আজ সারা রাত ছায়ানটে শুদ্ধ সংগীতের আবেশ

শুদ্ধ সংগীত উৎসবের উদ্বোধনী দিনের পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো
শুদ্ধ সংগীত উৎসবের উদ্বোধনী দিনের পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো

শীতের আভাস বেশ কিছুদিন ধরে ছিল, শীতকাল শুরু হলো সবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল পৌষ মাসের চতুর্থ দিন। রাজধানীতে জাঁকিয়ে বসেছে শীত। কনকনে ঠান্ডা। এমন দিনে চারদেয়ালের ভেতরের চাঁদর জড়িয়ে গান শোনার আনন্দই আলাদা। তেমন জমানো এক আয়োজন শুরু হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুদ্ধ সংগীতের শ্রোতাদের জন্য । এমনি এক আয়োজন করেছিল ছায়ানট।

সংগীতের প্রাণ ‘শুদ্ধ সংগীত’। একটা সময় ঢাকা কিংবা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের রাজবাড়ি তথা জমিদারবাড়িতে বসত শুদ্ধ সংগীতের আসর। সমাজের অভিজাত শ্রেণিই এর পৃষ্ঠপোষকতা করত। কিন্তু সম্প্রতি শুদ্ধ সংগীতের চর্চা বা শোনার অভ্যাস একেবারেই কমে গেছে। এ চিত্রটা পাল্টে দেওয়ার প্রত্যয়ে কয়েক বছর ধরে ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবনে আয়োজন করা হয়েছে শুদ্ধ সংগীত উৎসব। গতকাল কণ্ঠসংগীতের সঙ্গে বেজেছে যন্ত্রসংগীত। তবলার বোলের সঙ্গে বেহালা ও বাঁশির সম্মিলনে উচ্চাঙ্গের সেই সুর স্নিগ্ধতা ছড়িয়েছে শ্রোতার অন্তরে।

উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহের প্রখ্যাত তবলাশিল্পী পবিত্র মোহন দে। ছবি: প্রথম আলো
উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহের প্রখ্যাত তবলাশিল্পী পবিত্র মোহন দে। ছবি: প্রথম আলো

মিলনায়তন ভরে গিয়েছিল শুদ্ধ সংগীতপিপাসুদের উপস্থিতিতে। তাঁদের সাক্ষী করে সন্ধ্যায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় প্রথম দিনের অনুষ্ঠান। সম্মেলক কণ্ঠে প্রাণের গান ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি...’ গাওয়ার পর উৎসব উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহের প্রখ্যাত তবলাশিল্পী পবিত্র মোহন দে। স্বাগত কথনে অংশ নেন ছায়ানটের সহসভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল।

উদ্বোধনী বক্তব্যে পবিত্র মোহন দে বলেন, ‘বর্তমানে রাগসংগীত প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। এখনকার তরুণদের মধ্যে রাগসংগীতের চেয়ে হালকা সংগীতের প্রতি আগ্রহ বেশি দেখি। যাদের শুদ্ধ সংগীতের প্রতি আগ্রহ রয়েছে, তারা সঠিক তালিমের অভাবে এ সংগীতের পথ থেকে সরে যায়। তাই শুদ্ধ সংগীতের প্রসার বাড়াতে এ সংগীতের শিক্ষকদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রসারের ছায়ানটের ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের সংগীতচর্চায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এ প্রতিষ্ঠান। শুদ্ধ সংগীত প্রসারেও তাদের ভূমিকা প্রশংসনীয়। আমার বিশ্বাস, ছায়ানটের নিষ্ঠা দেশের তরুণ শিল্পীদের শুদ্ধ সংগীতচর্চায় আগ্রহী করে তুলবে।’

প্রথম দিন রাত দশটা পর্যন্ত চলে উৎসব। ছবি: প্রথম আলো
প্রথম দিন রাত দশটা পর্যন্ত চলে উৎসব। ছবি: প্রথম আলো

খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, ‘ছায়ানট ১২ বছর ধরে নিয়মিতভাবে শুদ্ধ সংগীত উৎসবের আয়োজন করে চলেছে। দেশের নানা প্রান্তের শিল্পীদের তুলে ধরার জন্য এ আয়োজন। আশা করি, তরুণ শিল্পীরা এ উৎসবকে কেন্দ্র করে নিজেদের সংগীতচর্চায় প্রেরণা খুঁজে নেবে।’

উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরু হয় পরিবেশনা পর্ব। এ পর্বের শুরুতেই রেজোয়ান আলীর পরিচালনায় অষ্টপ্রহরের রাগনির্ভর পরিবেশনা উপস্থাপন করেন ছায়ানটের শিল্পীরা। দ্বিতীয় পরিবেশনায় ভেসে বেড়ায় যন্ত্রসংগীতের সুর মূর্ছনা। তবলায় বোল তুলেছেন সবুজ আহমেদ, বেহালা এবং বাঁশির সুরে মন রাঙিয়েছেন শান্ত আহমেদ ও কামরুল আহমেদ। রাগ পুরিয়ার আশ্রয়ে কণ্ঠসংগীতে তৃতীয় পরিবেশনাটি উপস্থাপন করেন ঢাকার শিল্পী সতীন্দ্রনাথ হালদার। রাগ মারবায় ভর করে উচ্চাঙ্গের গান শুনিয়েছেন চট্টগ্রামের শিল্পী স্বর্ণময় চক্রবর্তী। অনিল কুমার সাহার কণ্ঠে শোনা গেছে রাগ পুরিয়া ধানেশ্রী। প্রথম দিনের পরিবেশনা পর্ব শেষ যন্ত্রসংগীতের মাধ্যমে। রাগ ভূপালিকে অবলম্বন করে বাঁশি বাজিয়েছেন মতু‌র্জা কবীর। তাঁর সঙ্গে তবলায় সংগীত করেন সবুজ আহমেদ। প্রথম দিন রাত দশটা পর্যন্ত চলে উৎসব।

স্বাগত কথনে অংশ নেন ছায়ানটের সহসভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল। ছবি: প্রথম আলো
স্বাগত কথনে অংশ নেন ছায়ানটের সহসভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল। ছবি: প্রথম আলো

আজ শুক্রবার উৎসবের সমাপনী দিন। এদিন সন্ধ্যা ছয়টায় শুরু হয়েছে আসর। চলবে সারা রাত। আজ শেষ দিন কণ্ঠসংগীত পরিবেশন করবেন খায়রুল আনাম শাকিল, রেজোয়ান আলী, অসিত দে, শেখর মণ্ডল, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি, পরাগ প্রাইম চক্রবর্তী, শ্রাবন্তী ধর, সুপ্তিকা মণ্ডল ও মিনহাজুল হাসান। দ্বৈত কণ্ঠে গাইবেন অভিজিৎ কুণ্ডু ও টিংকু পাল। যন্ত্রসংগীতের সরোদে সুর তুলবেন রাজরূপা চৌধুরী ও এবাদুল হক। বেহালার বাদন শোনাবেন মো: আলাউদ্দিন মিয়া। অনন্য রোজারিও শোনাবেন তবলার বাদন। এ ছাড়া বৃন্দ তবলা বাদন ও বৃন্দ কণ্ঠসংগীতে অংশ নেবে ছায়ানটের শিক্ষার্থীরা। শিল্পীদের সঙ্গে যন্ত্রসংগীতে সংগত করবেন জগন্নাথ রায়, রতন কুমার দাস, মৃত্যুঞ্জয় মজুমদার, বাদল চৌধুরী, গৌতম সরকার, ইফতেখার আলম ডলার, স্বরূপ হোসেন, প্রশান্ত ভৌমিক, টিংকু শীল, সবুজ আহমেদ ও শৌণক দেবনাথ।
ধানমন্ডির শংকরে ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবন মিলনায়তনে বিনা মূল্যে প্রবেশ করে আজ সারা রাত শুদ্ধ সংগীতে