দেশ বন্দনায় মুখরিত নগরের সংস্কৃতি অঙ্গন

জাতীয় জাদুঘরে অনুষ্ঠানের আলোচনা শেষে বিজয়ের গান পরিবেশন করেন শিল্পী তিমির নন্দী। ছবি: প্রথম আলো
জাতীয় জাদুঘরে অনুষ্ঠানের আলোচনা শেষে বিজয়ের গান পরিবেশন করেন শিল্পী তিমির নন্দী। ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীজুড়ে আজ সোমবার ছিল লাল-সবুজের উপস্থিতি। সকাল থেকে সারা দিন বিরামহীন দেশাত্মবোধক গানের সুর শোনা গেছে। সবুজ জমিনে লাল পাড়ের শাড়ি জড়ানো নারী আর সবুজ পাঞ্জাবি গায়ে পুরুষেরা রাজপথে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ট্রাক কিংবা ভ্যানগাড়িতে চড়ে গলা ছেড়ে গেয়েছেন তরুণেরা। অনেকে ভিড় করেছেন নগরের সংস্কৃতিকেন্দ্রগুলোতে। সেখানেও লাল-সবুজে একাকার ছিল। মুখরিত ছিল দেশের গান, কবিতা, আলোচনা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও দেশের গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনায়। গান, কবিতা, নাটক আর কথামালায় তাঁরা স্মরণ করেন দেশের আলোকবর্তিকাদের।


জাতীয় জাদুঘরে বিজয়ের গান ও আলোচনা
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শনের বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্বোধন, বিজয়ের গান ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আলোচনা সভার আয়োজন করে। জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনী গ্যালারিতে জাদুঘরে সংগৃহীত মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন নিয়ে ১৬ দিনব্যাপী বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন সাংবাদিক, কথাসাহিত্যিক ও মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব। সম্মানিত আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক ম. হামিদ, শহীদজায়া শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী এবং সাংবাদিক, লেখক ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। অনুষ্ঠানের আলোচনা শেষে বিজয়ের গান পরিবেশন করেন শিল্পী তিমির নন্দী ও শিল্পী দেবলীনা সুর।

শিল্পকলা একাডেমির বিজয় উৎসবে বাউল পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো
শিল্পকলা একাডেমির বিজয় উৎসবে বাউল পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো


মুখরিত শিল্পকলা একাডেমি
সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে ছিল আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে ‘গঙ্গা ঋদ্ধি থেকে বাংলাদেশ’ গানের সঙ্গে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা। ‘ও আমার বাংলা মা তোর’, ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’, ‘জ্বলে উঠো বাংলাদেশ’, ‘ও আমার জন্মভূমি ও আমার মাতৃভূমি’, ‘রাঙামাটির রঙে চোখ জুড়াল’ গানগুলোর সঙ্গেও ছিল নাচ। একক কণ্ঠে গান করেছেন সাজেদ আকবর, বুলবুল মহলানবীশ, মামুন জাহিদ খান, সালমা চৌধুরী, শিবু রায়, আমজাদ দেওয়ান প্রমুখ। আবৃত্তি করেন সৈয়দ হাসান ইমাম ও ঝর্ণা সরকার।

বাংলা একাডেমিতে একক বক্তৃতা
বিকেলে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাচিকশিল্পী রূপা চক্রবর্তীর কণ্ঠে কবি হাসান হাফিজুর রহমানের ‘তোমার আপন পতাকা’ শীর্ষক কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। ‘বিজয়: ইতিহাস ও মর্মার্থ’ শীর্ষক একক বক্তৃতা দেন ইতিহাসবিদ, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

শিল্পকলা একাডেমির বিজয় উৎসবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো
শিল্পকলা একাডেমির বিজয় উৎসবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো


সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিজয় শোভাযাত্রা
সাংস্কৃতিক শক্তিতে সারা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে বিজয় শোভাযাত্রা করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। ‘বিজয়ের অঙ্গীকার, সাংস্কৃতিক অধিকার’ স্লোগান নিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশ নেন দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা।
সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বর্ণিল এই শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। এ সময় র‍্যালিতে অংশ নেওয়া সবাইকে নিয়ে মানবিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেন তিনি। শোভাযাত্রাটি শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ফুলার রোড হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় আরও অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সহসভাপতি ঝুনা চৌধুরীসহ অন্যরা।
জোটের আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উদীচী, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, আনন্দন, সুরতালের শিল্পীদের কণ্ঠে বেজে উঠেছিল বিজয়ের গান। বিজয় উদযাপনের এ আয়োজনে ছিল একক কণ্ঠে গান, আবৃত্তি ও পথনাটক। দেশের গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে বহ্নিশিখা, ভোরের পাখি নৃত্যকলা কেন্দ্র। একই সময়ে রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ, দনিয়া এ কে স্কুল প্রাঙ্গণ, মিরপুর মুকুলফৌজ বাঁধ ও রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধেও ছিল সংগঠনটির অনুষ্ঠান।