এগিয়েছে বলিউড, হয়েছে আধুনিক

দঙ্গল, নিরজা, ভাগ মিলখা ভাগ–এর মতো বায়োপিকগুলো আলোড়ন তুলেছে বলিউডে, বাহুবলীতে ব্যবহৃত হয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি,নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় ভারতীয় প্রযোজনা লাস্ট স্টোরিস, কারিনা ও সাইফ আলী খানের বিয়ের ছবি, এই দশকে বলিউডের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা ছিল শ্রীদেবীর প্রয়াণ, বিয়ে–পরবর্তী অনুষ্ঠানে রণবীর ও দীপিকা
দঙ্গল, নিরজা, ভাগ মিলখা ভাগ–এর মতো বায়োপিকগুলো আলোড়ন তুলেছে বলিউডে, বাহুবলীতে ব্যবহৃত হয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি,নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় ভারতীয় প্রযোজনা লাস্ট স্টোরিস, কারিনা ও সাইফ আলী খানের বিয়ের ছবি, এই দশকে বলিউডের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা ছিল শ্রীদেবীর প্রয়াণ, বিয়ে–পরবর্তী অনুষ্ঠানে রণবীর ও দীপিকা

চলতি দশকে ভালো-মন্দের মধ্য দিয়ে গেছে বলিউড সাম্রাজ্য। নতুন নতুন প্রযুক্তি, তথা মাধ্যমের আহ্বান। বদলেছে সিনেমার ধরন। আবার ঘর ভাঙা-গড়ার খেলায়ও মেতেছে বিটাউন। আবার একে একে বিদায় নিয়েছেন বলিউড সাম্রাজ্যের মহারথীরা। ‘মিটু’ অভিযানের আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে বলিউড। এই দশকে বলিউড থেকে দর্শক কী পেল, কী হারাল, তারই হিসাব–নিকাশ করেছেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য

বায়োপিকের বাজার

ভারতীয় ছবির দুনিয়ায় প্রথম বায়োপিক রাজা হরিশ্চন্দ্র। ১৯১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি নির্বাক। এরপর বিটাউনে একাধিক বায়োপিক নির্মিত হয়েছে। কিন্তু হিন্দি সিনেমার বাজারে বায়োপিকের জোয়ার আসে ২০১০-এর দশকে। বিশেষ করে ক্রীড়াজগতের রথী–মহারথীদের নিয়ে আত্মজীবনীমূলক ছবির ধারা শুরু হয় এই দশকেই। ২০১২ সালে মুক্তি পায় তিঘমাংশু ধুলিয়া পরিচালিত পান সিং তোমার। এরপর ভাগ মিলখা ভাগ, এমএস ধোনি—দ্য আনটোল্ড স্টোরি, আজহার, দঙ্গল, মেরি কম, সান্ড কি আঁখ-এর মতো স্পোর্টস বায়োপিক মুক্তি পায়। এমনকি রাজনীতির জগতের ব্যক্তিত্বদের নিয়েও বায়োপিক নির্মাণ হয়েছে এই দশকে। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, প্রয়াত শিবসেনাপ্রধান বালাসাহেব ঠাকরে, ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জীবন দেখা গেছে রুপালি পর্দায়। এ ছাড়া আলোচিত ভারতীয় ব্যক্তিত্বের নিয়ে নির্মিত সিনেমা, যেমন সরবজিৎ, দ্য ডার্টি পিকচার, প্যাডম্যান, গোল্ড, নিরজা, দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক, মাঝি: দ্য মাউন্টেন ম্যান, মান্টো, সঞ্জুসহ এ ধাঁচের সিনেমা দশকজুড়েই ছিল আলোচনার শীর্ষে।

ভিএফএক্স প্রযুক্তি আর মেকআপে ধুন্ধুমার

ভিএফএক্স বা ভিজ্যুয়াল এফেক্টসকে এই দশকের আগেই খোলা মনে স্বাগত জানিয়েছে হিন্দি সিনেমার দুনিয়া। তবে ২০১০–এর দশকে এর ব্যবহার অনেক বেশি মাত্রায় হয়েছে, পেয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। এই দশকে বলিউডের সিনেমায় ভিজ্যুয়াল গ্রাফিকসের অগ্রদূত বলা চলে বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানকে। তিনি নিত্যনতুন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চালাতে ভালোবাসেন। এর প্রমাণ মেলে শাহরুখ অভিনীত ওম শান্তি ওম, চেন্নাই এক্সপ্রেস, জিরোসহ একাধিক ছবি দেখলেই। এ ছাড়া এই দশকে পদ্মাবত, বাহুবলী, টাইগার জিন্দা হ্যায়, ধুম থ্রি, ককটেল, ভাগ মিলখা ভাগ, কৃশ, সুলতান, জুড়ওয়া টু–এর মতো ছবিগুলোও উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাড়া ফেলেছিল। মেকআপ, অর্থাৎ রূপসজ্জার ক্ষেত্রেও বলিউড নিত্যনতুন চিন্তাভাবনাকে আহ্বান জানিয়েছে। যদিও ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া অমিতাভ বচ্চন অভিনীত পা ছবির মধ্য দিয়ে বলিউডে প্রস্থেটিক মেকআপের চল শুরু হয়। তবে ২০১০–এর দশকে এসে এই রূপসজ্জার ধারা আরও বিস্তার লাভ করে। ডার্টি পিকচার, ফ্যান, রোবট, কাপুর অ্যান্ড সনস, রাবতা, সান্ড কি আঁখ, দ্য অ্যাকসিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার, পিএম নরেন্দ্র মোদি ছবিসহ আরও অনেক ছবিতে প্রস্থেটিক মেকআপের ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো।

