'রেস্ট ইন পিস চুলবুল পান্ডে'

‘দাবাং থ্রি’ ছবির ট্রেলার মুক্তির অনুষ্ঠানে সোনাক্ষী সিনহা, সালমান খান ও সাইয়ি মাঞ্জরেকার। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
‘দাবাং থ্রি’ ছবির ট্রেলার মুক্তির অনুষ্ঠানে সোনাক্ষী সিনহা, সালমান খান ও সাইয়ি মাঞ্জরেকার। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

২০ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে ‘দাবাং’ সিরিজের তৃতীয় ছবি ‘দাবাং থ্রি’। চলচ্চিত্র বিশ্লেষক তরন আদর্শ জানিয়েছেন, প্রথম দুই দিনে ছবিটি আয় করেছে ৫০ কোটি রুপি। সালমান খান আগেই বলেছেন, তৃতীয় ছবি মুক্তির জন্য যে সাত বছর সময় নেওয়া হলো, তা ফলপ্রসূ হয়েছে। কারণ, প্রথম দুটি ছবি থেকে নাকি তিন গুণ ভালো হয়েছে তৃতীয় ছবিটা।

কিন্তু চলচ্চিত্র সমালোচকেরা সালমান খানের এই বক্তব্যের সঙ্গে একেবারেই একমত নন। তাঁরা বলছেন, উল্টো কথা। রাজীব মাসান্দ জানিয়েছেন, ২ ঘণ্টা ৪২ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই ছবিতে কোনো নতুনত্ব নেই বললেই চলে। ছবিতে প্রথমে অতীতে ফিরে যাওয়া হয়েছে। যখন চুলবুল পান্ডে পুলিশ হননি। অতি সাধারণ সেই তরুণের নাম ছিল ধকড়চন্দ্র পান্ডে। যার প্রেম ছিল খুশি নামের একটি মেয়ের সঙ্গে। এই খুশি চরিত্রে দেখা গেছে সাইয়ি মাঞ্জরেকারকে।

‘দাবাং থ্রি’ ছবির দৃশ্য। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
‘দাবাং থ্রি’ ছবির দৃশ্য। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

সমালোচকের ভাষায়, ৩২ বছর বয়সী সোনাক্ষী সিনহাকে বারবার একই ছবিতে দেখে দর্শক যাতে বিরক্ত না হন, তাই এই তরুণী নতুন নায়িকার আবির্ভাব। ৫৩ বছর বয়সী সালমান খান আর ২১ বছরের সাইয়ির পর্দার প্রেম–ভালোভাবে নেননি সমালোচকেরা। এটা নাকি বলিউডের আদ্যিকালের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবকে জিইয়ে রাখার অনুশীলন।

পর্দায় সাইয়ি আর সালমানের প্রেমের সব ঠিকঠাক, দুই পরিবার থেকে বিয়ের জন্যও রাজি। কিন্তু গোল না বাধলে সিনেমা হবে কী করে! তাই বাদ সাধল কিচ্চা সুদীপ। অনেক বছরের পুরোনো সেই প্রতিশোধ সালমান খান নিলেন এবার, ‘দাবাং থ্রি’তে।

গল্প নাকি একেবারেই প্যানপেনে। ১৯৭০, ১৯৮০ বা ১৯৯০–এর দশকে এসব গল্প নিয়ে প্রচুর সিনেমা হয়েছে বলে মত দিয়েছেন চলচ্চিত্র সমালোচক কমল নাহতা। গল্পে এরপর কী হবে, তা নাকি চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়। সংলাপ তেমন আহামরি কিছু নয়। এমনকি গল্পের উপস্থাপনও এলোমেলো।

‘দাবাং থ্রি’ ছবির দৃশ্য। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
‘দাবাং থ্রি’ ছবির দৃশ্য। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

বেশির ভাগ অংশজুড়েই রয়েছে অ্যাকশন, যা দর্শককে বিরক্ত করার জন্য যথেষ্ট। অ্যাকশন দৃশ্যগুলোতে অতিরিক্ত ‘স্লো মোশন’ ব্যবহার দেখে ভ্রু কুঁচকেছেন সমালোচকেরা। রাজীব মাসান্দ বলেছেন, এমন চুলবুল পান্ডের ছবি তিনি দেখতে চান না​। এটাই যেন চুলবুল পান্ডের শেষ ছবি হয়, তা আশা করে তিনি বলেছেন, ‘রেস্ট ইন পিস চুলবুল পান্ডে।’

এই সিনেমার গল্প, চিত্রনাট্য ও সংলাপ সালমান খানের লেখা। সেখানে নাকি নিজের চরিত্রকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বলিউডের এই সুপারস্টার। এমনকি সোনাক্ষী সিনহা বা কিচ্চা সুদীপের চরিত্রের ব্যাপ্তিও কম। অন্যদিকে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই ভিলেন আর বলিউডের নতুন মুখ সাইয়ি মাঞ্জরেকার।

কিচ্চা সুদীপ বড় পর্দায় চুলবুল পান্ডের সঙ্গে পাঙ্গা নেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলেন। তাঁকে দেখে মনে হয়েছে, তিনি ‘পারফেক্ট ভিলেন’। অন্যদিকে সাইয়ি মাঞ্জরেকারের স্বাভাবিক অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ সমালোচকেরা।

‘দাবাং থ্রি’ ছবির দৃশ্য। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
‘দাবাং থ্রি’ ছবির দৃশ্য। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

এই সিনেমায় দুর্দান্ত কাজ করেছেন বৈভব মার্চেন্ট। তিনি কে? তিনি ‘মুন্না বদনাম হুয়া’ গানের কোরিওগ্রাফার। গানটি বছরের সুপারহিট গানগুলোর মধ্যে অন্যতম। আর সমালোচকেরা রায় দিয়েছেন, দুর্দান্ত কোরিওগ্রাফি হয়েছে।

সব মিলিয়ে সস্তা গল্প আর অ্যাকশনের আধিক্যে ভরপুর ছবিটি কোনো সমালোচকের কাছ থেকেই পাঁচের ভেতর দেড় বা দুইয়ের বেশি নম্বর পায়নি। যদিও তাতে কিছুই আসে যায় না সালমান খানের। তিনি আগেই বলেছেন, সমালোচকেরা ‘ভালো ভালো’ করলেই বরং তিনি ভয় পান। কারণ, সমালোচকেরা তাঁর যে ছবিগুলোকে বেশি নম্বর দিয়েছেন, সেগুলো বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।

তাই সমালোচকদের তেমন পাত্তা দেন না সালমান খান। কারণ, তিনি দর্শকদের জন্য ছবি বানান, সমালোচকদের জন্য না। আর প্রথম দুই দিনে দর্শকদের সাড়া মন্দ নয়। যদিও নতুন নাগরিকত্ব আইন আর শীতের প্রকোপে ছবির ব্যবসায় ভাটা পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অনেক বক্স অফিস বিশ্লেষক।