পর্দা উঠল আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসবের

জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৯। ছবি: প্রথম আলো
জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৯। ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৯। এবারের উৎসবে ৪৫টি দেশের ২০০ চলচ্চিত্র থাকছে। ছোট এবং মুক্ত চলচ্চিত্রের এই উৎসবে শুধু চলচ্চিত্র নয়, পাশাপাশি থাকবে স্মারক বক্তৃতা, জাতীয় সেমিনার, চলচ্চিত্র নির্মাণ কর্মশালা ও বিশেষ প্রদর্শনী। থাকবে প্রতিযোগিতা বিভাগের পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান। চলচ্চিত্রভিত্তিক এই বৃহৎ কর্মযজ্ঞে অংশ নিচ্ছেন বিশ্বের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা ও ব্যক্তিত্বরা।

রাজধানীর গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে সপ্তাহব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম। ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনের পাশাপাশি জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তন, জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে প্রদর্শিত হবে উৎসবের চলচ্চিত্র। উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুল, আলোকচিত্রী ও চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ খসরুকে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাধীন চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য হীরালাল সেন আজীবন সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয় নির্মাতা ও চলচ্চিত্র সংগঠক মোরশেদুল ইসলামকে।

শনিবার বিকেলে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে মননশীলতার উৎকর্ষ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে চিত্তবিনোদনের উন্নয়ন করতে হবে। বাড়াতে হবে মননশীলতার উৎকর্ষ। তা না হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন একা দেশের মানুষের উপকারে আসবে না। এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ সংস্কৃতির দেশ। মাঝে কিছুদিন এতে ভাটা পড়েছিল। কিন্তু আবার জেগে উঠেছে। আগে আমরা অনেক সিনেমা দেখতাম। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ভাটা পড়ে যায়। এখন সে অবস্থা থেকে উত্তরণ হচ্ছে।’ তিনি সামাজিক মূল্যবোধ বাড়াতে সাহায্য করে এমন চলচ্চিত্র বানানোর অনুরোধ জানান পরিচালকদের প্রতি। উৎসবের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন শর্ট ফিল্ম ফোরামের সভাপতি জাহিদুর রহিম অঞ্জন, উৎসব পরিচালক এন রাশেদ চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক কুমার ঘটকের শিষ্য ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা কুমার সাহানী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্য রচয়িতা কমল স্বরূপ।

উদ্বোধনী মঞ্চে অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত
উদ্বোধনী মঞ্চে অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

উদ্বোধনী দিনে প্রদর্শিত হয় পাঁচটি চলচ্চিত্র। এবারের উৎসবে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগ, বাংলাদেশি স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিযোগিতার বিভাগ, তারেক শাহরিয়ার ইনডিপেনডেন্ট শটস, নেটপ্যাক জুরি অ্যাওয়ার্ড, কান্ট্রি ও রিজিয়ন ফোকাস, পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য দুটি ফিল্ম স্কুলের নির্বাচিত চলচ্চিত্র, রেট্রোস্পেকটিভ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, ট্রিবিউট প্রদর্শনী, সাম্প্রতিক নির্মিত এশিয়ান মুক্ত দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের প্রদর্শিত হবে। উৎসবে আলমগীর কবির মেমোরিয়াল লেকচার উপস্থাপন করবেন ভারতের প্রখ্যাত স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা কমল স্বরূপ। ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা কুমার সাহানী তাঁর চারটি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী দেখাবেন এবং মাস্টার ক্লাসে অংশ নেবেন। এবারের উৎসবে প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে ইরানের আব্বাস কিয়ারোস্তামী, আমেরিকার মায়া ডেরেন, জোনাস মেকাস, ফ্রান্সের এগনেস ভার্দা, গ্রিসের থিও অ্যাঞ্জেলোপোলাস, ভারতের মৃণাল সেনসহ বাংলাদেশের সাইদুল আনাম টুটুল ও চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেনের স্মৃতি স্মরণে ‘বিশেষ ট্রিবিউট’ শীর্ষক চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।

শনিবার বিকেলে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ছবি: প্রথম আলো
শনিবার বিকেলে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ছবি: প্রথম আলো

উৎসবে আন্তর্জাতিক জুরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা কমল স্বরূপ, ব্রিটিশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র উৎসবের নির্বাচক নামান রামাচন্দ্রন, লিথুয়ানিয়ার চলচ্চিত্র নির্মাতা লাইনাস মিকু, ইরানের চলচ্চিত্র নির্মাতা সাঈদ নেজাতি, ভারতের বিশিষ্ট প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা অনির্বাণ লও ও বাংলাদেশের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিক্ষক জাহিদুর রহিম। এ ছাড়া নেটপ্যাক জুরি অ্যাওয়ার্ডে নেটপ্যাকের জুরি হিসেবে উপস্থিত হবেন হংকংয়ের চলচ্চিত্র তাত্ত্বিক স্যাম হো, তাজিকিস্তানের চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অধ্যাপক সারাফোত আরাবোভা ও বাংলাদেশের নেটপ্যাক সদস্য, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিক্ষক জাকির হোসেন।

উৎসবের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বক্তব্য দেন। ছবি: ফেসবুক থেকে
উৎসবের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বক্তব্য দেন। ছবি: ফেসবুক থেকে

রোববার উৎসবের দ্বিতীয় দিন। এদিন বিকেল পাঁচটা থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারে দেখানো হবে লিথুনিয়ার ‘ব্রিজেস’, ভারতের ‘রায়’, ‘আ জার্নি বিহাইন্ড দ্য লেন্স’, ইন্দোনেশিয়ার ‘ফ্রুটস ফ্রম হ্যাভেন’, চেক রিপাবলিকের ‘ক্লায়েন্ট ওরিয়েন্টেড অ্যাসাসিনস’, বাংলাদেশের ‘বৃক্ষমাতা’, ‘নাথিং ইজ আনসারড’। সন্ধ্যা সাতটা থেকে ভারতের ‘অ্যান্ড হোয়াট ইজ দ্য সামার সেয়িং’, ‘প্রেসিডেন্টস হর্স’, ভেনেজুয়েলার ‘মারমেইড আইল্যান্ড’, দক্ষিণ কোরিয়ার ‘গ্র্যান্ড জেটি’, বাংলাদেশের ‘কিডুলথুড’, ‘সাম অ্যানসিয়েন্ট ট্রিস’। জাতীয় জাদুঘরে দেখানো হবে বেলা তিনটায় গ্রিসের ‘এটারনিটি অ্যান্ড আ ডে’, বিকেল পাঁচটায় মিসরের ‘ইউ কাম ফ্রম ফার অ্যাওয়ে’, সন্ধ্যা সাতটায় বাংলাদেশের ‘বুড়িগঙ্গা ৭১’।

বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের উদ্যোগে ১৯৮৮ সালে প্রথম আয়োজন করা হয় মুক্তধারার চলচ্চিত্রের এই উৎসব। এরপর থেকে নিয়মিত দ্বিবার্ষিক ভিত্তিতে এটি আয়োজিত হয়ে আসছে। এই উৎসবই দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম চলচ্চিত্র উৎসব হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আসছে।