সিনেমা তাহলে চলবে কোথায়

দ্রুত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এক পর্দার প্রেক্ষাগৃহগুলো। বন্ধের পথে বেশ কিছু
দ্রুত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এক পর্দার প্রেক্ষাগৃহগুলো। বন্ধের পথে বেশ কিছু

বড় বাজেটের বেশ কিছু সিনেমা মুক্তি পেতে যাচ্ছে এ বছর। এরই মধ্যে শুরু হয়ে যাবে অনেকগুলো সিনেমার শুটিং। বছরটিকে ‘সিনেমার ঘুরে দাঁড়ানোর বছর’ মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকেই। কিন্তু শঙ্কা অন্যখানে। মুক্তি পাওয়ার পর সিনেমাগুলো কোথায় চলবে?

সিনেমা দেখার জন্য বড় পর্দার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু একের পর এক প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সিনেমা চালানোর জায়গা কমে আসছে। গত বছর সিরাজগঞ্জের চালার ঐতিহ্যবাহী সাগরিকা, শেরপুরের কাকলী, রাজশাহীর উপহার, ঢাকার রাজমণি, রাজিয়াসহ দেশের অনেকগুলো প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের সংগঠন প্রদর্শক সমিতি জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা যেকোনো সময়ের চেয়ে নিম্নপর্যায়ে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে নিয়মিত প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ৬০ থেকে ৭০। মৌসুমি প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা প্রায় ৩০। এর মধ্যেই বরগুনা, পিরোজপুর, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, নড়াইল, বাগেরহাট, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১২ থেকে ১৩টি জেলা সদরের সব প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ এক যুগ আগেও দেশে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২ শতাধিক। দুই বছর আগেও এ সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০০। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, সিনেমার জন্য এটি একটি ভয়াবহ ঘটনা। এভাবে চলতে থাকলে দুই–এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় সব এক পর্দার প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

প্রদর্শক সমিতির সহসভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, চোখের সামনে একটা শিল্প ধ্বংস হয়ে গেল! দ্রুত সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দুই–এক বছরের মধ্যে বাকি হলগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আরও বলেন, নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে নতুন কোনো সিনেমা নেই। সিনেমা না থাকলে প্রেক্ষাগৃহ চলবে কীভাবে? অনেকেই বলেছেন, মুক্তির দ্বিতীয় দিন মুখ থুবড়ে পড়বে—এ আশঙ্কায় প্রেক্ষাগৃহ মালিকেরা ইদানীং নতুন ছবি তুলতে ভয় পাচ্ছেন।

গত কয়েক বছরে বেড়েছে সিনেপ্লেক্স ও মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণের প্রবণতা। তবে একাধিক পর্দার প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা বাড়লেও, সেসব জায়গায় বাংলা সিনেমা প্রদর্শনের আগ্রহ কম দেখা যায়। অন্যদিকে এক পর্দার বেশির ভাগ প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখার পরিবেশ নেই।

এ জীবন তোমার আমার, বেদের মেয়ে জোস্না, মনের মাঝে তুমি, মোল্লাবাড়ির বউসহ বহু জনপ্রিয় ছবির প্রযোজক মতিউর রহমান মনে করেন, দেখার মতো সিনেমা না থাকার কারণে প্রেক্ষাগৃহ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি ২০০৫ সালে সিনেমা থেকে সরে এসেছি। তখনো এক হাজারের ওপরে হল ছিল। এখন সিনেমাই নেই, তাহলে হল থাকবে কেমন করে? ভালো সিনেমা থাকলে ব্যবসা হতো, হলও বাঁচত।’

এদিকে বেশ কয়েক বছর ধরে সিনেমা ও সিনেমা হল বাঁচাতে সরকারি উদ্যোগের কথা কেবল শোনাই যাচ্ছে। ২০১৮ সালে প্রেক্ষাগৃহের আধুনিকায়নে ‘দেশব্যাপী সিনেমা হল ডিজিটালাইজেশন’ প্রকল্পের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দেওয়া হয়। তথ্য মন্ত্রণালয়, বিএফডিসি ও চলচ্চিত্রের সমিতিগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে ওই বছরের মে মাসে একটি সভা করা হয়। পরে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে আরও কয়েকটি ভাগে প্রকল্পটির জন্য কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সংশোধনীসহ বেশ কয়েকবার প্রকল্পের বাজেট তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। কিন্তু আকস্মিকভাবে তিন মাস আগে বন্ধ হয়ে যায় সেই প্রকল্প। প্রকল্পের সদস্যসচিবের দায়িত্বে থাকা বিএফডিসির টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের পরিচালক আইয়ুব আলী গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের ওই প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সিনেমা হল আধুনিকায়নে নতুন প্রকল্প হিসেবে হলমালিকদের স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেবে সরকার।

এ প্রকল্প প্রসঙ্গে মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘এখন শুনছি হলমালিকদের স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেবে সরকার। সেটা হলমালিকদের কতটা কাজে আসবে এখনই বোঝা যাচ্ছে না।’