এই শীতে জোড়া মঞ্চে উষ্ণ রক কনসার্ট

কনসার্টে গান করেন নগরবাউল জেমস, গান পরিবেশনায় ভাইকিংস ব্যান্ড, আর্বোভাইরাস ব্যান্ডের পরিবেশনা। ছবি: সাইফুল ইসলাম
কনসার্টে গান করেন নগরবাউল জেমস, গান পরিবেশনায় ভাইকিংস ব্যান্ড, আর্বোভাইরাস ব্যান্ডের পরিবেশনা। ছবি: সাইফুল ইসলাম

রঙিন হয়ে উঠছিল ধুলা, কুয়াশা, ধোঁয়াগুলো। উড়ছিল উন্মাতাল সুরে সুরে। মঞ্চের দুই পাশে দুটো ক্রেন। নির্বিকার দুই দানবের মতো দুই হাতে ঝুলিয়ে রেখেছিল আট জোড়া অতিকায় সাউন্ডবক্স। সেগুলোর চিৎকার হয়ে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়েতে ছড়িয়ে পড়ছিল ভাইকিংস ব‍্যান্ডের তন্ময়ের কণ্ঠ, ‘ঈশ্বর তুমি সযতনে রেখো তাঁকে’, কণ্ঠ মেলাচ্ছিলেন হাজারো তরুণ-তরুণী।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার বসুন্ধরা আইসিসিবি এক্সপো জোনে বসেছিল উষ্ণ রক কনসার্ট ‘বিগ রক ডে’র দ্বিতীয় আসর। এবার সেখানে তৈরি করা হয় একই রকম দুটি মঞ্চ। একটি দলের পরিবেশনা শেষ হওয়ার আগেই উল্টো পাশের মঞ্চে প্রস্তুত হয়ে যাচ্ছিল আরেকটি দল। মঞ্চের শেষ প্রান্তের তরুণের দল উল্টো ঘুরে দৌড়ে যাচ্ছিলেন অন‍্য মঞ্চের সামনের দিকে। শীতে তাঁদের জমে যাওয়ার সুযোগ রাখেননি আয়োজকেরা। একটা দলের পরিবেশনা শেষে ছোট্ট একটা দৌড় প্রতিযোগিতার এই ব‍্যবস্থা পছন্দ করেছেন ব‍্যান্ডসংগীতপ্রেমীরাও।

২০১৭ সালে একই জায়গায় ওপেন এয়ার কনসার্ট বিগ রক ডের আয়োজন করেছিল ব্লুজ কমিউনিকেশনস। গতবারের কথা যাঁদের মনে আছে, তাঁরা এ বছরের কনসার্টে না এসে পেরেছেন? পারলে বঞ্চিত হয়েছেন। নিখুঁত শব্দ ও আলোক ব‍্যবস্থাপনা, উদোম নাচ করার জন‍্য যথেষ্ট জায়গা রাখা ছিল এবারও। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের নস্টালজিক গানগুলোর সঙ্গে নতুন দশকের নতুন কিছু গান নিয়ে হাজির হয়েছিল ব‍্যান্ডগুলো।

কনসার্ট মঞ্চে ভীষণ পাগলামি জুড়ে দিয়েছিল পাওয়ার সার্জ, যেমনটা করে তরুণ রক ব‍্যান্ডগুলো। নিজেদের গানের পাশাপাশি তুমুল রক বাদ‍্যে তারা গাইল জেমসের ‘রওশন অপেরার যাত্রা’। ভাইকিংস গাইল ‘ঈশ্বর’, ‘আরও দূর বহু দূর’, ‘তুমি কথা দাও’, ‘কবে জোছনা আসবে’ গানগুলো। তুমুল জনপ্রিয় আরবোভাইরাস দলের গিটারিস্ট ফাসিহর জন্মদিনের কেক কাটল মঞ্চে। এক কি দুই পাউন্ড কেকটি ভক্তদের জন‍্য পাঠানো হলো মাঠে। তারা গেয়ে শোনাল ‘কেউ কারও না’, ‘মুখোশ’, ‘আয় আয় বন্ধুরা ফিরে আয়’ গানগুলো। নেমেসিসের বেলায় দর্শকদের ভেতর থেকে চিৎকার করে অনুরোধ যাচ্ছিল ‘জয়ধ্বনি’, ‘অন্বেষণ’ গানগুলোর জন‍্য। তারা গাইল ‘বীর’, ‘বন্ধ ঘরের খোলা জানালা’, সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের গান ‘আমি’সহ আরও কিছু গান।

আয়োজক প্রতিষ্ঠান ব্লুজ কমিউনিকেশনসের ব‍্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল এ রকম একজোড়া মঞ্চে একটা শো করার। তরুণদের এমন স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া আর ছোটাছুটি দেখে খুব ভালো লাগছে। এত তরুণ টিকিট কিনে শোতে এসেছে, এটা ভীষণ ইতিবাচক। শীত একটু কম হলে হয়তো আরও লোক বাড়ত।’

শেষ পরিবেশনা নিয়ে আসে নগর বাউল জেমস। বেশ খানিকক্ষণ অন্ধকারে গিটার বাজিয়ে জেমস শুরু করেন ‘লেইস ফিতা লেইস’ গানটি দিয়ে। কনসার্টের শুরুর দিকে গান করে কনক্লুশন, ট্রেইনরেক ও অ্যাভয়েড রাফা। সন্ধ‍্যা যখন গড়াচ্ছিল রাতের দিকে, বাড়ছিল শীত। তবে সেই শীতল হাওয়া কাবু করতে পারেনি তরুণ-তরুণীদের। উদ্দাম নাচ, কফির কাপ আর বন্ধুর গা ঘেঁষে তাঁরা এই শৈত‍্যপ্রবাহকেও উদ্যাপন করেছেন। সঙ্গে ছিল জেমসের ‘কবিতা, তুমি স্বপ্নচারিণী হয়ে খবর নিয়ো না।’