ঢাকায় পদ্মার নাচন, কুশানপালা, ঘেটুগান

বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবের তৃতীয় দিনের একটি দলীয় পরিবেশনা। ছবি: শিল্পকলা একাডেমির সৌজন্যে।
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবের তৃতীয় দিনের একটি দলীয় পরিবেশনা। ছবি: শিল্পকলা একাডেমির সৌজন্যে।

দেশের সব জেলার ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিয়ে ঢাকায় এসেছেন ৬৪ জেলার শিল্পীরা। দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয়ের পাশাপাশি এসব উপভোগের বিশাল এক উৎসব আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমি। পাঁচ হাজারের অধিক শিল্পী ও শতাধিক সংগঠনের অংশগ্রহণে ২১ দিনব্যাপী উৎসবের তৃতীয় দিন ছিল রোববার।

বিকেলে একাডেমির নন্দন মঞ্চে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। এরপর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ঢাকার পরিবেশনায় অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী। পরে কারিশমা আবৃত্তি সংগঠনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিল্পী সুপ্ত, হিসাম, সাফিন, সাফান, জাবের ও লিথি পরিবেশন করেন বৃন্দ আবৃত্তি। ফারহানা চৌধুরীর পরিচালনায় বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস পরিবেশন করে দুটি সমবেত নৃত্য। ছিল শিল্পী আশরাফুল আলমের পরিবেশনায় একক আবৃত্তি। বহ্নিশিখার শিল্পীরা ‘সোনা সোনা সোনা’ এবং ‘বাংলার হিন্দু বাংলার বৌদ্ধ’ গান দুটি সমবেতভাবে পরিবেশন করে।

‘মেহেরপুর আমাদের মেহেরপুর’ সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন মেহেরপুরের শিল্পী সুলতানা, রোকসানা, রাসেল, আমজাদ হোসেন, আসাদুল ইসলাম, মিনারুল ইসলাম ও জিনারুল ইসলাম। ‘ও আমার দেশের মাটি’ গানের কথায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন অনামিকা, প্রিয়া, অণুভা, প্রজ্ঞা, আরিফা, মায়াবী, বনান্তী, হৃদিতা ও ফারিয়া। বাঁশিতে সুর তোলেন মো. আশিকুর রহমান। ‘সোনা সোনা সোনা’ গানটি শোনান তানিম মাহমুদ।

কুড়িগ্রাম জেলার পরিবেশনায় ছিল জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের ওপর ভিডিও পরিবেশনা। ছিল ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে’ এবং ‘ও সোনাবন্ধু ধন’ গানের সমবেত পরিবেশনা। ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ ও ‘তোমরা নাচো সুন্দরী কইন্যা’ গানের সঙ্গে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন এ অঞ্চলের শিল্পীরা। একক সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সাজু ও মুনতাহিনা মামুন।

বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবের তৃতীয় দিনে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিল্পীদের পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবের তৃতীয় দিনে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিল্পীদের পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়া জেলার পরিবেশনায় প্রথমেই ছিল তথ্যচিত্র প্রদর্শনী জেলা ব্র্যান্ডিং ‘কুষ্টিয়া জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’। এরপর ছিল লালনের গানে সমবেত নৃত্য, সমবেত সংগীত ও ‘পঞ্চকবির গান’। একক সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সরকার আমিরুল ইসলাম। যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করেন সুজন, জাহিদ, বাসুদেব চক্রবর্তী ও আশিক। এ পর্বে উপস্থিত ছিলেন নাট্যকার মাসুম রেজা ও অভিনেত্রী সামরোজ আজমী আলভী।

একাডেমি প্রাঙ্গণে রাতে দর্শনীর বিনিময়ে অনুষ্ঠিত হয় রবীন্দ্রনাথ রায়ের মূল গল্প অবলম্বনে স্মরণ রায়ের রচনা ও মদনমোহন রায়ের নির্দেশনায় ‘হামার কুড়িগ্রাম’। পরিবেশন করেন কুড়িগ্রামের জেলা শিল্পকলা একাডেমি শিল্পীরা। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন লালচাঁদ রায়, দুলাল রায়, সবিতা রায়, স্বপন চন্দ্র রায় ও স্মরণ চন্দ্র রায়। যন্ত্রে সহযোগিতা করেন মদনমোহন রায়, স্বপন চন্দ্র রায়, মজিবুর সরকার ও সজীব রায়। স্থানীয় রূপকথা, উপকথা, কিংবদন্তি, লোককথা বা লোকগল্পকে আশ্রয় করে আখ্যানগীতের মাধ্যমে পালাগান পরিবেশন করা হয়।

দেশের নানা অঞ্চলে শিল্পীরা অংশ নিচ্ছেন এ উৎসবে। ছবি: প্রথম আলো
দেশের নানা অঞ্চলে শিল্পীরা অংশ নিচ্ছেন এ উৎসবে। ছবি: প্রথম আলো

সোমবার বিকেল চারটায় শুরু হবে চতুর্থ দিনের উৎসব। নন্দন মঞ্চে পরিবেশিত হবে জামালপুর, পঞ্চগড় ও সিরাজগঞ্জ জেলার সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং রাত আটটায় একাডেমি প্রাঙ্গণে দর্শনীর মিনিময়ে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য ‘পদ্মার নাচন’।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে ২১ দিনের বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব-২০২০। সেদিন সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে ছিল উৎসবের উদ্বোধন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে উৎসব উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল।

উৎসবে ছিল দলীয় পরিবেশনা ফাঁকে ছিল একক পরিবেশনাও। ছবি: প্রথম আলো
উৎসবে ছিল দলীয় পরিবেশনা ফাঁকে ছিল একক পরিবেশনাও। ছবি: প্রথম আলো

২০১৮ সালে প্রথমবার এ আয়োজন করেছিল শিল্পকলা একাডেমি। এবার আরও বড় পরিসরে ৬৪টি জেলা, ৬৪টি উপজেলা ও ঢাকার সংস্কৃতিকর্মীদের সমন্বয়ে আবারও শুরু হলো এ উৎসব। নামমাত্র দামে টিকিট কিনে উৎসবে দেখা যাবে বিভিন্ন জেলার যাত্রাপালা, আলকাপ, কুশানপালা, পদ্মার নাচন, গুনাই বিবির পালা, রয়ানী, গাজির গান, খাইরুন সুন্দরীর পালা, ঘেটুগান, বাউলগান, নিমাই সন্ন্যাস পালা, পুতুলনাচ, গম্ভীরা, সোনাভানের পুঁথি, অষ্টকপালা, পালাটিয়া, গাজি–কালুর কেচ্ছা, পালাগান, শিবের গাজন, সাইদুলের কেচ্ছা, কবিগান, সংযাত্রা ও ধামাইল।