টেলিভিশন নাটকে বছর গেল ইউটিউব নিয়ে দুশ্চিন্তায়

২০১৯ সালে নির্মিত বাংলাদেশি নাটকের পোস্টার
২০১৯ সালে নির্মিত বাংলাদেশি নাটকের পোস্টার

আরও একটি বছর টেলিভিশনের নাটক ইউটিউবে দেখলেন দর্শকেরা। নানা আলোচনা-সমালোচনায়ও বেশির ভাগ নাটকের মানের উন্নতি হয়নি। অতিরিক্ত বিজ্ঞাপনের লাগাম টানেনি বিজ্ঞাপনী সংস্থা বা টেলিভিশন। ফলে যেখানকার নাটক রয়ে গেছে সেখানেই। নাটকের নিয়তিই যেন এমন—টিভিতে প্রচারের পর ইউটিউবই হবে তার শেষ ঠিকানা। এ মাধ্যমকে নিয়েই চিন্তা ও দুশ্চিন্তায় কাটালেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ইউটিউবের বড় সুবিধা হচ্ছে, ভিডিওটি কতবার দেখা হয়েছে, সেটা জানা যায়। ফলে মানহীন নাটকের ‘মিলিয়ন ভিউ’ আত্মতুষ্টির সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যায় নির্মাতাদের। সেখানে কয়েক দফা মাত্র ৭ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ইউটিউব আয় করতে পারছে, তার কিছু অংশ দিচ্ছে নাটকটির আপলোডকারীকে। এ উপায়ে রোজগারের একটি ভালো উপায় দেখে সংগীত প্রযোজকেরাও ঝুঁকছেন নাটক নির্মাণের দিকে।

এক বছর আগে বড় ছেলে নাটকের মতো আলোচিত কোনো নাটক এ বছর তৈরি হয়নি। এমনকি কোনো নাটক নিয়ে তেমন আলোচনাও হয়নি। রেকর্ড পরিমাণ নাটকে অভিনয় করেছেন আফরান নিশো। নারীদের মধ্যে এগিয়ে আছেন মেহজাবীন। নিজেরাও জানেন না, ঠিক কতগুলো নাটকে অভিনয় করেছেন তাঁরা। তাঁরা ছাড়াও সবচেয়ে বেশি নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রের অভিনয়শিল্পী তালিকায় আছেন অপূর্ব, মোশাররফ করিম, তানজিন তিশা প্রমুখ। শিডিউল দিতে পারলে হয়তো আরও বাড়ত তাঁদের অভিনীত নাটকের সংখ্যা। অন্যদিকে নাটকের নামগুলো নিয়ে এর মধ্যে কিছু সমালোচনার কথা শোনা গেছে। প্রশ্ন উঠেছিল, বেড সিন, ছ্যাকা খেয়ে বেঁকা, সেই রকম বাকিখোর, প্লেবয়, ক্রেজি লাভার, ড্যাশিং গার্লফ্রেন্ড, বংশগত পাগল, ম্যানেজ মকবুল, চ্যাতা কাশেম, এক্সফেল মফিজ, মফিজের লাইফস্টাইল নামগুলো বাংলা নাটকের জন্য কি খুব রুচিসম্মত?

টেলিভিশন নাটকের এ বছর কেমন গেল? এ প্রশ্নে ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘এ বছর বেশ কিছু ভালো নাটক হয়েছে। কিন্তু টেলিভিশনের চেয়ে নির্মাতারা অনলাইনের জন্য নাটক নির্মাণে বেশি আগ্রহী। এটা ভালো সাইন নয়, বরং সংকট। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও তাদের চাঙ্কগুলো বিক্রি করে দিচ্ছে তৃতীয় পক্ষের কাছে, এ নিয়ে আমরা চিন্তিত। কারণ, ইউটিউবের জন্য নাটক নির্মিত হলে কেবল বাণিজ্যিক লাভের বিষয়গুলোই চিন্তা করা হবে, আমাদের সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেওয়ার কথা সেখানে ভাবার সুযোগ কম। টেলিভিশনগুলো তাদের ইউটিউব চ্যানেলে নাটকগুলো চালালে অসুবিধা নেই। কিন্তু বাকিদের ক্ষেত্রে ভাবনার বিষয় হচ্ছে, তাঁদের বেশির ভাগই সেন্সরশিপ নিয়ে ভাববেন না।’

বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও দর্শকদের একটা বড় অংশ উদ্গ্রীব হয়ে অপেক্ষা করে ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাংলা চ্যানেল জি বাংলার দিকে। সেখানকার ধারাবাহিক নাটকগুলো শুরু হয়ে চলছে দুই বা তিন বছর। আবার কখনো শুরু হয়েছে নতুন ধারাবাহিক। যেমন এ বছর শুরু হয়েছে আলোছায়া, ত্রিনয়নী, নেতাজি, সৌদামিনীর সংসার। ২০১৭ ও ২০১৮ সাল থেকে শুরু হয়ে এখনো চলছে করুণাময়ী রানী রাসমণি, কৃষ্ণকলি, জয় বাবা লোকনাথ, বকুল কথা, নকশি কাঁথা, হৃদয়হরণ বি.এ. পাশ ধারাবাহিকগুলো। বেশির ভাগ সময় যাঁদের কাটে বাড়ির ভেতরে, তাঁরা ঠিকই সেসবের খোঁজ রাখেন।

২০১৭ সালে জ্যেষ্ঠ ও নবীন নির্মাতাদের সমন্বয়ে বেশ কিছু ভালো নাটক তৈরি হয় বাংলাদেশে। সে বছরের নাটকগুলো নিয়ে ভীষণ আলোচনাও হয়েছিল। সে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন টিভি নাটকের অধিকাংশ নির্মাতা। এ অঙ্গনে কাজের নানা প্রতিবন্ধকতা তাঁদের হাত-পা বেঁধে ফেলেছিল। এমনকি নাটকের প্রধান সমস্যা বাজেটসংকট কাটিয়ে ওঠার ভালো কোনো পথই বের করতে পারেনি কোনো পক্ষই। উল্টো উত্তরার শুটিংবাড়িগুলো বন্ধ হয়ে গেছে কিংবা যাচ্ছে। নাটকের বাজেট গেছে আরও কমে। সব মিলিয়ে বলা চলে, টেলিভিশন নাটকের জন্য ২০১৯ খুব বেশি ভালো সময় ছিল না।