ঝরে পড়া চরিত্রগুলো

বছরের শেষে এসে নানা দিকের হিসাব মেলানো শুরু হয়। প্রাপ্তি–অপ্রাপ্তির খাতায় জুড়ে যায় কত কিছু। এ বছর আমরা একটু অন্য রকম একটা হিসাব মেলাব। অনেক বছর ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা কিছু চরিত্রের প্রয়াণের বছর ২০১৯। চলতি বছরে প্রিয় এসব চরিত্রের মৃত্যু দেখে হৃদয় ভেঙেছে লাখো ভক্তের, অনেকে কেঁদেছেন, অনেকে হতাশ হয়েছেন। হলিউডের সিনেমা আর নাটকের যে চরিত্রগুলো প্রাণ হারাল এ বছর, তাদের বিদায় জানাতেই আজকের এই প্রতিবেদন।

আয়রন ম্যান
মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সে ‘আয়রন ম্যান’–এর যাত্রার অবসান ঘটেছে। হলিউডের সিনেমা ও কমিকপ্রেমীদের জন্য এটা ছিল এ বছরের সবচেয়ে বড় ধাক্কা। লাল স্যুটের ভেতর টনি স্টার্করূপী রবার্ট ডাউনি জুনিয়রকে আর দেখা যাবে না, এই সত্য মেনে নিতে বেশ সময় লেগেছে মার্ভেল সিনেমার দর্শকদের।
রবার্ট ডাউনি জুনিয়র অভিনীত ‘আয়রন ম্যান’–এর প্রথম সিনেমা মুক্তি পায় ২০০৮ সালে। এরপর একে একে ৯টি ছবিতে দেখা যায় এই জনপ্রিয় চরিত্রকে। সবশেষ ২০১৯ সালে ‘আয়রন ম্যান’ হিসেবে রবার্ট ডাউনি শেষবার অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম–এ নিজের জাদু দেখান। এরপর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে থেমে যায় মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের সবচেয়ে শক্তিমান এই অতিমানবের কাহিনি। অবশ্য শোনা যাচ্ছে, ২০২০ সালে মুক্তিপ্রতীক্ষিত ব্ল্যাক উইডো ছবিতে ‘আয়রন ম্যান’কে একটি অতিথি চরিত্রে দেখা যাবে।

ডেনেরিস টারগেরিয়ান
‘গেম অব থ্রোনস’ (জিওটি) এই দশকে সৃষ্ট সেরা টিভি সিরিজগুলোর একটি—এটা বলছে বিভিন্ন জরিপ। আট মৌসুমের এই সিরিজ মাতিয়ে রেখেছিল দর্শকদের। এ বছর এই সিরিজের শেষ কিস্তি নিয়ে জল্পনাকল্পনার শেষ ছিল না। ‘জন স্নো’, ‘ডেনেরিস টারগেরিয়ান’, ‘নেড স্টার্ক’, ‘আরিয়া স্টার্ক’দের মতো অনেক চরিত্র এই জিওটির কাছে হয়ে ওঠে দর্শকদের জীবনের অংশ। ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এই সিরিজের ‘মাদার অব ড্রাগনস’ অর্থাৎ ‘ডেনেরিস টারগেরিয়ান’ চরিত্রটি। এতে অভিনয় করেন এমিলিয়া ক্লার্ক। কিন্তু এই ডেনেরিসের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ বছরের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি খান টিভি সিরিজের ভক্তরা। এত শক্তিমান একটি চরিত্রের পরিণতি যে এমনটা হবে, এই ধারণা করেননি কেউই।

