নির্মাতা কুমার সাহানীর দরবারে

নির্মাতাদের সঙ্গে আলাপে কুমার সাহানী (বাঁয়ে চেয়ারে) ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিমলি ভট্টাচার্য (ডানে চেয়ারে)।  ছবি: প্রথম আলো
নির্মাতাদের সঙ্গে আলাপে কুমার সাহানী (বাঁয়ে চেয়ারে) ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিমলি ভট্টাচার্য (ডানে চেয়ারে)। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকায় গত শনিবার থেকে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ শর্টফিল্ম ফোরামের আয়োজনে ১৫তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব। এ উপলক্ষে মুক্ত ও সমান্তরাল সিনেমার দুই পুরোধা-পুরুষ কুমার সাহানী ও কমল স্বরূপের দেখা মিলল ঢাকায়। দুজনেই দেশ-জাতির গণ্ডি ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছেন বিশ্ব মুক্ত সিনেমার যুগপুরুষ।

উৎসবে কমল স্বরূপের রেট্রোস্পেক্টিভে দেখা মেলে কুমার সাহানীর সঙ্গে। সেখানে সিনেমা দেখার বিরতিতে কুমার সাহানীকে ঘিরে থাকেন কিছু গুণমুগ্ধ মানুষ আর সিনেমার শিক্ষার্থী। এ সময় প্রথম আলোও কুমার সাহানীর দরবারে হাজির। জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশ, তাঁর সিনেমার অভিজ্ঞতা এবং এই সময়ের চলচ্চিত্র নিয়ে।

বলে রাখা ভালো, সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন ও ঋত্বিক ঘটকেরা যে ধরনের চলচ্চিত্র বানিয়েছেন, কুমার তাঁদের উত্তরসূরি। ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ায় (পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট) পড়ার সময় সরাসরি শিক্ষক হিসেবে কুমার সাহানী পেয়েছেন ঋত্বিক ঘটককে। দুজনের সম্পর্কটা তাই গুরু-শিষ্যের। কুমার সাহানীর সঙ্গে কথা বললে ঋত্বিক ঘটক উঠে আসবেন, এ-ই স্বাভাবিক। এই নির্মাতা বানিয়েছেন মায়া দর্পণ, তরঙ্গ, কসবার মতো ছবি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চার অধ্যায় নিয়েও তাঁর চলচ্চিত্র আছে। তাই প্রশ্নের শুরুতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চলে এলেন অনায়াসে।

কুমার সাহানীকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘এই ভূমি রবীন্দ্রনাথের। চার অধ্যায় নিয়ে সিনেমা বানিয়েছেন। ঋত্বিক ঘটক এখানেই বানিয়েছেন তিতাস একটি নদীর নাম। এই ঢাকা কেমন?’ কুমার বলেন, ‘ঢাকার সঙ্গে আমার “বিশেষ” সম্পর্ক। ঋত্বিকদা এখানকারই ছিলেন। তিনি আমার গুরু। আমি যতবার ঢাকায় এসেছি, কেউ আমাকে পর ভাবেনি। এমনভাবে আপন করে নিয়েছে, যেন আমি এখানেই জন্মেছি। কারণ, ঋত্বিকদা আর এই দেশ “কমন” সংস্কৃতি ধারণ করে। আর আমি ঋত্বিকদার সঙ্গে কমন ভাবনা শেয়ার করি।’

এখানকার সিনেমার সম্ভাবনা ও সংকট নিয়ে কুমার সাহানী বলেন, ‘উই অল নিড আ লট অব মানি। টাকা হলেই সমস্যা কেটে যাবে। ভালো সিনেমা হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। এই সময়ে সিনেমার সংকট সফটওয়্যার, যা কম্পিউটার প্রকৌশলী বানান। তাঁরা চলচ্চিত্রদ্রষ্টা নন। ফলে যে ছবি নির্মাতা দেখেন, তা বানানো সফটওয়্যার দিয়ে অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। শুরুর দিকেই বিশ্বমঞ্চের সেরা টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। ফরাসি নির্মাতা রবের ব্রেসোঁর চিত্রগ্রাহক গিলা ক্লোকির কাছ থেকে শিখেছি, যা আমার চিত্রগ্রাহক কে কে মহাজনের সঙ্গে মিলে করার চেষ্টা করেছি।’

কুমার সাহানী তাঁর শিল্পভাবনা নিয়ে বলেন, ‘বংশী চন্দ্রগুপ্ত আমার ছবিতে কাজ করেছেন। তিনি সত্যজিৎ রায়ের “পথের পাঁচালী”তে একমাত্র পেশাদার ক্রু ছিলেন। তিনি নন্দিত নির্মাতা জঁ রেনোয়ার সঙ্গেও কাজ করেছেন। আমি বংশীদার শৈল্পিক ভাবনার সব সময়ই সম্মান করি। যদিও তিনি আমার মায়া দর্পণে আমার শিল্পভাবনা অনুসরণ করেননি। একদমই নিজের মতো কাজ করেছিলেন।’