বছরের সেরা ৫ প্রথাবিরোধী চলচ্চিত্র

>

বলিউড প্রতিনিয়ত ভাঙছে ‘ফর্মুলা ফিল্ম’-এর সংজ্ঞা। আগে সমালোচকদের ছবি, উৎসবের ছবি, দর্শকের ছবি, সামাজিক ছবি, রাজনৈতিক ছবি—এ ধরনগুলো ছিল আলাদা। এখন অনেক ছবি প্রথাবিরোধী সামাজিক ও রাজনৈতিক গল্প বলেই আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা কুড়িয়ে সমালোচকদের মন রক্ষা করেছে, আর বক্স অফিসেও কামাই করছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। ‘গালি বয়’, ‘উড়ি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’, ‘আর্টিকেল ফিফটিন’-এর মতো ছবিগুলো দেখে দর্শক দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানিয়েছেন। আবার ‘হাউসফুল ফোর’, ‘দাবাং থ্রি’ বা ‘টোটাল ধামাল’, ‘কবির সিং’ বা ‘ওয়ার’ও বক্স অফিস থেকে তুলে আনছে মোটা অঙ্কের টাকা। সব মিলিয়ে ২০১৯ সাল বলিউডের জন্য ভালোই গেল। ভিন্ন ধরনের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ছবি নিয়ে এই আয়োজন। সেগুলো বিষয়, নির্মাণ বা বিপণনের দিক থেকে ভিন্ন। দর্শক-সমালোচকেরা সেই ভিন্নতা সাদরে গ্রহণ করেছেন। আর জানিয়েছেন, এই ধরনের সিনেমা আরও বেশি বেশি হওয়া উচিত। ডেকান ক্রনিকলের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে সে রকম পাঁচটি ভিন্ন স্বাদের গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত ছবি হলো:

‘মারদ কো দারদ নেহি হোতা’ ও ‘সেকশন থ্রি সেভেনটি ফাইভ’ ছবির দৃশ্য।
‘মারদ কো দারদ নেহি হোতা’ ও ‘সেকশন থ্রি সেভেনটি ফাইভ’ ছবির দৃশ্য।


৫. ‘মারদ কো দারদ নেহি হোতা’ ও ‘সেকশন থ্রি সেভেনটি ফাইভ’
এই দুটি সিনেমাকে রাখা হয়েছে পঞ্চম স্থানে। ‘মারদ কো দারদ নেহি হোতা’ ২১ মার্চ মুক্তির পর মাত্র দুই কোটি টাকা আয় করলেও ছবিটিকে বলা হচ্ছে বছরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছবি। অ্যাকশন, কমেডি ঘরানার এই ছবি পরিচালনা করেছেন ভাসান বালা। রাধিকা মাদান, অভিমন্যু দাসানি অভিনীত এই ছবির মূল চরিত্র একটা বিরল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, যিনি কোনো শারীরিক ব্যথা সে অনুভব করেন না। তাই পুরুষের ব্যথা না পাওয়া, কান্না না করা কিন্তু একটা শারীরিক সমস্যা! অন্যদিকে, অজয় ভেল পরিচালিত ‘সেকশন থ্রি সেভেনটি ফাইভ’-এর মূল অভিনয়শিল্পীরা হলেন অক্ষয় খান্না ও রিচা চাড্ডা। ‘ধর্ষণ’-এর কেসের ক্ষেত্রে একটা ভিন্ন ধরনের পরিস্থিতি উঠে এসেছে এই সিনেমায়।

‘সঞ্চিরিয়া’ সিনেমার পোস্টারের ছবি।
‘সঞ্চিরিয়া’ সিনেমার পোস্টারের ছবি।


৪. সঞ্চিরিয়া
অভিষেক চৌবে পরিচালিত, মনোজ বাজপেয়ি, সুশান্ত সিং রাজপুত ও ভূমি পেডনেকার অভিনীত ‘সঞ্চিরিয়া’ ছবিটি নিঃসন্দেহে বছরের ‘বড় ফ্লপ’ ছবিগুলোর একটা। কিন্তু নারীকেন্দ্রিক ও প্রথাবিরোধী চলচ্চিত্র হিসেবে এই ছবির নাম থাকবে বলিউডের ইতিহাসে। ধসে পড়া সমাজেও কিছু মানুষের লড়াই করে টিকে থাকার গল্প বলে এই ছবি।