দ্য টার্মিনেটর
জেমস ক্যামেরনের সায়েন্স ফিকশন ছবি দ্য টার্মিনেটর–এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৪ সালে। ‘টার্মিনেটর’ চরিত্রটি দিয়ে অভিনেতা হিসেবে পরিপূর্ণতা পান আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগার। তাঁর জনপ্রিয়তার বড় একটা অংশজুড়ে তাই এই ছবির চরিত্র, অর্থাৎ ‘টি–৮০০’–এর অবদান অনেক। এই চরিত্রে দর্শক শোয়ার্জেনেগারের কোনো বিকল্পকে গ্রহণ করেননি কখনোই। কিন্তু বয়স হয়েছে আর্নির, তাই রোবট ‘টি–৮০০’কেও তো বুড়িয়ে যেতে হবে, পৌঁছাতে হবে একটা চূড়ান্ত পরিণতির দিকে। এ বছর ঠিক সেই পরিণতিরই সাক্ষী হলেন দর্শক টার্মিনেটর: দ্য ডার্ক ফেইট ছবির মধ্য দিয়ে। ৩৫ বছর ধরে চলে আসা ‘টি–৮০০’ চরিত্রটির মৃত্যু হলো এ বছর। এবার আর ছবির শেষ দৃশ্যে ‘টি–৮০০’ বলল না ‘আই উইল বি ব্যাক’।

ব্ল্যাক উইডো
অ্যাভেঞ্জার্স–এর আরেক জনপ্রিয় চরিত্র ব্ল্যাক উইডোরও বয়স হয়তো আর বাড়বে না। এ বছরের অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম–এর মধ্য দিয়ে এটা বুঝে গেছেন দর্শক। কারণ, স্কারলেট জোহানসন অভিনীত এই চরিত্রের করুণ মৃত্যু দেখা গেছে এন্ডগেম–এ। এই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে স্কারলেটের ব্ল্যাক উইডোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেছে। তবে মৃত্যু হলেও তো আর গল্প ফুরিয়ে যায় না। যে ভক্তরা গত মে মাসে ব্ল্যাক উইডোর মৃত্যু দেখে কেঁদে বুক ভাসিয়েছিলেন, তাঁরা এখন নতুন ব্ল্যাক উইড ছবির ট্রেলার দেখে উল্লাসে ফেটে পড়েছেন। বলে রাখি, এটা নতুন এক ‘টাইমলাইন’–এ ব্ল্যাক উইডো জীবনের একটি অংশ নিয়ে নির্মিত ছবি। এটি মুক্তি পাবে ২০২০ সালে। ছবিটি মুক্তি পেলেই বোঝা যাবে অতীত ধরেই কী ব্ল্যাক উইডো ভবিষ্যতে সামনে এগোবে, নাকি মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই চরিত্র থেমে থাকবে বর্তমানে এসে।

নাইরোবি ও জিম হপার
কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি। কিন্তু নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় সিরিজ ‘লা কাসা দ্য পাপেল’ (মানি হেইস্ট)–এর কারণে ‘নাইরোবি’ এখন এক জনপ্রিয় চরিত্রের নাম হয়ে উঠেছে। সেই চরিত্রই প্রতিপক্ষের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেল এ বছর, সিরিজের তৃতীয় মৌসুমে এসে। দেখতে লম্বা, লিকলিকে আর প্রাণবন্ত নাইরোবি এত দিন ছিল দর্শকের পছন্দের তালিকায়। যেমন তার উচ্ছলতা, তেমনই বন্দুক হাতে ধুন্ধুমার নাইরোবির অ্যাকশন। মোদ্দাকথা, ভক্তদের মনে দাগ কাটার জন্য যথেষ্ট উপাদান ছিল চরিত্রটির। কিন্তু ‘মানি হেইস্ট’–এর তৃতীয় কিস্তির শেষ ভাগে দেখা যায়, গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হয় সে। একইভাবে আরেক জনপ্রিয় সিরিজ ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’তেও এ বছর জনপ্রিয় চরিত্র ‘জিম হপার’ গায়েব হয়ে যায়।

সিরিজপ্রেমী দর্শকেরা মনে করছেন, এই দুই চরিত্রের প্রস্থান ক্ষণিক সময়ের জন্য। ‘মানি হেইস্ট’–এর ‘নাইরোবি’ ও ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’–এর ‘জিম হপার’ আবার ফিরবে। শেষ বেলায় এসে প্রিয় চরিত্রের মৃত্যু নির্মাতাদের প্রহসন মাত্র, দর্শকদের আগ্রহ জিইয়ে রাখার পাঁয়তারা।