ইডিপাসের দেড় শ ও গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন নতুন কাঠামোর সন্ধানে
সত্তরের দশকে যে গ্রুপভিত্তিক নাট্যচর্চা শুরু হয়েছিল, সময়ের বাস্তবতায় এই শিল্পের সৃজনে এবং দায়বদ্ধতায় তা ক্রমাগত পল্লবিত হয়েছে। আঙ্গিক ও মৌলিক ভাবনায় বিশ্বনাট্যের পাশাপাশি বাংলা নাট্যের চর্চা, ইতিহাস এবং পর্যালোচনায় ব্যাপক কর্মচিন্তা পরিলক্ষিত হচ্ছে আমাদের মঞ্চে। কিন্তু এ শিল্পচর্চার নতুন কাঠামো কী হতে পারে বা মৌলিক থিয়েটার ভাবনা, উন্নয়ন কী হতে পারে, তা বোধ হয় ভাবার সময় এসেছে।
‘গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন নতুন কাঠামোর সন্ধানে’ শীর্ষক নাট্যভাবনা আদান-প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ শুক্রবার তির্যক নাট্যদল আয়োজিত নাট্যমেলার তৃতীয় দিন সকালে এ আলোচনা হয়। থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামে (টিআইসি) আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী তির্যক নাট্যমেলায় থিয়েটার–ভাবনার বিষয় উপস্থাপন করেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত নাট্যজনেরা নাট্যভাবনায় অংশ নেন এবং আলোচনা করেন। উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আবদুস সেলিম, আফসার আহমেদ, মান্নান হীরা, মলয় ভৌমিক, জিয়াউল হাসান কিসলু, দেবপ্রসাদ দেবনাথ, গোলাম সরোয়ার, অলক ঘোষ, ম সাইফুল আলম, আকবর রেজা, সনজীব বড়ুয়া, তৌফিক হাসান, মোহাম্মদ বারী, শাহাদাত হোসেন খান, গাজী রাকায়েত, অলোক বসু, দেবাশীষ ঘোষ, আকবর রেজা, বিক্রম চৌধুরী, আইরিন পারভিন, সাইদুর রহমান, মীর বরকত, কুন্তল বড়ুয়া, দুলাল দাশগুপ্ত, মোসলেম উদ্দিন সিকদার, আকতারুজ্জামান, অনন্ত হিরা, আলী আহমেদ মুকুল, শামীমা শওকত, খোরশেদুল আলম, আলী হায়দার, রওশন জান্নাত, শামীম হাসান প্রমুখ। এ সময় বক্তারা আরও বলেন, আমাদের থিয়েটারচর্চার ইতিহাসে বড় দুর্ভাগ্য হচ্ছে, অনেকটা সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও আমরা ন্যাশনাল রেপার্টারি (পেশাদার নাট্যকর্মীদের প্ল্যাটফর্ম) বা এ–জাতীয় কিছু করতে না পারা। আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক দিকগুলোর বিবেচনায় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা থেকে থিয়েটারকে কোনো রকমের আশ্রয় না দেওয়া। বক্তারা থিয়েটারে নান্দনিকতার কথা উল্লেখ করে বলেন, নাটকে আঙ্গিক ভাবনা এবং কাঠামো নির্মাণে নান্দনিকতা প্রধান বিষয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে।
আজ বেলা তিনটায় টিআইসির মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশু–কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন স্কুলের শতাধিক শিক্ষার্থী এতে অংশ নেয়। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে তির্যকের পক্ষ থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়। পরে শিশুতোষ গল্পবলা অনুষ্ঠানে গল্প বলেন তামান্না তিথি। সন্ধ্যা সাতটায় তির্যক নাট্যদল মিলনায়তনে পরিবেশন করে প্রাচীন গ্রিক ট্র্যাজেডি সফোক্লিসের ‘ইডিপাস’ নাটকটি। এদিন ছিল নাটকটির ১৫০তম মঞ্চায়ন। ১৯৯৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামের মুসলিম হলে ‘ইডিপাস’ মঞ্চায়ন করে তির্যক নাট্যদল। এটি ছিল দলনেতা আহমেদ ইকবাল হায়দারের তির্যক নাট্যদলের জন্য ৩৮তম প্রযোজনা।
কাল শনিবার ২৮ ডিসেম্বর উৎসবের রয়েছে সকাল ১০টায় লেকচার থিয়েটারে লেকচার ওয়ার্কশপ। থিয়েটারের আশ্রয়বিষয়ক লেকচারে বিষয় উপস্থাপন করবেন কৌশিক চট্টোপাধ্যায়। বিকেল সাড়ে চারটায় উচ্চাঙ্গ যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করবেন ওস্তাদ আজিজুর ইসলাম এবং শামীম জহির। বিকেল পাঁচটায় মুক্তমঞ্চে রাশেদ হাসানের পরিচালনায় বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করবে প্রমা আবৃত্তি সংগঠন। পরপরই শুভ্রা সেনগুপ্তার পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করবে স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ড্যান্স।
‘যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে, মুক্ত করো হে বন্ধন’ স্লোগানে ২৫ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে তির্যক নাট্যমেলা ও তির্যকের নাট্য-স্মারক প্রদর্শনী। সেদিন উদ্বোধনী মঞ্চে পরিবেশিত হয় তির্যক নাট্যদল প্রযোজিত সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর নাটক ‘তরঙ্গভঙ্গ’। পরদিন ২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার নাট্যচক্র (ঢাকা) পরিবেশন করে দারিও ফোরের ‘আ ওমেন অ্যালোন’ অবলম্বনে নাটক ‘একা এক নারী’।
২৮ ডিসেম্বর শনিবার থিয়েটার ফ্যাক্টরি পরিবেশন করবে মোহন রাকেশের নাটক ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’। ২৯ ডিসেম্বর সমাপনী দিনে আপস্টেজ (ঢাকা) পরিবেশন করবে বুদ্ধদেব বসুর নাটক ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’।
১৯৭৪-এর ১৬ মে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ পথপরিক্রমায় দেশ ও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তির্যক চর্চা ও সৃজনের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রটিকে সৃষ্টিশীলতায় পূর্ণ করার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এ পর্যন্ত তির্যক নাট্যদল ৪৪টি নাটকের ২ হাজার ৭৮৬টি প্রদর্শনী সম্পন্ন করেছে।