‘হামিদ’ সিনেমার পোস্টার।
‘হামিদ’ সিনেমার পোস্টার।


৩. হামিদ
বছরের সবচেয়ে ‘আন্ডাররেটেড’ ছবি হিসেবে ‘হামিদ’-এর নাম থাকবে একেবারে প্রথম সারিতে। ‘হামিদ’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা শিশুশিল্পী হিসেবে ভারতের ৬৬তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছে তালহা আরশাদ রেশি। তালহা কাশ্মীরের ছেলে। ‘হামিদ’ ছবিটিও পুরোপুরি কাশ্মীরকে ঘিরেই তৈরি। ছবিতে দেখা যায়, ছোট্ট হামিদের বাবা কাশ্মীরের চলমান অস্থিরতার মধ্যে নিখোঁজ হয়ে যান। হামিদ তার বাবাকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যায়, হার মানতে চায় না। এর মধ্যে সে একদিন জানতে পারে, ‘৭৮৬’ হচ্ছে একটি পবিত্র সংখ্যা। তাই সেই সংখ্যা দিয়ে অনেক চেষ্টা করে হামিদ একটি ফোন নম্বর বানায় আর সেটাকে সৃষ্টিকর্তার নম্বর ভেবে তাতে ফোন করে। কথা বলতে শুরু করে এক অচেনা মানুষের সঙ্গে। এগিয়ে যায় ছবির গল্প। ছবিতে কাশ্মীরের চোখধাঁধানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তো উঠে এসেছেই, সেই সঙ্গে দেখা গেছে যুদ্ধের ভয়াবহতাও।

‘গালি বয়’ ছবির দৃশ্যে রণবীর সিং।
‘গালি বয়’ ছবির দৃশ্যে রণবীর সিং।


২. গালি বয়
ওপরের চারটি ছবির ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, ‘গালি বয়’-এর দৃশ্যপট অবশ্য ভিন্ন। মুক্তির পর আশাতীত সাড়া ফেলে বলিউডের জনপ্রিয় মুখ রণবীর সিং ও আলিয়া ভাট অভিনীত এই ছবি। মাত্র ৪০ কোটি রুপি খরচ করে বানানো ছবিটি বক্স অফিসে তুলে আনে প্রায় ২৫০ কোটি রুপি। প্রশংসা কুড়ায় ‘কৃপণ’ সমালোচকদেরও। তাই ৯২তম অস্কারে ‘সেরা বিদেশি ভাষার ছবি’ বিভাগে ভারত থেকে পাঠানো হয় ছবিটি; যদিও সংক্ষিপ্ত দশের তালিকায় স্থান করে নিতে পারেনি। বস্তির খুব সাধারণ একটা ছেলের র‍্যাপার হওয়ার স্বপ্নপূরণের সংগ্রামের গল্প বলে এই ছবি। হলিউড অভিনেতা উইল স্মিথ এই ছবিতে রণবীর সিংয়ের অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

‘আর্টিকেল ফিফটিন’ ছবির দৃশ্যে আয়ুষ্মান খুরানা।
‘আর্টিকেল ফিফটিন’ ছবির দৃশ্যে আয়ুষ্মান খুরানা।


১. আর্টিকেল ফিফটিন
মুক্তির প্রথম দিনেই ‘নারীর প্রতি সহিংসতা’, ‘বর্ণপ্রথা’র সমালোচনা করে নির্মিত ছবিটি ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে ব্রাহ্মণদের আন্দোলনের মুখে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। তারপরও মাত্র ২৯ কোটি রুপি খরচ করে বানানো ছবিটি বক্স অফিসে তুলে এনেছে প্রায় ১০০ কোটি রুপি। এই ছবিতে প্রথমবারের মতো আয়ুষ্মান খুরানাকে দেখা গেছে পুলিশের পোশাকে। আর সমালোচকেরা বলেছেন, এই অভিনেতার সেরা কাজ এটিই। আয়ুষ্মান খুরানা ছবি মুক্তির আগেই বলেছিলেন, এটি তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছবি। বাড়িয়ে বলেননি তিনি। বছর শেষে ডেকান ক্রনিকল বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছবির মুকুট পরিয়েছে ‘আর্টিকেল ফিফটিন’কে।