ছোট ছবির আন্তর্জাতিক উৎসব শনিবার থেকে

জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা। ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা। ছবি: সংগৃহীত

কাল শনিবার শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব। সম্প্রতি নির্মিত বিশ্বের ৪৫টি দেশের ২০০ চলচ্চিত্র নিয়ে এই উৎসব হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা। অনুষঙ্গ হিসেবে থাকবে স্মারক বক্তৃতা, জাতীয় সেমিনার, চলচ্চিত্র নির্মাণ কর্মশালা ও বিশেষ প্রদর্শনী। থাকবে প্রতিযোগিতা বিভাগের পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান। চলচ্চিত্রভিত্তিক এই বৃহৎ কর্মযজ্ঞে অংশ নেবেন বিশ্বের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা ও ব্যক্তিত্বরা।

এবারের ১৫তম উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে স্বাধীন চলচ্চিত্র ধারার অন্যতম গুণী নির্মাতা ও চলচ্চিত্র সম্পাদক প্রয়াত সাইদুল আনাম টুটুল, বাংলাদেশে শৈল্পিক চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ খসরুর স্মৃতির প্রতি।

শনিবার বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠিত হবে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তনে। ৭ থেকে ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় এই উৎসবের কেন্দ্র হিসেবে থাকছে কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তন, জাতীয় জাদুঘরের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তন, জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তন এবং একাডেমির সেমিনার কক্ষে।

উৎসবের পরিচালক এন রাশেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, বাংলাদেশসহ ৪৫টি দেশের অন্তত দুই শতাধিক স্বল্প ও মুক্ত দৈর্ঘ্যের ছবি উৎসবের বিভিন্ন বিভাগে দেখানো হবে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগের নির্বাচিত কাহিনি ও প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনীর পাশাপাশি থাকবে সাধারণ বিশ্ব চলচ্চিত্র বিভাগ, বাংলাদেশি স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রতিযোগিতার বিভাগে (অনূর্ধ্ব ১৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবি) তারেক শাহরিয়ার ইনডিপেনডেন্ট শটস, নেটপ্যাক জুরি অ্যাওয়ার্ড, কান্ট্রি ও রিজিয়ন ফোকাস, পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য দুটি ফিল্ম স্কুলের নির্বাচিত চলচ্চিত্র, রেট্রোস্পেকটিভ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, ট্রিবিউট প্রদর্শনী, সাম্প্রতিক নির্মিত এশিয়ান মুক্ত দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী ছাড়াও উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ আলমগীর কবির স্মারক বক্তৃতা, তিনটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও একটি মাস্টার ক্লাস।

এবারের উৎসবে ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্য রচয়িতা কমল স্বরূপকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি আলমগীর কবির স্মৃতি বক্তৃতা উপস্থাপন করবেন। উৎসব পরিচালক এন রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রথিতযশা চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের যোগ্য শিষ্য প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা কুমার সাহানীর চারটি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী ও তাঁর মিজসিনবিষয়ক মাস্টার ক্লাসটিও এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

এবারের উৎসবে আন্তর্জাতিক জুরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা কমল স্বরূপ, ব্রিটিশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র উৎসবের নির্বাচক নামান রামাচন্দ্রন, লিথুয়ানিয়ার চলচ্চিত্র নির্মাতা লাইনাস মিকু, ইরানের চলচ্চিত্র নির্মাতা সাঈদ নেজাতি, ভারতের বিশিষ্ট প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা অনির্বাণ লও ও বাংলাদেশের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিক্ষক জাহিদুর রহিম। এ ছাড়া নেটপ্যাক জুরি অ্যাওয়ার্ডে নেটপ্যাকের জুরি হিসেবে উপস্থিত হবেন হংকংয়ের চলচ্চিত্র তাত্ত্বিক স্যাম হো, তাজিকিস্তানের চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অধ্যাপক সারাফোত আরাবোভা ও বাংলাদেশের নেটপ্যাক সদস্য, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিক্ষক জাকির হোসেন।

শনিবার বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠিত হবে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তনে
শনিবার বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠিত হবে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তনে

উৎসবে পুরস্কারের মূল্য হিসেবে থাকছে শ্রেষ্ঠ আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র এক হাজার মার্কিন ডলার, শ্রেষ্ঠ আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্রের জন্য এক হাজার মার্কিন ডলার, শুধু বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রতিযোগিতা বিভাগ (অনূর্ধ্ব ১৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের) তারেক শাহরিয়ার বেস্ট ইনডিপেনডেন্ট শর্ট ২৫ হাজার টাকা ও নেটপ্যাক জুরি অ্যাওয়ার্ডে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট পাবেন বিজয়ীরা। এ ছাড়া প্রতিটি পুরস্কারের সঙ্গে বিজয়ীদের দেওয়া হবে প্রখ্যাত শিল্পী কাইউম চৌধুরীর ডিজাইন করা একটি সুদৃশ্য উৎসব স্মারক ও সার্টিফিকেট।

অন্যান্য বছরের মতো এবারও ১৫তম উৎসবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আজীবন অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একজন বাংলাদেশি ব্যক্তিত্বকে উৎসবের পক্ষ থেকে ‘হীরালাল সেন আজীবন সম্মাননা স্মারক’ দেওয়া হবে। বাংলাদেশের খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চলচ্চিত্র সংগঠক মোরশেদুল ইসলাম এবার এ স্মারক পাবেন। 

উৎসব সামনে রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উৎসব সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ। আরও উপস্থিত ছিলেন আয়োজক সংগঠন বাংলাদেশ শর্টফিল্ম ফোরামের সভাপতি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা জাহিদুর রহিম, কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চলচ্চিত্র সংগঠক এনায়েত করিম প্রমুখ। এ সময় জানানো হয়, বাংলাদেশ শর্টফিল্ম ফোরামের উদ্যোগে ১৯৮৮ সালে প্রথম আয়োজন করা হয় মুক্তধারার চলচ্চিত্রের এই উৎসব। এরপর থেকে নিয়মিত দ্বিবার্ষিক ভিত্তিতে এটি আয়োজিত হয়ে আসছে। এই উৎসবই দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম চলচ্চিত্র উৎসব হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আসছে।