মনে হয় আমি সিনেমা করতে চাই: অপি করিম

অপি করিম। ছবি: প্রথম আলো
অপি করিম। ছবি: প্রথম আলো
>

মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীকে এখন কালেভদ্রে অভিনয়ে দেখা যায়। আজ সন্ধ্যা সাতটায় ঢাকার মহিলা সমিতি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে অপি করিম অভিনীত নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের নতুন প্রযোজনা কালো জলের কাব্য। কয়েকবার চেষ্টার পর গতকাল সন্ধ্যায় পাওয়া গেল তাঁকে। নাটকটির সূত্র ধরে কথা বলতে গিয়ে জানা গেল আরও কিছু।

শুভসন্ধ্যা। খুবই ব্যস্ত মনে হচ্ছে?

বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ সেমিস্টার ক্লাস ছিল। নিজের অফিস, আবার মঞ্চনাটকের মহড়া—সব মিলিয়ে ভীষণ ব্যস্ততা যাচ্ছে।

এত কিছু কীভাবে সমন্বয় করছেন?

(হাসি) মনে হচ্ছে, একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে ছোটাছুটি আরেকটু কমিয়ে দেওয়া উচিত। যা–ই করি, মন দিয়েই করি তো, ছোটাছুটিতে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটছে। তবে আমি মোটেও চাপ নিচ্ছি না। অসম্ভব ডিসিপ্লিন তো। সমস্যা হয় রাস্তায়। আমি জানি বিশ্ববিদ্যালয়ে কত সময় থাকতে হবে। এরপর নিজের অফিস। সন্ধ্যার পরে নিজের আত্মার খোরাকের জন্য মঞ্চ।

এত ছোটাছুটির মধ্যে মনের খোরাক মিটছে কি?

সত্যি কথা—চেষ্টা করছি, পরিপূর্ণ হচ্ছে না। অভিনয়টা আসলে আত্মার শান্তির জন্য করি। সারা দিনের সব ব্যস্ততা শেষে যখন মহড়ায় যাই, নাটকের অভিনয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখি—নিশ্বাস ফিরে পাই।

মঞ্চ যদি নিশ্বাসের জায়গা হয়, নিজের অফিস ও শিক্ষকতাকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

ওই দুটি আমার পেশা। স্থাপত্যবিদ্যা খুবই টেকনিক্যাল বিষয়। তাই শিক্ষকতার পাশাপাশি যদি প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতাও থাকে, তাহলে শিক্ষকতায় কিন্তু খুব সুবিধা হয়।

 ‘কালো জলের কাব্য’ নাটকের দ্বিতীয় মঞ্চায়ন নিয়ে প্রস্তুতি কেমন?

খুব ভয়ে আছি। প্রথম মঞ্চায়নে তো কিছুটা ছাড় পাওয়া যায়। দ্বিতীয়বার সেই সুযোগ নেই। তবে মঞ্চের আরেকটা মজা হচ্ছে, প্রতিটি প্রদর্শনীতে নিজেকে ভাঙা যায়। ভুল হলে সংশোধনও করা যায়। নতুনরূপে ফিরে আসা যায়। দ্বিতীয়বার থেকে ভালো–মন্দের হিসাব শুরু হয়। সবচেয়ে বড় কথা, যখন সহ–অভিনেতা হন আসাদুজ্জামান নূর, তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে কোনো একটা সংলাপ বলা, সেটারও একটা চাপ আছে। সব মিলিয়ে আসলে নার্ভাস আছি।

মাস দুয়েক আগে টরন্টোতে আফজাল হোসেন ও আপনি ‘জনৈক অভিজ্ঞ দম্পতি’ নামের একটি নাটকের মঞ্চায়নে অংশ নিয়েছেন।

জীবনে আফজাল হোসেনের মতো সিরিয়াস লোক দেখিনি। আমরা যেদিন কানাডায় যাই, তার সপ্তাহখানেক পর ছিল ওই নাটকের প্রদর্শনী। ওই এক সপ্তাহ তিনি কোথাও যাননি। সকাল দুপুর সন্ধ্যা রাত—মহড়া আর মহড়া। তিনি ভোরবেলায়ও মহড়া করতেন। ঢাকা ছাড়ার আগে তো প্রায় প্রতিদিন সকালে তাঁর বাসায় গিয়ে নাশতা করতাম—এরপর মহড়া। রাত নয়টায় যাবতীয় কাজ শেষে আবার মহড়া। আমি খুবই ভাগ্যবান যে এত বড় মাপের অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। প্রতিনিয়ত শিখছি, তাঁরা অভিনয়কে কতটা শ্রদ্ধা করেন, ভালোবাসেন।

মঞ্চে নিয়মিত হয়ে গেলেন?

আমি তো মঞ্চেই নিয়মিত। কখনো অভিনয়শিল্পী হিসেবে, কখনোবা সেট ডিজাইনার।

‘ব্যাচেলর’–এর পর ‘ডেব্রি অব ডিজায়ার’ করতে সময় নিলেন ঠিক ১৪ বছর। ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী পরিচালিত এই ছবিতে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

এত সময় নেওয়ার কারণ, যে ধরনের স্ক্রিপ্ট পেয়েছিলাম, ওসবে আমি কাজ করতে চাইনি। আরেকটা বিষয়, আমি যেহেতু চাকরি ও পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম—তাই অনেক প্রজেক্টের সঙ্গে সময় মেলেনি। এত বছর পর করার কারণ, ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী ও তাঁর ছবির গল্প। এই পরিচালকের ফড়িং–এর অসম্ভব ভক্ত। তাঁর ভালোবাসার শহরও ভীষণ ভালো লাগার। এ রকম একজন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে তো ইচ্ছে করবেই। কাজের অভিজ্ঞতা এভাবেই বলতে চাই, ছবিটা কাজ করার ক্ষুধা বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন মনে হয়, আমি সিনেমা করতে চাই।

‘ডেব্রি অব ডিজায়ার’ ছবির শুটিং, সম্পাদনা—সবই তো শেষ। দর্শক কবে ছবিটি দেখার সুযোগ পেতে পারেন?

এটা তো যৌথ প্রযোজনার ছবি। দুই প্রযোজক যখন ঠিক করবেন, তখনই দেখতে পাবেন দর্শক। যত দূর শুনেছি, এটা বিভিন্ন উৎসবে যাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।

আপনি নিজেকে ফুলটাইম ও পার্টটাইম হিসেবে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

আমার তো মনে হয়, ফুলটাইম খাদক, পার্টটাইম কাজ, জিরোটাইম এক্সারসাইজ।

কী খেতে পছন্দ করেন?

সবই খেতে পছন্দ করি। সবচেয়ে পছন্দ মায়ের হাতের বেগুনের তরকারি।

মঞ্চে যে তুলনায় কাজ করছেন, টেলিভিশনে সেভাবে দেখা যায় না। কী কারণ?

গল্পটা ভালো পাই না। মঞ্চে সব কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় সময় দিতে হয়, টেলিভিশন নাটকের জন্য সারা দিন লেগে যায়। তা–ও ভালো গল্প হলে অবশ্যই সময় বের করতে পারব।

সাক্ষাৎকার: মনজুর কাদের, ঢাকা