চলচ্চিত্রের গানও নেই আলোচনায়

যদি একদিন ছবির ‘লক্ষ্মীসোনা’ গানটি এ বছর বেশ আলোচনায় ছিল।  ছবি: সংগৃহীত
যদি একদিন ছবির ‘লক্ষ্মীসোনা’ গানটি এ বছর বেশ আলোচনায় ছিল। ছবি: সংগৃহীত

কোনো ছবির গানগুলো জনপ্রিয় হলে ওই সিনেমা নিয়ে সাধারণত দর্শকের আগ্রহ বাড়ে। সত্তর-আশির দশক থেকে নব্বই দশক পেরিয়েও বেশির ভাগ সিনেমার একটি না একটি গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কখনো কখনো একটি সিনেমার পাঁচটি গানের তিনটিই দর্শক–শ্রোতা পছন্দ করেছেন। এমনও উদাহরণ আছে, শুধু গানের কারণেই সিনেমা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে ঢুকেছেন দর্শক। আনুপাতিক হারে কমে গেলেও ২০১০ সালের পরেও সিনেমার গান জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

এখন সিনেমা নির্মাণ যেমন কমেছে, তেমন কমেছে গানের সংখ্যাও। ২০১৯ সালে প্রায় ২০০ সিনেমার গান এসেছে বাজারে। ২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার মতো প্লেব্যাক গান নিয়েও আলোচনা তেমন একটা নেই। বছরজুড়ে হাতে গোনা কয়েকটি গান নিয়ে আলোচনা ছিল। বছরের শুরুতে মুক্তি পাওয়া যদি একদিন ছবির ‘লক্ষ্মীসোনা’ গানটি বেশ আলোচনায় ছিল। পাশাপাশি আলোচনার শাহেনশাহ ছবির ‘রসিক আমার’, পাসওয়ার্ড ছবির ‘আগুন লাগাইলো’, যদি একদিন ছবির ‘আমি পারবো না তোমার হতে’, অবতার ছবির ‘যারে দেখে মন’, ‘রঙ্গিলা বেবী’, ফাগুন হাওয়ায় ছবির ‘তোমাকে চাই’, সাপলুডু ছবির ‘মওলা’, নোলক ছবির ‘শীতলপাটি’, ন ডরাই ছবির ‘যন্ত্রণা’ এবং বছরের একদম শেষে এসে বিশ্বসুন্দরী ছবির ‘তুই কি আমার হবি রে’ গানগুলো। বলে রাখা ভালো, বিশ্বসুন্দরী ও শাহেনশাহ ছবি দুটি এখনো মুক্তি পায়নি।

২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার তুলনায় আলোচিত গানের সংখ্যা কম। চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেশির ভাগ ছবির মান যেমন ভালো না, গানের অবস্থাও ঠিক একই রকম। গানগুলো সিনেমার গল্পের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হয় না। কেবল গান লাগবে, সে কারণে জুড়ে দেওয়া হয় সিনেমার সঙ্গে। পাশাপাশি ভালো গীতিকার ও সুরকারেরও অভাব আছে এখন।
আলোচনায় থাকা ‘লক্ষ্মীসোনা’ গানের সুরকার ও গায়ক হৃদয় খান বলেন, ‘গানটির থিমটা ভালো ছিল। গল্পের সঙ্গে একেবারে প্রাসঙ্গিক ছিল। এ কারণেই গানটি শ্রোতা ও দর্শকেরা পছন্দ করেছেন। তবে এখন চলচ্চিত্রে ভালো গান কম হচ্ছে। ভালো গানের জন্য গানের কথা ও সুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো আমাদের এরই অভাব তৈরি হয়েছে।’

বিশ্বসুন্দরী ছবির ‘তুই কি আমার হবি রে’ গানে সিয়াম ও পরীমনি।  ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বসুন্দরী ছবির ‘তুই কি আমার হবি রে’ গানে সিয়াম ও পরীমনি। ছবি: সংগৃহীত

‘পৃথিবীতে সুখ বলে’, ‘কী জাদু করেছ বলো না’, ‘এক বিন্দু ভালোবাসা দাও’, ‘জ্বলে জ্বলে জোনাকি’ ইত্যাদি জনপ্রিয় গান দর্শকেরা পেয়েছেন পরিচালক জাকির হোসেন রাজুর সিনেমাতে। তিনি বলেন, ‘গান ভালো হতে হলে অবশ্যই ছবির পরিচালক, প্রযোজক, গীতিকার ও সুরকারকে একসঙ্গে বসতে হবে। ছবির গল্প, ছবির সঙ্গে প্রাসঙ্গিকতা রেখেই গানগুলো হতে হবে।’
তবে এই পরিচালক অন্য একটি বিষয় এর সঙ্গে যোগ করে বলেন, গত পাঁচ–ছয় বছর হলো গানের কথা ও সুরের ধরনে পরিবর্তন এসেছে। গান গদ্যরূপ নিয়েছে। এটা জনপ্রিয়তা পেতে সময় লাগবে।
এ প্রসঙ্গে জনপ্রিয় গানের সিনেমার প্রযোজক ও হার্ট বিট প্রোডাকশনের চেয়ারম্যান তাপসী ফারুক বলেন, আগের মতো এখন গান নিয়ে সিনেমার প্রযোজক, পরিচালক, গানের গীতিকার, সুরকারেরা মিটিং করেন না। অনেক সময় কোনো আলাপ–আলোচনা ছাড়াই একটি ধারণা দিয়ে শুটিংয়ের আগে আগে সংগীত পরিচালকের কাছে গান চান ছবির পরিচালক। তাহলে কীভাবে গান জনপ্রিয়তা পাবে।
সুরকার আলম খান বলেন, ‘আমরা সিনেমার মধ্যে মিশে গিয়ে গান তৈরি করেছি। এখন তো আগে থেকে তৈরি করা গান অনেক সময় সিনেমায় জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। এখনকার গানে মানুষের মন ও অন্তর ছুঁয়ে যাওয়ার মতো কথা কম। সুরের ক্ষেত্রে মেলোডিরও অভাব আছে।’

সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, ‘এখন তো সিনেমাই কম তৈরি হয়। একসময় সামাজিক গল্পের, সাহিত্যনির্ভর ভালো ভালো ছবি হতো। তাই গানগুলোই দর্শকপ্রিয় হতো। আগে গান ভালো হতো কারণ, গান ও সিনেমার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা সবাই মিলে দু–তিন দিন ধরে গান তুলতাম। এখন কোনো ধরনের মহড়া ছাড়াই শিল্পী গিয়ে গান গেয়ে আসেন। তাই গানগুলো ভালো হয় না।’