তানজিন তিশার কোটির হ্যাটট্রিক

তানজিন তিশা। সাজ: অরা বিউটি লাউঞ্জ, ছবি: কবির হোসেন
তানজিন তিশা। সাজ: অরা বিউটি লাউঞ্জ, ছবি: কবির হোসেন

সেই সকালে শুটিংয়ে বের হন, বাড়ি ফেরেন রাতে। পথে যানজট পেয়ে বসলে তো রাতটাও প্রায় রাস্তাতেই কেটে যায়। তানজিন তিশা বাড়ি ফেরেন শুধু একটু স্বস্তিতে ঘুমাতে। মাসের ২৫ দিনই এভাবে কাটে তাঁর—অভিনয়ে, শুটিংয়ে, ব্যস্ততায়।

আড্ডার শুরুতেই তানজিন তিশা বলেন, ‘সামনে নতুন বছর, ভালোবাসা দিবস। এসব উত্সব ছাড়াও ঈদের কাজও শুরু হয়ে গেছে। প্রচুর চাপ। মাঝেমধ্যে মনে হয় আমি আর আমার পরিবারের নেই, দর্শকের হয়ে গেছি!’

যানজট থেকে ভালো কিছু

কিন্তু এই যে এত এত কাজ। একটি কাজ শেষ করেই পরের দিন আরেক নাটকের সেটে, এভাবে অভিনয়ের মানে প্রভাব পড়ে না? এ ব্যাপারে তিশার কথা হলো, অভিনয়ের মান ঠিক রাখতে নিজেকে কিছু নিয়মের ভেতর বন্দী রেখেছেন তিনি। বললেন, ‘একটি চরিত্র নিয়ে কাজ শুরুর আগে আমি কাজটা নিয়ে পড়াশোনা করি। পড়াশোনার জন্য কাজে লাগাই ঢাকার যানজটকে! বাসায় ফেরার পথে এত যানজট পড়ে যে সেই ফাঁকেই চরিত্র নিয়ে পড়াশোনা করে ফেলা যায়। বাসায় ফিরে শুধু সেই চরিত্রের কস্টিউম গোছাতে হয়। ব্যস! পরদিন সকালে শুটিংয়ে যাওয়ার পথে আবার সেই যানজটে বসেই করে নিই অনুশীলন।’

তানজিন তিশা
তানজিন তিশা

বড় পর্দার ডাক
‘আমি শুধু পুতুলের মতো সেজে থাকা নায়িকা হতে চাই না, আমি চাই নিজের অভিনয় তুলে ধরতে।’—একজন পাকা শিল্পীর মতো করেই এ কথা বললেন তানজিন তিশা। তাই তো অনেক দিন ধরেই সিনেমা থেকে ডাক আসার পরও কোনো ডাকেই সাড়া দেওয়া হয়নি তাঁর। তিশার চাওয়া একটাই, বর্তমানে টিভি নাটক ও ওয়েব কনটেন্টে যে গ্রহণযোগ্যতা তাঁর, সেই গ্রহণযোগ্যতা ঠিক রেখে সিনেমাতে কাজ করতে চান। তিশা বলেন, ‘সিনেমার সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না। তাই কোনো সিনেমার প্রস্তাব যখন আমার কাছে আসে, সবার আগে আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, সেই সিনেমাটির জন্য আমি যোগ্য কি না। আবার সিনেমাটি আমার জন্য যোগ্য কি না। এখন পর্যন্ত আমি এমন চিত্রনাট্য পাইনি, যার থেকে এই দুটি প্রশ্নের হ্যাঁ–সূচক জবাব পাওয়া যায়। এমন সিনেমার প্রস্তাব এলে অবশ্যই করব।’

নাটক ইউটার্ন, অভিনয়ের ইউটার্ন
মডেলিংয়েই ব্যস্ত সময় কাটত। ফাঁকে দু–একটি নাটকে অভিনয়। সেই সময় পরিচিতজনেরা তিশাকে নাটকে অভিনয়ের জন্য উত্সাহিত করতেন। এরপর ২০১৫ সালে রেদোয়ান রনির ইউটার্ন নাটকে অভিনয় করে তিশার অভিনয়জীবনের মোড় ঘুরে যায়। নাটকটি প্রচারিত হওয়ার পর তানজিন তিশাকে আলাদা করে চিনতে শুরু করেন দর্শক। সেই সাড়া দেখে নাটকে নিয়মিত হন এ অভিনেত্রী। তিশা বলেন, ‘ইউটার্ন আমাকে নাটকে নিয়মিত করেছে।’

তিন কোটির তিশা
তিশার হিসাবমতে, ২০১৯ সালে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০টি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। এর মধ্যে তিনটির কথা আলাদা করে বললেন তিনি। এ তিনটি হলো এক্স বয়ফ্রেন্ড, এক্স গার্লফ্রেন্ড অবুঝ দিনের গল্প। এই তিনটি নাটকে দর্শক ইউটিউবে দেখেছেন কয়েক কোটিবার। তিশা বলেন, ‘এত মানুষের ভালোবাসা পাওয়া আনন্দ প্রকাশ করার মতো নয়। আমাকে আরও ভালো কাজে উত্সাহিত করেছেন এই কোটি দর্শকেরা।’

ঘুরেফিরেই অপূর্ব ও নিশো

বর্তমান এক ডজনের বেশি নায়ক ছোট পর্দায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু গত এক বছরে তানজিন তিশা যতগুলো নাটকে অভিনয় করেছেন, এর অর্ধেকের বেশি নাটকে তাঁর সহশিল্পী অপূর্ব ও নিশো। ঘুরেফিরে একই মুখ। তিশা বলেন, ‘জুটির বিষয়টি তো আমাদের ওপর নির্ভর করে না। নাটকে শিল্পী নেওয়ার বিষয়টি প্রযোজকের আর চ্যানেলগুলোর চাহিদা। দর্শকের চাহিদা বুঝে তারা শিল্পী নির্বাচন করে।’

আছে প্রেমের গুঞ্জন

মাঝে নতুন প্রজন্মের এক অভিনেতার সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন উঠেছিল তিশার। সেই রেশ কাটতেই একের পর এক নাটকে জুটি হওয়ার কারণে ছোট পর্দার আরেক নায়কের সঙ্গে তিশার প্রেমের গুঞ্জন শুরু হয়। এ নিয়ে তিশা বলেন, ‘যখন কারও সঙ্গে জুটি বেঁধে একের পর এক কাজ দর্শকের ভালো লাগে, তখন এ ধরনের আওয়াজ তৈরি হয়। এ আর নতুন কী!’