ঘর ভাঙা-গড়া

বিবাহ আর বিচ্ছেদে এই দশকেও বলিউডে ছিল বড় আলোচনার বিষয়। কিছু নতুন সম্পর্ক যেমন জন্ম নিয়েছে। আবার কিছু সম্পর্ক অচিরেই ভেঙে গেছে। ২০১০ দশকের আলোচিত তারকা বিয়ের মধ্যে ছিল দীপিকা পাড়ুকোন-রণবীর সিং, আনুশকা শর্মা-বিরাট কোহলি, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া-নিক জোনাস, বিপাশা বসু-করণ সিং গ্রোভার, প্রীতি জিনতা-জেনে গুডএনাফ, মিরা রাজপুত-শহীদ কাপুর, বিদ্যাবালান-সিদ্ধার্থ রয় কাপুর, সোহা আলী খান-কুনাল খেমু, অবন্তিকা মালিক-ইমরান খান, কারিনা কাপুর-সাইফ আলী খান, জেনেলিয়া ডি’সুজা-রিতেশ দেশমুখের বিয়ে। এদিকে বিয়ের মাত্র চার বছরের মাথায় ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় দিয়া মির্জা ও সাহিল সংঘার। অবন্তিকা ও ইমরান খানের বৈবাহিক সম্পর্কের পরিণতিও নাকি যাচ্ছে ভাঙনের দিকে। এই দশকে অনেকেই যেমন ঘর বেঁধেছেন, আবার অনেক ঘর ভেঙে গেছে—আরবাজ খান-মালাইকা অরোরা, হিমেশ রেশমিয়া-কোমল, ফারহান আখতার-অধুনা ভবানি, রণবীর শোরে-কঙ্কনা সেন শর্মা, হৃতিক রোশন-সুজান খান, অনুরাগ কাশ্যপ-কল্কি জুটি।

অস্তমিত তারারা

এই দশকে বলিউডের আকাশ থেকে একে একে খসে গেছেন উজ্জ্বল তারারা। তবে বিটাউনে সবচেয়ে শোকের ছায়া নেমে আসে শ্রীদেবীর আকস্মিক মৃত্যুতে। বলিউডের ‘চাঁদনি’র এই অকালপ্রয়াণ মেনে নিতে পারেননি তাঁর হাজার হাজার অনুরাগী, তথা সমগ্র চলচ্চিত্র জগৎ। রাজেশ খান্না, শাম্মী কাপুর, দেব আনন্দ, জয় মুখার্জি, প্রাণ, বিনোদ খান্না, শশি কাপুর, একে হাঙ্গাল, সাধনা, নন্দা, সুচিত্রা সেন, বিদ্যা সিনহা, যশ চোপড়া, মৃণাল সেন, মান্না দে, খৈয়াম, জগজিৎ সিং, আদেশ শ্রীবাস্তব, ওম পুরি, কাদের খান, ডাক্তার শ্রীরাম লাগু, জিয়া খানসহ একাধিক ইন্দ্রপতন ঘটেছে এই দশকে।

সিনেমা যখন মুঠোতে

সিনেমা এখন মুঠোফোনে বন্দী। নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, জি–ফাইভ, হটস্টারসহ একাধিক ডিজিটাল মিডিয়ার বদৌলতে বলিউডের সিনেমা হয়ে গেছে চলাফেরার সঙ্গী। বলা যায়, হলিউডের মতো এই দশকে বলিউডেরও অন্যতম সেরা প্রাপ্তি এই স্ট্রিমিং দুনিয়া। সিনেমা দেখতে এখন কোথাও ছুটে যেতে হয় না। নিজের ঘরে বসে বা যেখানে খুশি সেখানেই মুঠোফোনে পছন্দের ছবিটি দেখে নিতে পারছেন দর্শক। শুধু ছবি নয়, স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের বদৌলতে ভারতীয় সিরিজের জনপ্রিয়তাও পৌঁছেছে অন্য এক উচ্চতায়।

‘মিটু’ অভিযান

হলিউডের পর বলিউডে ‘#মিটু’ অভিযান শুরু হয় ২০১৮। বলিউড অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত প্রথম যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনেন বলিউডের প্রভাবশালী অভিনেতা নানা পাটেকরের বিরুদ্ধে। এরপর একে একে নামজাদা চিত্রপরিচালক, সংগীত পরিচালক ও অভিনেতারা এই অভিযোগে অভিযুক্ত হতে থাকেন। প্রবীণ অভিনেতা অলোক নাথ, চিত্রপরিচালক বিকাশ বহেল, সুভাষ ঘাই, অভিনেতা রজত কাপুর, সংগীত পরিচালক অনু মালিক, সংগীতশিল্পী কৈলাশ খের, অভিজিৎ ভট্টাচার্য, পরিচালক সাজিদ খানসহ অনেকেই এর আঁচে সটকে পড়েন বলিউডের মূলধারা থেকে।