নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতা করায় 'সাবধান ইন্ডিয়া'র উপস্থাপক বাদ

সুশান্ত সিং। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
সুশান্ত সিং। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

ভারতের নাগরিকত্ব আইন নিয়ে চলমান আন্দোলনের প্রভাব বলিউডে পড়েছে। শীর্ষ তারকাদের মুখ না খোলা নিয়ে যেমন একশ্রেণির দর্শকের মধ্যে সমালোচনার ঝড়, তেমনি কিছু তারকার সিদ্ধান্তে তোলপাড় হচ্ছে গণমাধ্যম। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘সাবধান ইন্ডিয়া’র সঞ্চালক অভিনেতা সুশান্ত সিং। তিনি নিজে টুইট করে জানিয়েছেন, ‘সাবধান ইন্ডিয়া’র সঙ্গে তাঁর বহুদিনের এই সম্পর্ক শেষ হলো। শোনা গেছে, নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতা করার কারণেই শো থেকে বাদ পড়তে হলো তাঁকে। খবরটি নিশ্চিত করেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ডট কম, মুম্বাই মিররসহ বেশ কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।

২০১১ সাল থেকে ‘সাবধান ইন্ডিয়া’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করে আসছিলেন বলিউড তারকা সুশান্ত সিং। কিন্তু বর্তমান উত্তাল ভারত নিয়ে মুখ খোলাই তাঁর এই দীর্ঘ যাত্রার সমাপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়াল।

জানা গেছে, এ ঘটনার পর সুপরিচিত এই অভিনেতার পরবর্তী প্রকল্প ‘রংবাজ ফিরসের’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভারতীয় সাংবাদিকদের সুশান্ত বলেন, ‘হ্যাঁ! গতকাল রাতেই জানতে পারি আমার চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। আমাকে কোনো নির্দিষ্ট কারণ বলা হয়নি। অবশ্য কারণটা জানতেও চাই না। বিষয় দুটি কাকতালীয় হতে পারে যে আমার প্রতিবাদে উপস্থিত থাকার দিনই ঘটনাটি ঘটেছে। সত্যিই এর কারণ আমার জানা নেই।’

সুশান্ত বলেন, চ্যানেলের সঞ্চালক বদলানোর অধিকার রয়েছে।

কেন বাদ দেওয়া হয়েছে, প্রথমে সে বিষয়ে সরাসরি কিছু বলতে চাননি সুশান্ত। পরে সেখানে সাংবাদিকেরা তাঁকে বলেন, তিনি তাঁর এক ভক্তকে বলেছিলেন যে সত্যি কথা বলার কারণে ছোট্ট মূল্য দিতে হলো। এ কথায় সুশান্ত বলেছিলেন, ‘এটা যদি আমার পদক্ষেপের প্রতিফলন হয়, তবে আমি বলব যে এটা খুব সামান্য মূল্য। যা কিছু ঘটছে তাতে আমি কিছুটা ধাক্কা খেয়েছি, তবে এতে কোনো আফসোস নেই।’

সুশান্তের টুইটে দেখা যায়, এক ভক্ত এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন, ‘সত্য বলার জন্য আপনাকে এই মূল্য দিতে হলো।’ এর জবাবে সুশান্ত লিখেছেন, ‘এটা খুবই সামান্য মূল্য, হে বন্ধু। না হলে কীভাবে আপনি ভগত সিং, সুখদেব ও রাজগুরুর মুখোমুখি হবেন?’ আরেক ভক্তের মন্তব্যে তিনি লিখেছেন, ‘আমি অনুভব করি, সত্যের পক্ষে আমাকে থাকতে হবে।’

দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনা ও নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে মুখ না খোলায় বলিউড তারকারা সমালোচিত হয়েছেন নেট দুনিয়ায়। শুধু কাজ পাবেন না—এ জন্যই কি এই নীরবতা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সুশান্ত বলেন, ‘অন্য কারও দায়িত্ব তো নিতে পারব না, কিন্তু আমার নিজের কথা বলার সাহস আছে আর সেটা আমি বলবই। এমনও নয় যে কেউ কিছু বলছেন না। রিচা চড্ডা, তাপসী পান্নু, জীশান আইয়ুবের মতো মানুষজন কথা বলেছেন। যাঁদের অন্যায় মনে হয়েছে তাঁরা বলছেন, যাঁদের মনে হচ্ছে না, তাঁরা চুপ করে আছেন। এটা তাঁদের বিষয়, আমাদের সেটার সম্মান করা উচিত।’

সুশান্ত বলেন, ‘কাজ হারানোর ভয়ে আমি অন্যের অন্যায়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারি না। আমার নীতি হচ্ছে, আমি আমার মেধা বিক্রি করি, আমার বিবেক না। আমার বাচ্চাগুলো যখন বড় হবে এবং যখন ছাত্রদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে, তখন আমি কী করছিলাম—তা জানতে চাইলে আমি কী জবাব দেব, সেটা ভাবতে হবে।’