'মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশকে দিয়ে সম্ভব'

‘হেড টু হেড চ্যালেঞ্জ’ পর্বে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ রাফাহ্ নানজিবা তোরসা। ছবি: ইউটিউব থেকে নেওয়া
‘হেড টু হেড চ্যালেঞ্জ’ পর্বে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ রাফাহ্ নানজিবা তোরসা। ছবি: ইউটিউব থেকে নেওয়া

মিস ওয়ার্ল্ডের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ৪ ডিসেম্বর ‘হেড টু হেড চ্যালেঞ্জ’ পর্বের ভিডিও শেয়ার করা হয়। সেখানে জড়ো হয়েছে কয়েক হাজার মন্তব্য। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইডেন, ভেনেজুয়েলা, ফ্রান্স ও অসংখ্য দেশের মানুষ মন্তব্য করেছেন সেখানে।

সবাই ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ রাফাহ্ নানজিবা তোরসার স্মার্টনেস, সাবলীল ইংরেজি উচ্চারণ আর প্রাণখোলা হাসির প্রশংসা করেছেন। কেবল বাংলাদেশেরই নয়, বিভিন্ন দেশের অসংখ্য মানুষ নিজেদের দেশের প্রতিযোগীকে রেখে রায় দিয়েছেন, তোরসাই ‘মিস ওয়ার্ল্ড ২০১৯’ খেতাবের যোগ্য। অনেকেই লিখেছেন, ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশকে দিয়ে সম্ভব’। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের সঙ্গে মিস ওয়ার্ল্ড ভেনেজুয়েলাকেও এই মুকুটের যোগ্য দাবিদার বলে মনে করছেন অনেকে।

বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় ‘হেড টু হেড চ্যালেঞ্জ’ পর্বের ১৯ নম্বর গ্রুপে বাংলাদেশের তোরসা ছাড়াও ছিলেন অ্যাঙ্গোলা, কিরগিজস্তান, ইথিওপিয়া ও সেনেগালের সুন্দরীরা। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে চলছে বাংলাদেশের তোরসার জয়জয়কার। মিস ওয়ার্ল্ডের প্রতিযোগীদের নিজস্ব ভিডিওকে ঘিরে হয়েছে হেড টু হেডের আড্ডা।

ভিডিওতে দেখা যায়, ১১ বছর বয়স থেকেই শিশুশিক্ষা নিয়ে কাজ করেন তোরসা। ২১ বছর বয়সী তোরসা দুবার জিতেছেন জাতীয় পুরস্কার। এর ভেতর একটি আবার সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন। সেই ছবিও যুক্ত করা হয়েছে ভিডিওতে।

‘হেড টু হেড চ্যালেঞ্জ’ পর্বে অন্য প্রতিযোগীদের সঙ্গে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ রাফাহ্ নানজিবা তোরসা। ছবি: ইউটিউব থেকে নেওয়া
‘হেড টু হেড চ্যালেঞ্জ’ পর্বে অন্য প্রতিযোগীদের সঙ্গে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ রাফাহ্ নানজিবা তোরসা। ছবি: ইউটিউব থেকে নেওয়া

সঞ্চালক ভ্যানেসা তাঁর কাছে প্রথমেই জানতে চান, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জাতীয় পুরস্কার নেওয়া নিশ্চয়ই সম্মানের? দেশি লাল-সাদা গামছা, প্রিন্টের সালোয়ার-কামিজ আর ছোট্ট টিপে স্মার্ট, সাবলীল তোরসা ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘অবশ্যই। বিজয়ের মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে এই পুরস্কার নিয়েছি। তিনি আমাদের জাতির পিতার সন্তান। ২০১০ সালে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে সেরা হিসেবে যখন পুরস্কার পেলাম, মনে হলো, আমাকে অনেক দূর যেতে হবে।’

লন্ডনে মিস ওয়ার্ল্ডের ক্যাম্পে অন্য প্রতিযোগীদের সঙ্গে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ রাফাহ্ নানজিবা তোরসা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
লন্ডনে মিস ওয়ার্ল্ডের ক্যাম্পে অন্য প্রতিযোগীদের সঙ্গে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ রাফাহ্ নানজিবা তোরসা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

তোরসা কাউকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন না। তাঁর মতে, মিস ওয়ার্ল্ডের মঞ্চে আসা প্রত্যেকে খুবই মেধাবী। তাই অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা না করে কেবল নিজেকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেন তোরসা। তাই প্রতি মুহূর্তে কেবল নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

