শহরতলীর শহরে

শহরতলীর সদস্যরা। ছবি: নীরব মাহমুদুল
শহরতলীর সদস্যরা। ছবি: নীরব মাহমুদুল

শহরতলীর শুরু

নামহীনভাবে শহরতলী ব্যান্ডের শুরুটা ২০০৪ সালের দিকে। স্বনামে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ব্যান্ড যাত্রা করে ২০০৫ সালে। শহরতলীর সদস্যরা নিজেদের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, তাঁরাই গড়েছেন দেশের প্রথম ‘থিয়েট্রিক্যাল রক ব্যান্ড’। গান, কবিতা, সংলাপ, মঞ্চ পরিবেশনা—সব মিলিয়েই থিয়েট্রিক্যাল রক। ১৬ বছরের কাছাকাছি বয়সের এই ব্যান্ডের গল্প শুনছিলাম। শুরু থেকেই শুরু করা যাক।

মিরপুরের পাঁচ কলেজবন্ধু, চায়ের টংয়ে আড্ডা দিতেন নিয়মিত। এভাবেই কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে আড্ডার ছলে মনে উঁকি দেয় ব্যান্ড শুরুর কথা। সবার কবিতার প্রতি বেশ আগ্রহ ছিল। তাই গান আর কবিতার সমন্বয়েই নিজেদের মতো করে লিখতে শুরু করেন শহরতলীর গান। ব্যান্ডের ভোকাল মিশু খান বলছিলেন কীভাবে নিজেদের কলেজেই গান করার মধ্য দিয়ে আস্তে আস্তে পরিচিত হতে থাকল শহরতলী। তাঁর ভাষায়, সে এক চমৎকার অ্যাডভেঞ্চার!

প্রথম একক অ্যালবাম

২০১০ সালের ডিসেম্বরে বরাবর শহরতলী নামে ব্যান্ডের প্রথম একক অ্যালবাম মুক্তি পায়। প্রথম অ্যালবামে দর্শকদের মনে বেশ বড় একটা জায়গা করে নেয় দলটি। এর তিন বছর পরই অপর পৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য নামের দ্বিতীয় অ্যালবাম নিয়ে আসেন তাঁরা। ‘জেলখানার চিঠি’, ‘আসাদের খোলা চিঠি’, ‘নীলিকা’, ‘প্রস্থান’, ‘বাঁধন’ গানগুলো উঠে আসে ভক্তদের পছন্দের তালিকায়।

থেমে থেমে চলা

২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে শহরতলী কিছুটা স্তিমিত থাকে। কিন্তু সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে গত বছর আবার জেগে ওঠে ব্যান্ড। নিয়মিত কনসার্ট আর তৃতীয় অ্যালবামের কাজও শুরু হয়ে যায়। গত ২৫ নভেম্বর দীর্ঘ বিরতির পর তৃতীয় অ্যালবামের প্রথম গান ‘শহরতলীর আকাশ’ মুক্তি দেয় দলটি।

নতুন গান নিয়ে শহরতলীর মিশু খান বলেন, ‘গানটি তিন বছর আগে লিখেছিলেন শেখ রানা ভাই। প্রতিদিনই ধর্ষণের খবর আমরা পত্রিকায় পড়ি, টিভিতে দেখি। কিছু ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলাপ হয়। আবার এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যেখানে প্রভাবশালী ব্যক্তি বা মহল জড়িত থাকলে বিচারের নামে শুরু হয় প্রহসন। এই সবকিছুর গল্পই আমরা এবারের গানে বলার চেষ্টা করেছি।’

ছয় বছর পর প্রিয় ব্যান্ডের নতুন গান, সেটা কেমন অনুভূতি, তা একজন ভক্তই ভালো বলতে পারবেন। বলে রাখা ভালো, নতুন অ্যালবামে থাকছে সাতটি গান। পরবর্তী গানটি মুক্তি পাবে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।

গানেই তৃপ্তি

শহরতলী ব্যান্ডের সবাই এখন শিক্ষাজীবনের ইতি টেনে হয়েছেন চাকরিজীবী। এত চাপের পরও কীভাবে ব্যান্ডে সময় দেন, জানতে চেয়েছিলাম বেজিস্ট রাজীবুর রহমানের কাছে। হাসিমুখে বললেন, ‘আমাদের দুজনের বাসায় ইনস্ট্রুমেন্টাল ফুল সেটআপ আছে। সপ্তাহে দুই দিন আমরা চর্চা করি। আমরা মিউজিক করতে ভালোবাসি। এটা আমাদের তৃপ্তি দেয়। এ জন্য যত চাপই থাকুক, আমরা সময় বের করে নিই।’

বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিক নিয়ে মিশু খান বলেন, ‘বর্তমানে ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। টিকিট কেটে কনসার্ট দেখার প্রচলন কমে গেছে, ফ্রি কনসার্টের দিকে মনোযোগী সবাই। তা ছাড়া ওপেন এয়ার কনসার্ট তো একেবারেই কম হয়। প্রচুর গান হচ্ছে, কিন্তু শ্রোতারা শুনছেন না। এর মধ্যে মিউজিক ভিডিও বানাতেই হবে, শ্রোতাদের দিক থেকে এ রকম একটা চাপ তো আছেই। অথচ আগে কিন্তু শুধু গানটাই শুনত সবাই।’

শহরতলীর সদস্যরা

সাধারণত শহরতলি বলতে বোঝায় কোনো বড় শহরের আশপাশের মাঝারি বা ছোট জনপদকে। আর সেই শহরতলির আকাশে-বাতাসে থাকে হাজারো গল্প, স্বপ্ন, ঘটনা। সেসব গল্পই বলে বেড়াচ্ছেন ব্যান্ডের ছয় সদস্য। ব্যান্ডের বর্তমান সদস্যরা হলেন মিশু খান (ভোকাল), সোহাগ (পারফর্মিং ভোকাল), রাজীবুর রহমান (বেজিস্ট), সুমন (গিটার), ইসনাত জাবির আহমেদ (ড্রাম), অতনু (কি-বোর্ড)।