দল আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মাতিয়ে রাখে চুরুলিয়া-আসানসোল। এরই মধ্যে একদিন ঘোষিত হয় বঙ্গভঙ্গ। বিভক্ত হয় বাংলা। জন্ম হয় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের। ইংরেজদের ষড়যন্ত্রে ও বিরোধে জড়িয়ে যায় বাঙালি হিন্দু-মুসলমান। বিষাক্ত হয়ে ওঠে কলকাতা, ঢাকা, বর্ধমান। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লালিত হাজার বছরের বাঙালি বিস্মিত। ১৯১১ সালে প্রাণান্তকর চেষ্টায় রোহিত হয় বঙ্গভঙ্গ। স্বস্তির বাতাস বয়ে যায়। কিন্তু তত দিনে গায়কের অভাবে লেটোর দল বিলুপ্ত হতে বসেছে। এমনি ক্রান্তিকালে লেটোর দলে যুক্ত হন চুরুলিয়ার হতদরিদ্র পরিবারের ছেলে দুখু মিয়া। তাঁর গায়কি দক্ষতায় পুনরায় জেগে ওঠে লেটোর দল। মেতে ওঠে চুরুলিয়া-আসানসোলের প্রান্তিক মানুষ।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় সাইদুর রহমান লিপনের নির্দেশনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অরূপরতন’ নাটকটি। নাটকটি পরিবেশন করে পরিসর নাট্যদল। বাউলের দর্শনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যে সাম্য ও সম্প্রীতির ভাবনা রয়েছে, তারই এক মিলিত রূপায়ণ দেখা যায় নাটক ‘অরূপরতন’-এ।
মঙ্গলবার উৎসবের পঞ্চম দিনে প্রাচ্যনাট মঞ্চস্থ করবে নতুন নাটক ‘খোয়াবনামা’। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ উপন্যাস নিয়ে ঢাকার মঞ্চে নাটকটি আনছে প্রাচ্যনাট। এর নাট্যরূপ দিয়েছেন সাখাওয়াত সজীব এবং নির্দেশনা দিচ্ছেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন।
উৎসবের শেষ দিন নাট্যাঙ্গনের চার নাট্যব্যক্তিত্বকে সম্মাননা জানাবে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়। উৎসব উদ্যাপন শেষে যদি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থের কিছু উদ্বৃত্ত থেকে যায়, তবে তা দুস্থ শিল্পীদের আর্থিক সাহায্যে ব্যয় করা হবে।