'পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়' নাটকের ২০০তম প্রদর্শনী আজ

‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

চারদিকে মুক্তিযুদ্ধের দামামা। উদ্বেগ-উত্তেজনা ছোট-বড় সবার মধ্যে। ১৭ গ্রামের নারী-পুরুষ এসেছেন মাতব্বরের কাছে। তাঁদের চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা। গত রাতেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মাতব্বরের সঙ্গে দেখা করেছেন জানিয়ে সবাইকে আশ্বাস দিচ্ছেন তিনি। পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর ভরসা রাখতে বলছেন উপস্থিত লোকজনকে। সহজ-সরল গ্রামবাসী সহজে আশ্বস্ত হতে পারেন না মাতব্বরের কথায়। এভাবে নানা ঘটনার ঘনঘটায় এগিয়ে যায় নাটকের কাহিনি। একসময় ঘর থেকে বের হন মাতব্বরের মেয়ে। সবার সামনে বলেন, বাবা জোর করে তাঁকে ওই রাতে ক্যাপ্টেনের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। পরে সেই বীরাঙ্গনা আত্মাহুতি দেন। অবশ্য নিস্তার মেলেনি রাজাকার মাতব্বরের। নিজের পাইকের হাতেই নির্মমভাবে মারা পড়েন তিনি। এ সময় পাইক বলেন, ‘আপনার কোনো ইমান ছিল না।’

সৈয়দ শামসুল হকের লেখা কালজয়ী নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’-এর গল্প এটি। আবদুল্লাহ আল-মামুন নির্দেশিত থিয়েটারের মুক্তিযুদ্ধের নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ অভিনয়ের ৪৩ বছর পূর্তি হয়েছে গত ২৫ নভেম্বর। ১৯৭৬ সালের ২৫ নভেম্বর, ঢাকার মহিলা সমিতি মঞ্চে প্রথম অভিনীত হয়েছিল কালজয়ী এ কাব্যনাট্য। আজ ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে নাটকটির ২০০তম প্রদর্শনী হবে। ১৯৯০ সালের ২৩ মার্চ নাটকটির শততম অভিনয় হয়।

‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ মুক্তিযুদ্ধের নাটক। যুদ্ধ চলাকালে একটি খণ্ড ঘটনা। এই ঘটনায় স্বাধীনতা প্রাপ্তির কথা বলা হয়নি তবে জাতীয় পতাকা দিয়ে স্বাধীনতা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে পরিসমাপ্তি টানা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে জীবনদান করা বা জীবন বাঁচানোর কৌশল এই নাটকে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বাস্তবতা কত নির্মম ছিল ভয়াবহ সেই দিনগুলোয়, তার সাক্ষাৎ এখানে পাওয়া যাবে।

বছরের পর বছর নাটকটি আলোচনায় আছে বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে। মঞ্চায়নের পরপরই এর রচনাশৈলী, বিষয়বস্তু ও প্রকাশনা সৌকর্যের জন্য দর্শকমহলে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয় নাটকটি। এক বছরের মধ্যে নিয়মিত অভিনয়ে বাংলাদেশে প্রথম সুবর্ণজয়ন্তী পালনের গৌরব অর্জন করে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’। আবদুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ জাকারিয়া, আবদুল কাদের, তারিক আনাম খান, মিতা চৌধুরী, তারানা হালিম, খায়রুল আলম সবুজ, আরিফুল হক প্রমুখের মতো প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা বিভিন্ন সময়ে এ নাটকে অভিনয় করেন।

এযাবৎ নাটকটির ১৯৯টি প্রদর্শনী হয়েছে। একমাত্র ফেরদৌসী মজুমদারই নাটকের সব প্রদর্শনীতে অভিনয় করেছেন। নাটকের প্রথম প্রদর্শনীর কেরামত মওলা এখন আবার নিয়মিত অভিনয় করছেন।

বর্তমানে এ নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন ফেরদৌসী মজুমদার, কেরামত মওলা প্রমুখ। ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে এ নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন ফেরদৌসী মজুমদার, কেরামত মওলা প্রমুখ। ছবি: সংগৃহীত

১৯৮১ সালের ১০ মার্চ দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে আইটিআই আয়োজিত পঞ্চম তৃতীয় বিশ্ব নাট্যোৎসবে নাটকটির দুটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের বাইরে বহির্বিশ্বে এটি ছিল প্রথম কোনো বাংলাদেশের নাট্যদলের অভিনয় প্রদর্শন। ১৯৮৭ সালের ২৫ মার্চ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের পাদদেশে নাটকটির একটি অভিনয় বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে।

২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত কলাকুশলী–সংকটের কারণে নাটকটির প্রদর্শনী বন্ধ ছিল। ১০ বছর বিরতি দিয়ে আবার শুরু হয় এই নাটকের প্রদর্শনী। নতুন প্রযোজনায় নির্দেশনার দায়িত্ব দেওয়া হয় সুদীপ চক্রবর্তীকে। নবীন ও প্রবীণদের সমন্বয়ে দলকে গঠন করে আবার মঞ্চে নিয়ে আসা হয় কালজয়ী নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’।

বর্তমানে এ নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন ফেরদৌসী মজুমদার, কেরামত মওলা, তোফা হোসেন, ত্রপা মজুমদার, মারুফ কবির, পরেশ আচার্য, সমর দেব, খুরশিদ আলম, নুরুল ইসলাম, রাশেদুল আওয়াল, জোয়ারদার সাইফ, তামান্না ইসলাম, রুনা লাইলা, তানভীর হোসেন সামদানী প্রমুখ। এঁদের বাইরে গত ৪৩ বছরে প্রায় ৭০ জন অভিনেতা বিভিন্ন পর্যায়ে এ নাটকে অভিনয় করেছেন।