‘তোমার সৌন্দর্যকে কীভাবে কাজে লাগাবে?’ সঞ্চালকের এই প্রশ্নের জবাবে তোরসা জানান, তিনি ১০ বছর ধরে সমাজকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করে তিনি আগামীর বিশ্ব গঠনে অংশ নিতে চান। কারণ, আজকের শিশুরাই নতুন বিশ্ব গড়বে। তাই শিশুদের গড়তে তোরসা ইতিমধ্যে তিনটি প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তোরসা বিশ্বাস করেন, একজন মানুষ যে পরিবর্তন দেখতে চায়, সবার আগে নিজের মধ্যে সেই পরিবর্তন আনা উচিত।


তোরসা বলেন, ‘মা-বাবা আমাকে শিখিয়েছেন, শিক্ষা পৃথিবীকে বদলাতে পারে না। শিক্ষার সেই ক্ষমতা নেই। কিন্তু শিক্ষা মানুষকে গড়তে পারে। আর মানুষ পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই পরিবর্তনের জন্য শিক্ষা জরুরি। আমি ওই শিশুদের সব সময় বলি, তোমরা সুন্দর, তোমরা মানবিক, তোমরা স্মার্ট। তোমরা সব সময় মুখে হাসি রাখবে।’

লন্ডনে মিস ওয়ার্ল্ডের ক্যাম্পে অন্য প্রতিযোগীদের সঙ্গে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ রাফাহ্ নানজিবা তোরসা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
লন্ডনে মিস ওয়ার্ল্ডের ক্যাম্পে অন্য প্রতিযোগীদের সঙ্গে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ রাফাহ্ নানজিবা তোরসা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

শেষ উপদেশটা তোরসা নিজেও মেনে চলেন। সব সময় মুখে হাসি ধরে রাখতে জানেন তিনি। তোরসার প্রায় চার মিনিটের সেই বক্তব্য শুনে মুগ্ধ সঞ্চালক বলেছেন, ‘কী দুর্দান্ত অনুপ্রেরণাদায়ক বক্তব্য। বিশ্ব বদলে দেওয়া...’ হাসতে হাসতে তোরসা বলেছেন, ‘অবশ্যই।’ যুক্তরাজ্যের লন্ডনে টেমস নদীর তীরে টাওয়ার ব্রিজের সামনে ‘হেড টু হেড চ্যালেঞ্জ’ পর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এই বিভাগের ফল থেকেই চূড়ান্ত হবে শীর্ষ ৪০ প্রতিযোগী।

‘হেড টু হেড চ্যালেঞ্জ’ বিভাগে প্রতিযোগীদের ভোট দেওয়া যাচ্ছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, মবস্টার ও মিস ওয়ার্ল্ডের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে।

‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ রাফাহ্ নানজিবা তোরসা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ রাফাহ্ নানজিবা তোরসা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

এদিকে অবসরে বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার দিয়েছেন তোরসা। এ ছাড়া লন্ডনের হাউস অব লর্ডসসহ ঘুরে বেড়িয়েছেন শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। মিস ইংল্যান্ডকে দিয়ে বাংলায় কথা বলিয়েছেন। সেই ভিডিও শেয়ার করেছেন ইনস্টাগ্রামে।

১৪ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের লন্ডনে এক্সেল এরেনায় বসবে ৬৯তম মিস ওয়ার্ল্ডের জমকালো আসর। সেদিন জানা যাবে, কে হাসবেন শেষ হাসি। নির্ধারিত হবে কার মাথায় শোভা পাবে এবারের বিশ্ব সুন্দরীর মুকুট। নতুন মিস ওয়ার্ল্ডের মাথায় মুকুট পরিয়ে দেবেন বর্তমান বিশ্ব সুন্দরী মেক্সিকোর ভ্যানেসা পন্তে দেলেওন।

শিশুদের সঙ্গে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ রাফাহ্ নানজিবা তোরসা। ছবি: ইউটিউব থেকে নেওয়া
শিশুদের সঙ্গে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ রাফাহ্ নানজিবা তোরসা। ছবি: ইউটিউব থেকে নেওয়া

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের শিক্ষার্থী রাফাহ্‌ নানজিবা তোরসা। পাশাপাশি আবৃত্তি, নৃত্য ও সামাজিক কাজ করছেন। ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ হওয়ার পর প্রথম আলোকে তিনি বলেছেন, ‘মিস ওয়ার্ল্ডের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে ভালোবেসেই প্রতিযোগিতায় এসেছি। নিজেকে আগে মানবতার সেবায় নিয়োজিত করতে চাই। দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উপস্থাপন করা আমার মূল লক্ষ্য। বিনোদন অঙ্গনে কাজ হয়তো করব, তবে এখনই না। বিনোদন অঙ্গন আমার দ্বিতীয় বিকল্প।’