দুই বাংলার নাটক নিয়ে মেলা জমেছে

উৎসবমুখর পরিবেশে গতকাল শুক্রবার ‘দুই বাংলার নাট্যমেলা ২০১৯’ শুরু হয়। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
উৎসবমুখর পরিবেশে গতকাল শুক্রবার ‘দুই বাংলার নাট্যমেলা ২০১৯’ শুরু হয়। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

আগের রাতে একটি উৎসব শেষ হলো। রাতারাতি পাল্টে গেল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সাজসজ্জা। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এখানে দেখা মিলল নতুন সাজ। মূল মিলনায়তনের প্রবেশপথে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশাল প্রতিকৃতি। নিচে ঝলমলে আলোয় বাংলাদেশ ও ভারতের নয়টি নাটকের পোস্টার আর নানা রঙিন কাগজে দারুণ সাজ। এক উৎসবের পরের সন্ধ্যায় গতকাল শুরু হলো নতুন আরেক উৎসব। নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর আয়োজন করেছে ‘দুই বাংলার নাট্যমেলা ২০১৯’। ‘আমি বাংলায় ভালোবাসি, আমি বাংলাকে ভালোবাসি’ স্লোগানে এবার মেলায় ‍দুই বাংলার নাটকের নয়টি দল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে আছে বাংলাদেশের পাঁচটি এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লির চারটি দল।

গতকাল বিকেলে নাট্যমেলা শুরু হয়েছে জাতীয় নাট্যশালার বাইরে খোলা প্রাঙ্গণ থেকে। এ সময় লবির নিচে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ থেকে ভেসে আসে দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের সুর। সেই সুরের সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে নাট্যকর্মী ও দর্শকদের দারুণ উপস্থিতি। ‘দুই বাংলার নাট্যমেলা ২০১৯’ শিরোনামের এই উৎসব উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। প্রাঙ্গণেমোরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নূনা আফরোজের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস, পশ্চিমবঙ্গের নাট্যকর্মী প্রকাশ ভট্টাচার্য, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ প্রমুখ।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয় তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ উদ্যোগে ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কের একটা নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। তবে এর শুরু সেই একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়। স্বাধীনতাযুদ্ধে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীও রক্ত দিয়েছে। যার কারণে তাদের সঙ্গে আমাদের রয়েছে রক্তের সম্পর্ক। সংস্কৃতির আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে এই সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশা রাখি।’ তিনি আরও বলেন, ‘নাটকের মাধ্যমে আমার গণমানুষের সামনে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে দুই বাংলার সংস্কৃতির বিনিময় ঘটছে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘সংস্কৃতি ও বন্ধুত্বের নানা দিকে ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক মিল রয়েছে। সংস্কৃতির বিনিময়ের মধ্য দিয়ে এই বন্ধুত্ব আরও পাকাপোক্ত হবে।’

ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস বলেন, ‘আজ এই দিনে ভারত স্বীকৃতি দিয়েছিল বাংলাদেশকে। আমি উপস্থিত সবাইকে বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৪তম বার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানাচ্ছি; সেই সঙ্গে এই উৎসবের সাফল্য কামনা করছি। এ ধরনের উৎসব আরও বেশি বেশি হওয়ার দরকার।’

এর আগে উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার শুরুতে অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন প্রাঙ্গণেমোরের নাট্যকর্মীরা। এরপর ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা’, ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি’, ‘আমি বাংলায় গান গাই’, ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’, ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’, ‘মাগো ভাবনা কেন’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’, ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’, ‘এই দেশেতে জন্ম আমার’ ও জাতীয় সংগীতের কিছু অংশ নিয়ে তৈরি গানের সঙ্গে কোরিওগ্রাফি পরিবেশন করেন আয়োজক নাট্যদলের কর্মীরা।

উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় গৌতম সরকার নির্দেশিত কলকাতার প্রাক্সিস নাট্যদলের নাটক ‘আর্ট’। ছবি: প্রথম আলো
উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় গৌতম সরকার নির্দেশিত কলকাতার প্রাক্সিস নাট্যদলের নাটক ‘আর্ট’। ছবি: প্রথম আলো

উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় গৌতম সরকার নির্দেশিত কলকাতার প্রাক্সিস নাট্যদলের নাটক ‘আর্ট’। প্রথম দিনের নাটকটি সাড়া ফেলে ঢাকা দর্শকের মধ্যে। ছিমছাম সুন্দর মঞ্চে মাত্র তিনজন শিল্পী এগিয়ে নিয়ে যান নাটকের গল্প। নাটকের গল্প কিংবা বিষয়বস্তু একটা পেইন্টিং কেনা নিয়ে তিন বন্ধুর কথোপকথন, ঝগড়া। রিয়েলিস্টিক ফর্মের সংলাপনির্ভর অভিনয় দর্শক পছন্দ করেছে।

প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটায় নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে ১৪ ডিসেম্বর শেষ হবে নয় দিনের এই নাট্যোৎসব। ১৩ ডিসেম্বর প্রদান করা হবে ‘প্রাঙ্গণেমোর নাট্যযোদ্ধা সহযোদ্ধা সম্মাননা’। ব্যতিক্রমী এই সম্মাননায় ভূষিত হবেন নাট্যজন মামুনুর রশীদের স্ত্রী গওহর আরা চৌধুরী, মঞ্চসারথি আতাউর রহমানের স্ত্রী শাহিদা রহমান এবং ঋত্বিক নাট্যপ্রাণ লিয়াকত আলী লাকীর স্ত্রী কৃষ্টি হেফাজ।

আসরে ১৩ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় ‘থিয়েটারের সংকট-দর্শক না ভালো নাটক’ শিরোনামে আয়োজন করা হয়েছে মুক্ত আলোচনার। এ বিষয়ে ধারণাপত্র পাঠ করবেন হাসান শাহরিয়ার এবং মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বপন রায়, মলয় ভৌমিক, আহমেদ ইকবাল হায়দার, রতন সিদ্দিকী, মোহাম্মদ আলী হায়দার, রহমান রাজু। মুক্ত আলোচনায় সঞ্চালক হিসেবে থাকবেন অনন্ত হিরা।

উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

উৎসবে আজ শনিবার মঞ্চস্থ হবে কলকাতার দল নান্দীপটের নাটক ‘আবৃত্ত’। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রকাশ ভট্টাচার্য। আগামীকাল রোববার প্রাঙ্গণেমোর মঞ্চস্থ করবে অনন্ত হিরা নির্দেশিত নাটক ‘হাছনজানের রাজা’। সোমবার প্রাচ্যনাট মঞ্চায়ন করবে তৌফিকুল ইসলাম ইমনের নির্দেশনায় নতুন নাটক ‘পুলসিরাত’।

১০ ডিসেম্বর কলকাতার রসিকতা মঞ্চস্থ করবে অভিজ্ঞান ভট্টাচার্য নির্দেশিত ‘জ্যান্ত হ্যামলেট’। ১১ ডিসেম্বর ফয়েজ জহিরের নির্দেশনায় বিবর্তন যশোর নিয়ে আসবে নাটক ‘কৈবর্তগাথা’। একইভাবে পরদিন আরণ্যক নাট্যদল মঞ্চস্থ করবে শাহ আলম দুলালের নির্দেশনায় আলোচিত নাটক ‘ময়ূরসিংহাসন’। ১৩ ডিসেম্বর লোক নাট্যদল (সিদ্ধেশ্বরী) মঞ্চায়ন করবে লিয়াকত আলী লাকী নির্দেশিত সাম্প্রতিক প্রযোজনা ‘আমরা তিনজন’।

উদ্বোধনী দিনে একটি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
উদ্বোধনী দিনে একটি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

উৎসবের সমাপনী দিনে দিল্লির দল গ্রিনরুম থিয়েটার প্রযোজিত ও অঞ্জন কাঞ্জিলাল নির্দেশিত নাটক ‘বিসমিল্লা’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রাঙ্গণেমোর আয়োজিত এবারের ‘দুই বাংলার নাট্যমেলা ২০১৯’।